এক মুমিনের প্রতি অন্য মুমিনের যে ছয়টি হক – ৫ম পর্ব
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ لِلْمُؤْمِنِ عَلَى الْمُؤْمِنِ سِتُّ خِصَالٍ
يَعُودُهُ إِذَا مَرِضَ وَيَشْهَدُهُ إِذَا مَاتَ وَيُجِيبُهُ إِذَا دَعَاهُ وَيُسَلِّمُ عَلَيْهِ إِذَا لَقِيَهُ وَيُشَمِّتُهُ إِذَا عَطَسَ
وَيَنْصَحُ لَهُ إِذَا غَابَ أَوْ شَهِدَ ” . قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
অর্থ: আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক মুমিনের প্রতি আরেক মুমিনের হক হল ছয়টি। অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাবে, মারা গেলে তার জানাযায় হাযির হবে, তাকে ডাক দিলে সে সাড়া দিবে, যখন সাক্ষাৎ হবে তখন তাকে সালাম বিনিময় করবে, হাঁচি দিলে তার জওয়াবে দু’আ করবে এবং উপস্থিত-অনুপস্থিত সকল সময় তার কল্যাণ কামনা করবে। ( সূনান আত তিরমিজী: ২৭৩৭, মান-সহীহ)
পঞ্চম পর্ব:
وَيُشَمِّتُهُ إِذَا عَطَسَ
কোন মুমিন ব্যক্তি যখন হাঁচি দিবে তখন অপর মুমিন ব্যক্তির কর্তব্য হলো তার জবাব দেয়া (দুআ করা)। অন্য হাদিসে এসেছে রাসূল (স.) সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কে সাতটি কাজ করতে আদেশ করেছেন ও সাতটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। আদেশের সাতটির মধ্যে একটি হলো মুমিন হাঁচি দিলে তার জবার দেয়া।
قَالَ الْبَرَاءُ بْنُ عَازِبٍ ـ رضى الله عنهما ـ أَمَرَنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِسَبْعٍ، وَنَهَانَا عَنْ سَبْعٍ، أَمَرَنَا بِعِيَادَةِ الْمَرِيضِ، وَاتِّبَاعِ الْجِنَازَةِ، وَتَشْمِيتِ الْعَاطِسِ، وَإِبْرَارِ الْقَسَمِ، وَنَصْرِ الْمَظْلُومِ، وَإِفْشَاءِ السَّلاَمِ، وَإِجَابَةِ الدَّاعِي، وَنَهَانَا عَنْ خَوَاتِيمِ الذَّهَبِ، وَعَنْ آنِيَةِ الْفِضَّةِ، وَعَنِ الْمَيَاثِرِ، وَالْقَسِّيَّةِ، وَالإِسْتَبْرَقِ وَالدِّيبَاجِ. تَابَعَهُ أَبُو عَوَانَةَ وَالشَّيْبَانِيُّ عَنْ أَشْعَثَ فِي إِفْشَاءِ السَّلاَمِ
অর্থ: বারা ইবনু আযিব (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি কাজ করতে বলেছেন এবং সাতটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে রোগীর সেবাযত্ন করা, জানাযায় অংশগ্রহণ করা, হাঁচি দিলে তার জবাব দেয়া, কসম পুরা করায় সহযোগিতা করা, মজলুমকে সাহায্য করা, সালামের বিস্তার করা এবং কেউ দাওয়াত দিলে তা কবূল করা- এইসব করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন স্বর্ণের আংটি পরতে, রূপার পাত্র ব্যবহার করতে, ঘোড়ার পিঠের ওপরে রেশমী গদি ব্যবহার করতে এবং ‘কাসসিয়া’ বা পাতলা রেশমী কাপড় এবং দ্বীবাজ ব্যবহার করতে। [সহীহ বুখারী, ইফা : ৪৭৯৭]
হাঁচির উত্তর দেয়ার পদ্ধতি:
১. হাঁচি দাতা اَلْـحَمْدُ للهِ (আলহামদুলিল্লাহ) না বললে করণীয় কি?
কোন ব্যক্তি হাঁচি দিল অথচ তার উত্তরে اَلْـحَمْدُ للهِ (আলহামদুলিল্লাহ) বলেনি, তাহলে তার জবাব দেয়া যাবে না। রাসূল (স.) এমনটিই করেছেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
سَمِعْتُ أَنَسًا ـ رضى الله عنه ـ يَقُولُ عَطَسَ رَجُلاَنِ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَشَمَّتَ أَحَدَهُمَا وَلَمْ يُشَمِّتِ الآخَرَ. فَقَالَ الرَّجُلُ يَا رَسُولَ اللَّهِ شَمَّتَّ هَذَا وَلَمْ تُشَمِّتْنِي. قَالَ “ إِنَّ هَذَا حَمِدَ اللَّهَ، وَلَمْ تَحْمَدِ اللَّهَ ”.
তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দুই ব্যাক্তি হাঁচি দিলেন। তিনি একজনের হাচির জবাব দিলেন এবং অপর ব্যাক্তির জবাব দিলেন না। অপর ব্যাক্তিটি বললঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি তার হাঁচির জবাব দিলেন, কিন্তু আমার হাঁচির জবাব দিলেন না। তিনি বললেনঃ সে আলহামদুলিল্লাহ বলেছে, কিন্তু তুমি আলহামদুলিল্লাহ বলনি। [সহীহ বুখারী, ইফা: ৫৭৯২]
২. হাঁচির দাতার উত্তরে দুআ করার বিধান:
যখন কোন ব্যক্তি হাঁচি দিবে এবং اَلْـحَمْدُ للهِ (আলহামদুলিল্লাহ) বলবে তখন উপস্থিত সকল শ্রোতার জন্য ওয়াজিব হলো তার উত্তর দেয়া। রাসূল (স.) বলেন,
إِذَا عَطَسَ أَحَدُكُمْ وَحَمِدَ اللَّهَ كَانَ حَقًّا عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ سَمِعَهُ أَنْ يَقُولَ لَهُ يَرْحَمُكَ اللَّهُ
অর্থ : যদি তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে তবে প্রত্যেক মুসলমান শ্রোতার তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা ওয়াজিব। [সহীহ বুখারী, ইফা: ৫৭৯৩]
৩. হাঁচির জবাব কতবার দিতে হবে?
এই বিষয়ে রাসূল (স.) নিজেই বলেন,
مِّتْ أَخَاكَ ثَلاَثًا فَمَا زَادَ فَهُوَ زُكَامٌ
তুমি তোমার ভাইয়ের হাঁচির জবাব তিনবার দেবে। এরপরও যদি সে হাঁচি দেয়, তবে মনে করবে, তা সর্দির কারণে (তখন এর জবাব দেয়া জরুরী নয়। [ আবু দাউদ, ইফা: ৪৯৫০]
৪. হাঁচি দেয়ার আদব:
রাসূল (স.) যখন হাঁচি দিতেন তখন তিনি তার হাত ও কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতেন এবং যথা সম্ভব কম শব্দ করতেন। হাদিসে এসেছে-
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا عَطَسَ وَضَعَ يَدَهُ أَوْ ثَوْبَهُ عَلَى فِيهِ وَخَفَضَ أَوْ غَضَّ بِهَا صَوْتَهُ . شَكَّ يَحْيَى
অর্থ : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হাঁচি দিতেন, তখন তিনি তাঁর হাত অথবা কাপড় তাঁর মুখে রাখতেন এবং যথাসম্ভব আস্তে শব্দ করে হাঁচতেন। [সহীহ বুখারী, ইফা: ৪৯৪৫]
৫. হাঁচি ও হাই, কোনটি উত্তম?
হাদীসে এসেছে আল্লাহ তায়ালা হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন। যদি কারো হাঁচি আসে তবে সে اَلْـحَمْدُ للهِ (আলহামদুলিল্লাহ), আর হাই আসলে তার হাত দিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবে। রাসূল (স.) বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْعُطَاسَ وَيَكْرَهُ التَّثَاؤُبَ، فَإِذَا عَطَسَ أَحَدُكُمْ وَحَمِدَ اللَّهَ كَانَ حَقًّا عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ سَمِعَهُ أَنْ يَقُولَ لَهُ يَرْحَمُكَ اللَّهُ. وَأَمَّا التَّثَاؤُبُ فَإِنَّمَا هُوَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَإِذَا تَثَاوَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَرُدَّهُ مَا اسْتَطَاعَ، فَإِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا تَثَاءَبَ ضَحِكَ مِنْهُ الشَّيْطَانُ
আল্লাহ তা‘আলা হাঁচি দেওয়া পছন্দ করেন আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। যদি তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে তবে প্রত্যেক মুসলমান শ্রোতার তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা ওয়াজিব। আর হাই তোলা শয়তানের তরফ থেকে হয়ে থাকে। সুতরাং তোমাদের কারো হাই উঠলে সে যেন তা যথাসাধ্য রোধ করে। কারণ কেউ হাই তোললে শয়তান তার প্রতি হাসে। [সহীহ বুখারী, ইফা: ৫৭৯৩, সহীহ মুসলিম, ইফা : ৭২২০]
লেখক,
হাফেজ মাওলানা নুরুল হুদা
খতিব, বাইতুল গফুর জামে মসজিদ, মাদামবিবিরহাট চট্টগ্রাম।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.