সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

তওবা পাপকে পুণ্যতে বদলে দেয়

আল্লাহর বাণী : ‘কিন্তু যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও নেক আমল করেছে, আল্লাহপাক এমন সব লোকদের গুনাহসমূহকে তাদের নেক আমল দ্বারা বদলে দেবেন, আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’- সুরা ফুরকান ৭০।

তাওবা :

ক্ষমা, হ্যাঁ ক্ষমা মানুষকে পাপ-পঙ্কিল পথ থেকে নেকি ও কল্যাণের পথে ফিরে আসতে সহায়তা করে। সুরাটি মক্কি সুরা এবং নবুয়তের মাঝামাঝি সময়ে অবতীর্ণ। ইসলাম গ্রহণকারী নারী-পুরুষ অতীতের গুনাহের কারণে বড়ো পেরেশান থাকতেন। আল্লাহপাক তাদের পেরেশানি দূর করে দিয়েছেন। এটি ছিল এক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা (General Amnesty)। এই ক্ষমার দরজা কেয়ামত পর্যন্ত খোলা রয়েছে। আল্লাহ তাঁর বান্দার ফিরে আসার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন।

বান্দা ভালো কাজের নিয়ত করলেই তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হয় এবং নেক আমল করলে সওয়াব ১০ থেকে ৭০০ গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয় বা তার চেয়েও বেশি। কিন্তু মন্দ কাজে নিয়ত করলে কোনো গুনাহ নেই। মন্দ কাজ করে তওবা করলে গুনাহের ক্ষমার সুযোগ রয়েছে। তওবা না করলে যতটুকু অপরাধ ততটুকু গুনাহ লেখা হয়।

আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। তাঁর ক্ষমা ও দয়া অন্তরে অনুভব করা এবং হতাশা ঝেড়ে ফেলে আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া দরকার। শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। সে চায় মানুষ অন্যায়ে লিপ্ত থাকুক এবং ক্ষমা চাওয়া থেকে দূরে থাকুক। সে প্ররোচনা দেয়, সারা জীবন নামাজ পড়িসনি, রোজা রাখিসনি; এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করলে ৮০ হোব্বা দোজখ, একটি রোজা বাদ দিলে ক্রমাগত ৬০টি রোজা রাখতে হয়, এসব কথা বলে তাকে হতাশ করে এবং ফিরে আসার পথ রুদ্ধ করে দেয়। বিপরীতে শয়তান কখনই বলবে না, তওবা করলে বান্দার পূর্বেকৃত সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।

তাওবার ঘটনা :

ক্ষমার বিষয়ে হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন মসজিদে নববিতে এশার নামাজ শেষে বাসায় প্রবেশের সময় এক মহিলা আমাকে সালাম দেয় এবং আমি জবাব দিয়ে দরজা বন্ধ করে নফল নামাজ পড়া শুরু করি। আবার কড়া নাড়লে আমি বের হই। সেই মহিলা তখন বলে, আমি যেনা করেছিলাম এবং আমার গর্ভের সন্তানকে হত্যা করেছি। আমার কি কোনো ক্ষমা আছে? আমি জবাব দেই, তোমার কোনো ক্ষমা নেই। সে হতাশ হয়ে বলতে থাকে, হায়! আমার এই সৌন্দর্য আগুনের জন্য সৃষ্টি হয়েছিল।

ফজরের সালাতে রসুলুল্লাহ সা.-কে ঘটনাটি বলি। তিনি বলেন, তুমি কি ফুরকান পড়নি? রসুল সা.-এর কাছ থেকে ফিরে এসে সেই মহিলাকে খুঁজতে থাকি এবং রাতে পাওয়ার পর তাকে ক্ষমার সুসংবাদ দেয়া হলে সে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে বলতে থাকে সেই আল্লাহর শোকর যিনি আমার জন্য ক্ষমার দরজা খুলে দিয়েছেন। সে তওবা করে ও তার বাঁদিকে সন্তানসহ মুক্ত করে দেয়।

তাদের গুনাহসমূহকে নেক আমল দ্বারা বদলে দেবেন। এর দু’টি অর্থ, এক. তওবা করলে আল্লাহ তাকে গুনাহের পরিবর্তে নেক কাজ করার সুযোগ করে দিবেন। দ্বিতীয়ত, যখনই অতীতের গুনাহের কথা স্মরণ করে সে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হবে তখনই তার আমলনামায় নেকি লেখা হবে। ভুলের জন্য লজ্জিত হওয়া ও ক্ষমা চাওয়াও একটি নেকির কাজ।

হে রব! তুমি আমাদের মন-মানসিকতা তোমার দিকে ঘুরিয়ে দাও এবং মুসলমান অবস্থায় মৃত্যু দাও। আমিন।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

Verified by MonsterInsights