আপনার মৃত্যুর পরও পাবেন প্রতিদানগুলো
কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা মানুষের উদ্দেশে বলেছেন, ‘কস্মিনকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না করো। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন।’ –সূরা আল ইমরান: ৯২
ইসলাম মানবকল্যাণ, ত্যাগ ও পরোপকারের ধর্ম। এ ধর্ম কখনও অন্যের চিন্তা বাদ দিয়ে শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা সমর্থন করে না। ইসলাম চায় একে অন্যের সাহায্য-সহযোগিতার মধ্য দিয়ে গড়ে তুলতে একটি সমৃদ্ধ ভ্রাতৃসমাজ।
এ জন্য এখানে রয়েছে ধনী-গরিবের জন্য নানা দায়িত্ব ও কর্তব্য। বলা হয়েছে, ‘মানুষের জন্য তুমি তা-ই পছন্দ করো, যা তুমি নিজের জন্য পছন্দ করে থাকো।’
ইসলাম ধর্মে গোপন দান, গোপন ইবাদত-বন্দেগি অধিক পছন্দনীয় আল্লাহতায়ালার কাছে। ইসলামে অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে দানের জন্য বলা হয়েছে। আর সেটা এ জন্য যে, যার দেখাদেখি অন্যরা দান করতে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ হয়।
এ প্রসঙ্গে সহিহ বোখারি ও মুসলিম শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘দু’ব্যক্তির কাজেই শুধু ঈর্ষা করা যায়। একজন ওই ব্যক্তি যাকে আল্লাহতায়ালা সম্পদ দান করেছেন। তাই তাকে তা সৎ পথে ব্যয় করার সামর্থ্য দিয়েছেন। অপরজন হলেন তিনি, যাকে আল্লাহতায়ালা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছেন এবং তিনি সে অনুযায়ী বিষয়াদির মীমাংসা করেন। আর এ জ্ঞান অন্যকে শিক্ষা দেন।’
অর্থাৎ পরোপকারী ধনী ও জ্ঞানী ব্যক্তিকে হাদিসে ঈর্ষার পাত্ররূপে বর্ণনা করে তাদের আদর্শের অনুসরণে প্রত্যেককে ন্যায়বান, ধনী ও বিজ্ঞ হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া জ্ঞানার্জন ও ধনোপার্জনের উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি নয়, বরং জনগণ ও সমাজের কল্যাণ সাধন করা।
আজ বিশ্বের চতুর্দিকে তাকালে যে নয়নাভিরাম কল্যাণধর্মী স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান আমরা দেখি, তা তো কোনো না কোনো মানবদরদি মহানুভব ব্যক্তির মাধ্যমে সৃষ্ট। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.) অসংখ্য মসজিদ, হাসপাতাল, সড়ক, সেতু ও বিদ্যালয় নির্মাণ করেন এবং সেচ সুবিধা, পানীয়জলের জন্য খাল খনন করেন।
হজরত উমর (রা.) ও পরবর্তী ন্যায়পরায়ণ মুসলিম শাসকদের মতো আজও যদি আমাদের মধ্যে নিঃস্বার্থ জনসেবার অনুভূতি জাগ্রত হয় তাহলে গরিব, দুঃখী, অভাবী মানুষের দুঃখকষ্ট অনেকাংশে লাঘব হতে পারে।
একসময় মদিনায় পানিস্বল্পতার কারণে মুসলমানদের বেশ কষ্ট হয়। সেখানে রুমা নামে একটি কূপ ছিল। ওই কূপের ছিলেন এক ইহুদি। তিনি খুব চড়া দামে পানি বিক্রি করতেন। খলিফা হজরত উসমান (রা.) কূপটি পঁয়ত্রিশ হাজার দিরহামের বিনিময়ে কিনে মুসলমানদের জন্য তা ওয়াকফ করে দেন।
উল্লেখ্য, মানবকল্যাণে পুরুষদের পাশাপাশি মুসলিম নারীদেরও অবদান রয়েছে। ইতিহাস থেকে আমরা জেনেছি, খলিফা হারুনুর রশীদের সহধর্মিণী সম্রাজ্ঞী মহীয়সী জুবায়দা হজব্রত পালনে মক্কায় আগত মুসলমানদের কষ্ট দূর করতে পবিত্র মক্কা নগরী, মিনা ও আরাফাতে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। যা ‘নহরে জুবায়দা’ নামে প্রসিদ্ধ। আমাদের এই বাংলায় হাজী মুহাম্মদ মুহসীন, নবাব ফয়জুননেসা ও বেগম রোকেয়ার ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক জনহিতকর কাজ ও অবদান চিরভাস্বর হয়ে আছে।
আমরা দেখি, সাধারণত পরোপকার দু’ভাবে করা যায়। ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক। জনকল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছুর করতে পারাই বড় কথা। যেমন- কেউ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করল আর কেউ শুধু একজন রোগীকে সেবাদান করল। হাসপাতাল গড়াই শ্রেষ্ঠ, একজন রোগীর চিকিৎসার সঙ্গে তার তুলনা হয় না।
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় এ ধরনের সাধারণ দানকে সদকায়ে জারিয়া বলা হয়। হজরত রাসূলে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘দু’টি জিনিস মানুষের উন্নতির উপকরণ। একটি হচ্ছে- উত্তম সন্তান অপরটি সদকায়ে জারিয়া।’
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, যখন কোনো মানুষ মারা যায় তখন তার কাছে পুণ্য পৌঁছার সব মাধ্যম বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শুধু তিনটি পথ
তার জন্য খোলা থাকে। ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. সত্যিকার জ্ঞানার্জনের কোনো প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করে যাওয়া ও ৩. অথবা কোনো নেক সন্তান তৈরি করে যাওয়।
চলুন আমরা সৎ চিন্তা, পরোপকার ও সদকায়ে জারিয়ার আলোতে সমাজকে আলোকিত করে তুলি।
মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.