
কর্জে হাসানা কেন উত্তম ঋণ?
কর্জে হাসানা কী ও কেন গুরুত্ব
করজ( قرض)অর্থ ঋণ, ধার বা কর্জ; আর হাসানা(حسن) অর্থ উত্তম। উভয়ে মিলে কর্জে হাসানা অর্থ উত্তম ঋণ। কর্জে হাসানা নামটি অতি সুন্দর এবং আমরা কমবেশি এ নামটির সঙ্গে পরিচিত। করজে হাসানা’ মানব জীবন ব্যবস্থার এক বিশেষ অর্থনৈতিক কল্যাণমূলক ব্যবস্থা। করজে হাসানার অর্থ হচ্ছে ঋণ বা করজ দেয়া যা সময়মতো পরিশোধ করা হবে, কিন্তু দাতা কোনো অতিরিক্ত অর্থ বেনিফিট নিতে পারবেন না। এর উদ্দেশ্য হল, সমাজের ঋণগ্রস্ত মানুষের একটি প্রয়োজন পূর্ণ করা।
ইসালামী পরিভাষায়: আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের আশায়, সওয়াবের নিয়তে বিনা শর্তে কাউকে কোনো কিছু ঋণ দিলে তাকে কর্জে হাসানা বা উত্তম ঋণ বলে। ইসলামী আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় কর্জে হাসানার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।
কর্জে হাসানা নিয়ে কোরআনের আয়াতঃ
১. পবিত্র কোরআনুল কারিমের সূরা আল হাদিদের ১৮তম আয়াতে মহান আল্লাহ রাববুল আলামিন এরশাদ করেন,
إِنَّ الْمُصَّدِّقِينَ وَالْمُصَّدِّقٰتِ وَأَقْرَضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضٰعَفُ لَهُمْ وَلَهُمْ أَجْرٌ كَرِيمٌ
নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম করয দেয়, তাদের জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।তবে এজন্য শর্ত হচ্ছে, প্রদানকৃত বস্তুটি ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে ঋণদাতা খাতককে তাগাদা না দেয়া।
২.সূরা বাকারার ২৮০তম আয়াতে এরশাদ হয়েছে, وَإِن كَانَ ذُو عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلٰى مَيْسَرَةٍ ۚ وَأَن تَصَدَّقُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
আর যদি সে অসচ্ছল হয়, তাহলে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত তার অবকাশ রয়েছে। আর সদাকা করে দেয়া তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে। ।কর্জে হাসানার মাধ্যমে আমাদের সমাজে চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো বদল না দেখা গেলেও এর নেপথ্যে রয়েছে সামাজিক দৈন্য, পারিবারিক কলহসহ নানা অসংগতি দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা; এর মাধ্যমে আমাদের পরস্পরের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, দারিদ্র্যবিমোচন ও ধনী-গরিবের বিভেদ উপেক্ষ্যত হওয়ার ব্যাপারটি নিতান্তই সম্ভাব্য ও সহজসাধ্য। সুদখোরদের অভ্যাস হচ্ছে, খাতক নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধে সক্ষম না হলে সুদের অঙ্ক আসলের সঙ্গে যোগ করে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের কারবার চালানো। উপরন্তু সুদের হারও আগের চেয়ে বাড়িয়ে দেয়া;
৩. সূরা আলে ইমরানের ১৩০তম আয়াতে বর্ণিত হয়েছে
– يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا لَا تَأْكُلُوا الرِّبٰوٓا أَضْعٰفًا مُّضٰعَفَةً ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ, তোমরা সুদ খাবে না বহুগুণ বৃদ্ধি করে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও।কিন্তু কর্জে হাসানা পুরো এর বিপরীতার্থক। এতে একদিকে যেমন খাতকের উপকার হয়, তেমনি সুদ থেকেও বাঁচা যায়। যে কারণে জগতের কোনো কিছুর যিনি মুখাপেক্ষী নন, যিনি সব বস্ত্তমোহ নিরপেক্ষ সেই সর্বশক্তিমান মহিমান্বিত আল্লাহ তার বান্দার জন্য আমাদের কাছে কর্জে হাসানা বা উত্তম ঋণ চেয়েছেন।
৪. যেমন বলেছেন, مَّن ذَا الَّذِى يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضٰعِفَهُۥ لَهُۥٓ أَضْعَافًا كَثِيرَةً ۚ وَاللَّهُ يَقْبِضُ وَيَبْصُۜطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন? আর আল্লাহ সংকীর্ণ করেন ও প্রসারিত করেন এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে ফিরানো হবে। [সূরা বাকারা, আয়াত-২৪৫।]
৫. আল্লাহ নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন
وَقَالَ اللَّهُ إِنِّى مَعَكُمْ ۖ لَئِنْ أَقَمْتُمُ الصَّلٰوةَ وَءَاتَيْتُمُ الزَّكٰوةَ وَءَامَنتُم بِرُسُلِى وَعَزَّرْتُمُوهُمْ وَأَقْرَضْتُمُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا لَّأُكَفِّرَنَّ عَنكُمْ سَيِّـَٔاتِكُمْ وَلَأُدْخِلَنَّكُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ ۚ فَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذٰلِكَ مِنكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِيلِ
আর আল্লাহ বলেছিলেন, নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে আছি, যদি তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও, আমার রাসূলদের প্রতি ঈমান আন, তাদেরকে সহযোগিতা কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তবে নিশ্চয় আমি তোমাদের থেকে তোমাদের পাপসমূহ মুছে দেব। আর অবশ্যই তোমাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতসমূহে, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। তোমাদের মধ্য থেকে এরপরও যে কুফরী করেছে, সে অবশ্যই সোজা পথ হারিয়েছে। [সূরা-মায়িদা, আয়াত-১২।]
৬. সদকা বিষয়ে পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সদকা বা দান ইসলামে সৎকর্ম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর চেয়েও উত্তম হচ্ছে কর্জে হাসানা।আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করে বলেন,
مَّن ذَا الَّذِى يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضٰعِفَهُۥ لَهُۥ وَلَهُۥٓ أَجْرٌ كَرِيمٌ
এমন কে আছে যে, আল্লাহকে উত্তম করয দিবে ? তাহলে তিনি তার জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তার জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান। [সূরা-হাদিদ, আয়াত-১১।]
৭. إِن تُقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضٰعِفْهُ لَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۚ وَاللَّهُ شَكُورٌ حَلِيمٌ
যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তিনি তা তোমাদের জন্য দ্বিগুন করে দিবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, পরম ধৈর্যশীল।[সূরা- তাগাবুন, আয়াত -১৭।]
৮. وَأَقِيمُوا الصَّلٰوةَ وَءَاتُوا الزَّكٰوةَ وَأَقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا ۚ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ هُوَ خَيْرًا وَأَعْظَمَ أَجْرًا ۚ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌۢ
আর সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। আর তোমরা নিজদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু অগ্রে পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবে প্রতিদান হিসেবে উৎকৃষ্টতর ও মহত্তর রূপে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[সূরা আল-মুজ্জাম্মিল,আয়াত-২০।]বর্ণিত আয়াতগুলোর মর্মার্থ হলো-যিনি নামাজ পড়েন, জাকাত দেন, কর্জে হাসানা দেন এবং আল্লাহ পাকের কাছে কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা চান- তাহলে তাকে আল্লাজ কর্জে হাসানার সওয়াব বহুগণে দেবেন, সম্মানজনক পুরুস্কার দিবেন এবং ক্ষমা করে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত।এ কারণেই হাদিস শরিফেও কর্জে হাসানা প্রদানে বান্দাকে যথেষ্ট অনুপ্রাণিত করা হয়েছে।
কর্জে হাসানা নিয়ে হাদিস
৯. এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) ফরমায়েছেন, عَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَمَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَاللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ،
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,যে ব্যক্তি কোন মুমিনের দুনিয়ার বিপদ সমূহ থেকে একটি বিপদ দূরভীত করবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামত দিবসের বিপদ সমূহ থেকে তার একটি বিপদ দূরভীত করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে। আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্থ বা অভাবী ব্যক্তিকে সহযোগিতা করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে সহযোগিতা দান করবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করবে, আল্লাহ ততক্ষণ তাকে সাহায্য করবেন। [সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব, হাদিস নং ৬৯]
১০.ইসলামের দৃষ্টিতে এই করজে হাসানার উপকারিতা অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন সময় তাঁর প্রিয় সাহাবিদের করজে হাসানার প্রতি উত্সাহিত করেছেন। কেননা এর মাধ্যমে মানুষ অফুরন্ত সওয়াব ও কল্যাণে ভাগিদার হতে পারে। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় প্রমাণিত- عَنْ قَيْسِ بْنِ رُومِيٍّ، قَالَ كَانَ سُلَيْمَانُ بْنُ أُذُنَانٍ يُقْرِضُ عَلْقَمَةَ أَلْفَ دِرْهَمٍ إِلَى عَطَائِهِ فَلَمَّا خَ قَالَ مَا سَمِعْتُ مِنْكَ . قَالَ مَا سَمِعْتَ مِنِّي قَالَ سَمِعْتُكَ تَذْكُرُ عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُقْرِضُ مُسْلِمًا قَرْضًا مَرَّتَيْنِ إِلاَّ كَانَ كَصَدَقَتِهَا مَرَّةً ” . قَالَ كَذَلِكَ أَنْبَأَنِي ابْنُ مَسْعُودٍ .
কায়স বিন রূমী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: আলকামা (রাঃ) বলেন, তুমি আমার নিকট কী হাদীস শুনেছ? তিনি বলেন আমি আপনাকে বিন মাসঊদ (রাঃ) -র সুত্রে বর্ণনা করতে শুনেছি যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলমান অপর মুসলমানকে দুবার করয দিলে সে সেই পরিমাণ মাল একবার দান-খয়রাত করার সমান সওয়াব পায়।আলকামাহ (রাঃ) বলেন, ইবনূ মাসঊদ (রাঃ) আমাকে এভাবেই অবহিত করেছেন। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৪৩০]
১১.মুসলিম ভাইয়ের অভাব পূরণ হয়:
عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ أَخْبَرَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ، وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللَّهُ فِي حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ”.
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুল্ম করবে না এবং তাকে যালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।[সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৪৪২]
১২. ঋণ গ্রহীতাকে ক্ষমা করা:
أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُولُ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” كَانَ رَجُلٌ يُدَايِنُ النَّاسَ، وَكَانَ إِذَا رَأَى إِعْسَارَ الْمُعْسِرِ قَالَ لِفَتَاهُ: تَجَاوَزْ عَنْهُ، لَعَلَّ اللَّهَ تَعَالَى يَتَجَاوَزُ عَنَّا، فَلَقِيَ اللَّهَ فَتَجَاوَزَ عَنْهُ ”
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক ব্যক্তির লোকদের কর্জ দিত; যখন সে কোন গরীবকে দেখতো, তখন সে তার চাকরকে বলতোঃ তাকে ক্ষমা করে দাও, হয়তো আল্লাহ্ তাআলা এর বিনিময়ে আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। এরপর লোকটির মৃত্যুর পর আল্লাহ্ তাআলার দরবারে উপস্থিত হলে, আল্লাহ্ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিলেন।
[সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪৬৯৫]
১৩. ঋণদাতা তাগাদা দিতে এসে কিছু অশোভনীয় আচরণে করণীয়:
عَنْ كَعْبٍ، أَنَّهُ تَقَاضَى ابْنَ أَبِي حَدْرَدٍ دَيْنًا كَانَ لَهُ عَلَيْهِ فِي الْمَسْجِدِ، فَارْتَفَعَتْ أَصْوَاتُهُمَا حَتَّى سَمِعَهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ فِي بَيْتِهِ، فَخَرَجَ إِلَيْهِمَا حَتَّى كَشَفَ سِجْفَ حُجْرَتِهِ فَنَادَى ” يَا كَعْبُ ”. قَالَ لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ ” ضَعْ مِنْ دَيْنِكَ هَذَا ”. وَأَوْمَأَ إِلَيْهِ أَىِ الشَّطْرَ قَالَ لَقَدْ فَعَلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ ” قُمْ فَاقْضِهِ
কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি মসজিদের ভিতরে ইব্নু আবূ হাদরাহ (রহঃ)এর নিকট তাঁর পাওনা ঋণের তাগাদা করলেন। দুজনের মধ্যে এ নিয়ে বেশ উচ্চৈঃস্বরে কথাবার্তা হলো। এমনকি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘর হতেই তাদের কথার আওয়ায শুনলেন এবং তিনি পর্দা সরিয়ে তাদের নিকট বেরিয়ে গেলেন। আর ডাক দিয়ে বললেনঃ হে কা’ব! কা’ব (রাঃ) উত্তর দিলেন, লাব্বায়েক রাসূলাল্লাহ্! আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার পাওনা ঋণ হতে এতটুকু ছেড়ে দাও। আর হাতে ইঙ্গিত করে বোঝালেন, অর্থাৎ অর্ধেক পরিমাণ। তখন কা’ব (রাঃ) বললেনঃ আমি তাই করলাম, হে আল্লাহ্র রসূল! তখন তিনি ইব্নু আবূ হাদরাদকে বললেনঃ উঠ আর বাকীটা দিয়ে দাও। [সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৫৭]
১৪.রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভাবিকে ঋণ দেওয়ার প্রতি যেমন উৎসাহ দিয়েছেন, তেমনি সময় মতো ঋণ পরিশোধের প্রতিও জোর দিয়েছেন। এমনকি তিনি নিজেও সর্বদা ঋণমুক্ত জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন।মানুষের কাছ থেকে উত্তম ঋণ তথা করজে হাসানা নেওয়ার পর তা পরিশোধের প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকা যেমন জরুরি। তেমিন তা পরিশোধে মহান আল্লাহর দরবারে ধরণা দেয়ার বিকল্প নেই। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধার-দেনা পরিশোধের তাওফিক কামনা করে আল্লাহ তাআলার দরবারে ধরনা দেওয়ার কথা বলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোনো পেরেসানি অনুভব করতেন, তখনই এ দোয়া পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আশ্রয় চাই, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে আশ্রয় চাই এবং ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে আশ্রয় চাই।(বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
সুতরাং করজে হাসানার উপকারিতা ও সাওয়াব পেতে হলে এমনভাবে করজে হাসানা তথা উত্তম ঋণ দিতে হবে, যাতে দুনিয়ার কোনো স্বার্থ না থাকে। বরং শুধু আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে এ ঋণ দিতে হবে। শুধু তাই নয়, সে অর্থ এমন কাজে খরচ করতে হবে যে কাজ আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন।
সুতরাং হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী করজে হাসানা বা উত্তম ঋণ গ্রহণ করার পর যদি তা পরিশোধের প্রচেষ্টা থাকে এবং ঋণ গ্রহণকারী আল্লাহর কাছে তা পরিশোধে বেশি বেশি এ দোয়া পড়ে তবে আল্লাহ তাআলা তাদের ঋণ পরিশোধের তাওফিক দান করবেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে করজে হাসানা গ্রহণ ও তা সময় মতো পরিশোধ করে উত্তম পুরস্কার পাওয়ার তাওফিক দান করুন। ঋণ পরিশোধের নিয়তে হাদিসে বর্ণিত দোয়া বেশি বেশি পড়ে ধার-দেনামুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
১৫.মানুষের একার পক্ষে সবসময় সব প্রয়োজন পূরণ সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে পরস্পরকে সাহায্য করতে হয়। এই সাহায্যের নানা ধরন ও অনেক অনৈতিকতার কারণ হয়। এজন্য বান্দার কর্তব্য, আল্লাহ তাআলার কাছে ঋণ থেকে আশ্রয় চাওয়া এবং দুআ করা, তিনি যেন ঋণ ছাড়াই সব প্রয়োজন পূরণ করে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে ঋণ থেকে আশ্রয় চাইতেন। এ প্রসঙ্গে দুটি হাদীস উল্লেখ করা যায়।
১. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে এ দুআ করতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ المَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِالمَحْيَا وَفِتْنَةِ المَمَاتِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ المَأْثَمِ وَالمَغْرَمِ .
অর্থাৎ, ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। মাছীহ দাজ্জালের ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই। জীবনের ফেতনা ও মৃত্যুর ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই। ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে গোনাহ ও ঋণ থেকে আশ্রয় চাইকেউ (অন্য বর্ণনায় আছে বর্ণনাকারী নিজেই) জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি ঋণ থেকে এত বেশি আশ্রয় চান! তিনি বললেন, মানুষ যখন ঋণগ্রস্ত হয় তখন কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৩২
২. আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ করতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجْزِ وَالكَسَلِ، وَالجُبْنِ وَالبُخْلِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ.
অর্থাৎ, ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুঃখ-দুশ্চিন্তা থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, ভীরুতা ও কার্পণ্য থেকে, ঋণের বোঝা ও মানুষের প্রাবল্য (-এর শিকার হওয়া) থেকে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩৬৯
১৬.ঋণ থেকে বাঁচার উপায় :
১. বিশেষ প্রয়োজন এবং নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধের প্রবল ধারণা ছাড়া ঋণ না নেওয়ার দৃঢ় সংকল্প করা।
২. আয় ও ব্যয়ের মাঝে সমন্বয় করে চলা।
৩. নামডাক, কৃত্রিমতা ও রসম-রেওয়াজ থেকে দূরে থাকা।
৪.যেসব কাজ জানমালে বরকতের পক্ষে সহায়ক তা গুরুত্বের সাথে করা।
৫.হারাম পথ পরিহার করা।
৬.হালাল পথে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা।
আর যেগুলো বরকত বিনষ্টকারী তা থেকে সযত্নে বেঁচে থাকা। একই সঙ্গে আল্লাহ তাআলার কাছে দুআও করা।
১৭.আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য, ঋণ থেকে বাঁচার ক্ষেত্রেও পরস্পরকে সাহায্য করা:
পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে কাউকে ঋণগ্রহণের দিকে ঠেলে না দেওয়া। এটিও সাহায্যের একটি বড় উপায়।আমি যখন মেরাজে গিয়েছিলাম, তখন বেহেশতের দরজার ওপর লেখা দেখেছি, খয়রাতের সওয়াব ১০ গুণ, আর কর্জে হাসানার সওয়াব ১৮ গুণ। দান বা খয়রাত ফেরত দিতে হয় না কিন্তু কর্জে হাসানা ফেরত দিতে হয়। কর্জে হাসানা ফেরত দেয়ার পরেও প্রায় দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়ার কারণ আছে। মূলত পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক প্রতিটি মানুষকে স্বাবলম্বী করার জন্য ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে মুসলমানরা, তালির ওপর তালিযুদ্ধ ছিন্নবস্ত্র পরিধান করা, ঋণ গ্রহণ অপেক্ষা উত্তম। যদি তা শোধ করার শক্তি না থাকে। (মুসনাদ আহমাদ)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে মুসলমানরা ঋণ গ্রহণ থেকে বেঁচে থাক। কেননা, ঋণ রাত্রীকালে মর্ম বেদনা ও দুঃশ্চিন্তা সৃষ্টি করে এবং দিনের বেলায় অপমান ও লাঞ্চনায় লিপ্ত করে। (বায়হাকি) অনেকে আছেন ব্যাংক থেকে বিরাট অঙ্কের ঋণ নিয়ে বেমালুম হজম করেন। তাদের পরিচয় ঋণখেলাপি। অথচ অনেকে শখের বশে ব্যবসায়ের খাতে ঋণ নিয়ে উধাও হয়ে যায়। তাদের জন্য রাসূল (সা.) এর সতর্কবাণী। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রা.) এর একটি দীর্ঘ হাদিস রাসূলুল্লাহ (সা.) ঋণ সম্পর্কে বলেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, যদি কোনো ব্যক্তি জিহাদে শহীদ হয়ে যায়, জীবিত হয়ে (পুনরায়) শহীদ হয়ে যায় আবার জীবিত হয়ে (তৃতীয়বার) শহীদ হয়ে যায়, তার জিম্মায় কারও ঋণ প্রাপ্য থাকলে সে জান্নাতে যাবে না, যে পর্যন্ত তার ঋণ শোধ করা না হয়। (নাসায়ি, তিবরানি, হাকেম) তবে রাসূলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করে এবং তা পরিশোধ করার ইচ্ছা রাখে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার পক্ষ থেকে তার ঋণ শোধ করে দেবেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঋণ শোধ করার ইচ্ছা রাখে না এবং এ অবস্থায় মারা যায়, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি বোধ হয় মনে করেছিলে, আমি আমার বান্দার হক তোমার কাছ থেকে আদায় করব না। এরপর ঋণ গ্রহীতার কিছু সৎকর্ম ঋণ দাতাকে দেয়া হবে। সে যদি কোনো সৎকর্ম না করে থাকে, তবে ঋণদাতার কিছু গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (তিবরানি, হাকেম)।
১৮.দৈনন্দিন চাহিদা:
দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য নিজের কাছে অর্থ না থাকলে কর্জ করতে হয়। তাই কর্জে হাসানা চালু করা জরুরি। বিভিন্ন মেয়াদে কর্জে হসানা চালু করতে পারলে এবং তা সার্কুলেশনে ছেড়ে দিলে অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধি পাবে। যেসব মানুষ জাকাত/ সদকা খেতে অভ্যস্থ হয়ে গেছে, তাদের এবং অন্য ধর্মের দরিদ্র মানুষকে স্বাবচলম্বী করার লক্ষ্য কর্জে হাসানা চালু করা উচিত। কর্জের ব্যাপারে কোরআন এবং হাদিসে যা বর্ণনা আছে, তা কর্জে হাসানা নেয়ার সময় অবহিত করা প্রয়োজন। তাহলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
১৯. সময়মত পরিশোধের পাক নিয়ত রাখা:
সময়মত পরিশোধের প্রাক নিয়ত রাখা এবং এর জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। আর আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করা। নিয়ত, দুআ ও সত্যিকার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে আল্লাহর সাহায্য সঙ্গে থাকে। তিনি পরিশোধ বা মুক্তির ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু ঋণ নেওয়ার সময়ই খারাপ নিয়ত রাখা বা ঋণ নিয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে পড়া খুবই অন্যায়। এতে শুধু আল্লাহর সাহায্যই হাতছাড়া হয় না, জানমালের বরকতও নষ্ট হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে, যে মানুষের সম্পদ পরিশোধের নিয়তে (ঋণ) নেয়, আল্লাহ তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করে দেন। আর যে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নেয়, আল্লাহ তা ধ্বংস করে দেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৩৮৭
২০. নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা:
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তো অবশ্যই, চেষ্টা করা, তার আগেই পরিশোধ করার। টালবাহানা, মিথ্যা কথা ও মিথ্যা ওয়াদার তো প্রশ্নই আসে না। এধরনের আচরণ তো যে কারো সাথেই না-জায়েয। আর যে বিপদে ঋণ দিয়ে অনুগ্রহ করেছে তার সাথে তো আরো ভয়াবহ। বস্তুত সামর্থ্য সত্ত্বেও এরূপ আচরণ খুবই অন্যায়। হাদীসে এসেছে, বিত্তবানের টালবাহানা জুলুম। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৪০০
ঋণ পরিশোধ ছাড়া অন্য কোনো শর্তারোপ করতে পারে না। -মুয়াত্তা মালেক ২/২১৫
২১.ঋণ দাতা ও ঋণ গ্রহীতা সুদভিত্তিক আদান প্রদান না করা:
ইবনে সীরীন রাহ. থেকে বর্ণিত, এক লোক একজনকে পাঁচ শ দিরহাম ঋণ দিয়েছে এবং তার ঘোড়ায় চড়ার শর্তারোপ করেছে। একথা শুনে ইবনে মাসউদ রা. বলেন, সে তার ঘোড়ায় চড়ে যে উপকৃত হয়েছে তা রিবা হিসেবে গণ্য হবে।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২১০৮০
এধরনের ফতোয়া আরো অনেক সাহাবী-তাবেয়ী থেকে বর্ণিত আছে, যা থেকে স্পষ্ট যে, সুদের ধরন ও সুদের হারের কম-বেশির কোনো ফারাক নেই। বরং ভোগ্য সুদ ও ব্যবসায়ী সুদ, কমহারের সুদ ও বেশিহারের সুদ ইত্যাদি সবই রিবা। রিবার নিষেধাজ্ঞা ও এর ভয়াবহতা সব পদ্ধতিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তবে হাঁ, সুদের পরিমাণ যত বেশি হবে, গোনাহের ভয়াবহতা তত তীব্র হতে থাকবে এবং ভোগ্য ঋণের ক্ষেত্রে এই হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া অধিক অপরাধ ও অধিক হীনতা বিবেচিত হবে। আর সুদ আদায়ের জন্য শারীরিক বা আর্থিক কিংবা অন্য কোনো ধরনের জরিমানা আরোপ তো জুলুমের উপর জুলুম।
২২. কর্জে হাসানা ২৩: সদকা, ঋণসহ যাবতীয় ঐচ্ছিক দান-অনুগ্রহের জন্য এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে আমলটির সওয়াব নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। অথচ সওয়াব অর্জনই এর একমাত্র উদ্দেশ্য। এটি নষ্ট করে ফেললে আল্লাহর কাছে আর কী পাওনা থাকে? এ কারণে কারো খোটা বা এজাতীয় কিছুর অভ্যাস থাকলে ঋণ দেওয়া অপেক্ষা ঋণপ্রার্থীর সাথে সুন্দর কথা বলা ও দুআ করাই উত্তম। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) হে মুমিনগণ! খোটা ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের সদাকাকে সেই ব্যক্তির মত নষ্ট করো না, যে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত এ রকম- যেমন এক মসৃণ পাথরের উপর মাটি জমে আছে, অতঃপর তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ে এবং সেটিকে (পুনরায়) মসৃণ পাথর বানিয়ে দেয়। এরূপ লোক যা উপার্জন করে তার কিছুই তাদের হস্তগত হয় না। আর আল্লাহ কাফেরদেরকে হেদায়েতে উপনীত করেন না। [-সূরা বাকারা: ২৬৪]
ইয়াছিন আরাফাত
চীফ এডমিন
বাংলাদেশ দাওয়া সার্কেল
খতিব: গোলার পাড় জামে মসজিদ,ফেনী
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.