কুরবানীর ইতিহাস: একটি বিতর্ক ও তার সমাধান
কুরবানীর ইতিহাস: একটি বিতর্ক ও তার সমাধান
কুরবানী শব্দটি আরবী্ قُرْب থেকে নেওয়া হয়েছে। এর আরবী প্রতিশব্দ হলো الأضحى যার বাংলা অর্থ দাড়ায় নৈকট্য, সান্নিধ্য, উৎসর্গ, ত্যাগ। ইংরেজিতে বলা হয়। Sacrifice, dedicate।
মানব সভ্যতার ইতিহাসের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি সত্তা তার প্রিয় ব্যক্তি প্রিয় মানুষ কিংবা প্রিয় সত্তার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য, অথবা তার সন্তুষ্টির লাভের উদ্দেশ্যে তার জীবনের সবচেয়ে পছন্দনীয় জিনিসকে উৎসর্গ করে নিজের অকৃত্রিম ভালোবসা ও আবেগকে মানব ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। কখনো এই এই অকৃত্রিম উৎসর্গ সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের , আবার কখনো বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের বিরল দৃষ্টান্তস্বরুপ জীবন উৎসর্গীকরণ।
তেমনি কুরবানীর এক বিরল ও প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আদি পিতা আদম আ: এর সন্তান হাবিল। আদম আ: দুই সন্তান হাবিল ও কাবিল তাদের মাঝে বিবাহ সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করণে উভয় তাদের প্রিয় বস্তু আল্লাহর রাহে কুরবানী করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। উভয় তার প্রিয় বস্তুতই কুরবানী করল। হাবিল আল্লাহর উদ্দেশ্য একটি সুন্দর সুদর্শন দুম্বা কুরবানী করল আর কাবিল কিছু শাক সবজি উৎসর্গ করল। কুরবানীর বস্তুই যাই হোক আল্লাহ তায়ালা তো মানুষের অন্তরের একনিষ্ঠতাকেই প্রাধান্য দেন। আর তিনিতো ‘আলীমুম বিযাতিস সুদূর’ তথা অন্তরযামী। তাই আল্লাহ তায়ালা হাবিলের ইখলাস তথা একনিষ্ঠতাকে কবুল করেন। অপর দিকে কাবিল তার মনে লুকিয়ে হঠকারিতার কারণে আল্লাহ তায়ালা তার কুরবানী কবুল করেননি। যা কুরবানী পরবর্তী কাবিল কর্তৃক হাবিলকে হত্যার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
وَٱتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ٱبْنَيْ ءَادَمَ بِٱلْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَاناً فَتُقُبِّلَ مِن أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ ٱلآخَرِ قَالَ لأَقْتُلَنَّكَ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ ٱللَّهُ مِنَ ٱلْمُتَّقِينَ لَئِن بَسَطتَ إِلَيَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِي مَآ أَنَاْ بِبَاسِطٍ يَدِيَ إِلَيْكَ لأَقْتُلَكَ إِنِّيۤ أَخَافُ ٱللَّهَ رَبَّ ٱلْعَالَمِينَ إِنِّيۤ أُرِيدُ أَن تَبُوءَ بِإِثْمِي وَإِثْمِكَ فَتَكُونَ مِنْ أَصْحَابِ ٱلنَّارِ وَذَلِكَ جَزَآءُ ٱلظَّالِمِينَ فَطَوَّعَتْ لَهُ نَفْسُهُ قَتْلَ أَخِيهِ فَقَتَلَهُ فَأَصْبَحَ مِنَ ٱلْخَاسِرِينَ فَبَعَثَ ٱللَّهُ غُرَاباً يَبْحَثُ فِي ٱلأَرْضِ لِيُرِيَهُ كَيْفَ يُوَارِي سَوْءَةَ أَخِيهِ قَالَ يَاوَيْلَتَا أَعَجَزْتُ أَنْ أَكُونَ مِثْلَ هَـٰذَا ٱلْغُرَابِ فَأُوَارِيَ سَوْءَةَ أَخِي فَأَصْبَحَ مِنَ ٱلنَّادِمِينَ
আর আদমের দু’ছেলের কাহিনী আপনি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনান। যখন তারা উভয়ে কুরবানী করেছিল অতঃপর একজন থেকে কবুল করা হল এবং অন্যজনের কবুল করা হল না। সে বলল, অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব। অন্যজন বলল, আল্লাহ তো কেবল মুত্তাকীদের পক্ষ হতে কবুল করেন। আমাকে হত্যা করার জন্য তুমি তোমার হাত প্রসারিত করলেও তোমাকে হত্যা করার জন্য আমি তোমার প্রতি আমার হাত প্রসারিত করব না; নিশ্চয় আমি সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহকে ভয় করি। নিশ্চয় আমি চাই তুমি আমার ও তোমার পাপ নিয়ে ফিরে যাও ফলে তুমি আগুনের অধিবাসী হও এবং এটা যালিমদের প্রতিদান। অতঃপর তার নফস তাকে তার ভাই হত্যায় বশ করল। ফলে সে তাকে হত্যা করল; এভাবে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হল। অতঃপর আল্লাহ এক কাক পাঠালেন, যে তার ভাইয়ের মৃতদেহ কিভাবে গোপন করা যায় তা দেখাবার জন্য মাটি খুঁড়তে লাগল। সে বলল হায়! আমি কি এ কাকের মতও হতে পারলাম না, যাতে আমার ভাইয়ের মৃতদেহ গোপন করতে পারি? অতঃপর সে লজ্জিত হল। অত:পর এর মাধ্যমে শুরু হয় পৃথিবীর প্রথম কুরবানী এবং একই সাথে মানব ইতিহাসের প্রথম হত্যাকান্ড। (সূরা মায়েদা : ২৭-৩১)
মানব ইতিহাসে যে কুরবানী বা ত্যাগের নযির আজ পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের মানিকোঠায় শিহরণ সৃষ্টি করে তা হলো মুসলিম জাতীর পিতা সায়্যেদুনা ইবরাহীম আ: কর্তৃক আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে প্রাণাধিক প্রিয় সন্তান ইসমাঈল আ: কে কুরবানী করা। ইবরাহীম আ: যখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ তখনো তিনি ছিলেন নি:সন্তান। হৃদয় নিংড়ানো আবেগ আকুতি ভালোবাসা নিয়ে আল্লাহ তায়ালার নিকট তিনি নেককার সন্তানের জন্য দুআ করলেন। যে সন্তান হবেন নেককার, চক্ষু শীতলকারী ও মুমিনদের ইমাম। তার দুআর ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তায়ালা তাকে পুত্র সংবাদের সুসংবাদ দেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
قَالُوا لَا تَخَفْ وَبَشَّرُوهُ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ فَأَقْبَلَتِ امْرَأَتُهُ فِي صَرَّةٍ فَصَكَّتْ وَجْهَهَا وَقَالَتْ عَجُوزٌ عَقِيمٌ قَالُوا كَذَلِكَ قَالَ رَبُّكِ إِنَّهُ هُوَ الْحَكِيمُ الْعَلِيمُ
তারা বললঃ আপনি ভীত হবেন না। তারা তাঁকে একট জ্ঞানীগুণী পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল।
অতঃপর তাঁর স্ত্রী চিৎকার করতে করতে সামনে এল এবং মুখ চাপড়িয়ে বললঃ আমি তো বৃদ্ধা, বন্ধ্যা। তারা বললঃ তোমার পালনকর্তা এরূপই বলেছেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা যারিয়াত: ২৮-৩০) আরো দেখুন- (সুরা আস সাফ্ফাত : ১০১)।
বার্ধক্য বয়সে একজন পিতার নিকট তার একমাত্র সন্তান কতটুকু স্নেহের, আবেগের কতটুকু ভালোবাসার তা ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব। তার উপর যখন সন্তান পিতার তর্জনী কিংবা কনিষ্ঠা আংগুল ধরে একটু একটু করে হাটতে চলতে পারে। আহা! কি মনোরম দৃশ্য, কি মায়াবী। ঠিক এমনি অবস্থায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার প্রিয় খলীল ইবরাহীম আ: কে স্বপ্নযোগে তার এমন আদূরে, প্রাণাধিক প্রিয় সন্তানকে আল্লাহর ভালোবাসা কুরবানী করার নির্দেশ দেন। পবিত্র কুরআনে এই দৃশ্যকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ، فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ ، فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِن شَاء اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ ، فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ ، وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ ، قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ ، إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلَاء الْمُبِينُ ، وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ ، وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ ، سَلَامٌ عَلَى إِبْرَاهِيمَ ، كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ ، إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِينَ
“হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন!” সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম। অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইবরাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল। তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইবরাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, ইবরাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। সে ছিল আমার বিশ্বাসী বান্দাদের একজন। (সূরা আস সাফফাত: ১০০-১১১)
সুবহানাল্লাহ! পিতা-পুত্রের আল্লাহর রাহে কুরবানীর মানাসিকতার মাধ্যমে এক অসাধরণ, আবেগময়ী ও দৃঢ়চিত্তে আল্লাহর সিদ্ধান্তে অটল থাকার এক অনন্য নজির স্থাপিত হয়েছে। এর মাধ্যম রচিত হয়েছে আল্লাহর জন্য নিজের পছন্দনীয় বস্তু কুরবানী করার বিরল দৃষ্টান্ত। আর তারই ধারাবাহিকতায় মুসলিম উম্মাহ ইবরাহীম আ: এর সুন্নাহর পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে কুরবানী করে আসছে এবং এই কুরবানী মুসলিম উম্মাহর জন্য ইবরাহীম আ: সুন্নাহ হিসেবে বিধিত।
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ، قَالَ قَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا هَذِهِ الأَضَاحِيُّ قَالَ ” سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ
যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কুরবানী কী? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আ) এর সুন্নাত (ঐতিহ্য)। (যয়ীফ; সুনানে ইবনে মাজাহ :৩১২৭)
একটি বিতর্ক ও তার সমাধান:
ইবরাহীম আ: কুরবানীর জন্য আদৃষ্ট হয়েছেন ইসমাঈল আ: সম্পর্কে নাকি ইসহাক আ: সম্পর্কে অর্থাৎ কে যাবীহুল্লাহ তা নিয়ে মুহাম্মাদ সা. নবুওয়াত পাওয়ার পর থেকে মুসলমান ও আহলে কিতাবদের মাঝে বিতর্ক চলে আসছে। এর কারণ হলো ইহুদীরা হলো ইসহাক আ: এর বংশধর আর আরবরা তথা কুরাইশরা হলো ইসমাঈল আ: এর বংশধর। যেহেতু ইসমাঈল আ: এর বংশধর থেকে আখেরী নবী সা. এর আগমন হয়েছে তাই ইহুদীরা ‘যাবীহুল্লাহ তথা আল্লাহর জন্য কুরবানী বা উৎসর্গী ’ এই মর্যাদা হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে প্রদান করতে নারাজ। অথচ এই বিষয়ের উপর পূর্বেকার সকল উম্মত ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
এর প্রমান হলো নি:সন্তান ইবরাহীম আ: আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলেন
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
“হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন!” অর্থাৎ ঐ সন্তান যেন একত্ববাদে তাঁর সঙ্গী হয়। (সূরা আস সাফফাত: ১০০)
মহান আল্লাহ বলেনঃ
فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ
“আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম।” (সূরা আস সাফফাত: ১০১) ইনিই ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ), হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রথম সন্তান। বিশ্ব মুসলিম এর ঐকমত্যে তিনি হযরত ইসহাক (আঃ)-এর বড় ছিলেন। একথা আহলে কিতাবও মেনে থাকে। এমনকি তাদের কিতাবেও লিখিত আছে যে, হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর জন্মের সময় হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ছিল ছিয়াশি বছর। আর হযরত ইসহাক (আঃ)-এর যখন জন্ম হয় তখন হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর বয়স নিরানব্বই বছরে পৌঁছেছিল। তাদেরই গ্রন্থে একথাও লিখিত রয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে তাঁর একমাত্র সন্তানকে কুরবানী করার হুকুম দেওয়া হয়েছিল। আর পবিত্র কুরআনেও তাই রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِن شَاء اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ
অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইবরাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। (সূরা আস সাফফাত: ১০২)
আর একমাত্র সন্তান বলতে ইসমাঈল আ: কে বুঝায়। কিন্তু ইয়াহুদীরা এ বিষয়কে অনর্থক ব্যাখ্যা করে আল্লাহর বাণী পরিবর্তন করার হীন চেষ্টা করেছে।
তারা একথাও বলেছেঃ “আমাদের কিতাবে وَحِيْدُكَশব্দ রয়েছে, যার অর্থ একমাত্র সন্তান নয়, বরং এর অর্থ হলোঃ ‘যে তোমার নিকট বর্তমানে একাকী রয়েছে।’ এটা এজন্যেই যে, ঐ সময় হযরত ইসমাঈল (আঃ) মক্কায় তাঁর মায়ের কাছে ছিলেন এবং হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট শুধুমাত্র হযরত ইসহাক (আঃ) ছিলেন। কিন্তু এটা সম্পূর্ণরূপে ভুল কথা। কেননা, وَحِيْدُكَ ওকেই বলে যে একমাত্র সন্তান, যার আর কোন ভাই নেই । আর একথাও সত্য যে, যার একটি মাত্র সন্তান, যার পরে কোন সন্তান নেই স্বাভাবিকভাবে তার প্রতি মমতা বেশীই হয়ে থাকে। এই জন্যই আল্লাহ তায়ালা ইবরাহীম আ: কে পরীক্ষা করার জন্য একমাত্র সন্তান ইসমাঈলকে কুরবানীর বস্তু হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। (ইবনে কাসীর : সূরা আস সাফফাত এর ১০০-১১১ এর ব্যখ্যা দেখুন)
আল্লাহ তায়ালা অভিশপ্ত ইহুদীদের বিকৃতি ইসলামকে হেফাজত করুন। আমীন।
মাওলানা নুরুল হুদা ভুইঁয়া
খতিব, বাইতুল গফুর জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.