অমুসলিম শিশু ও মুসলিম শিরককারী মৃত্যুর পর কে কাফির হবে?
সরল জিজ্ঞাসা ০২
(আপনার মনে ইসলাম নিয়ে শত জিজ্ঞাসা ও প্রশ্নের সমাধান নিয়ে আমাদের এই আয়োজন)
প্রশ্ন: অমুসলিম সন্তান, যারা শৈশবে মারা গেছে তারা কি কাফের? আবার মুসলিম শিশু শিরক করে মারা গেলে তাদের কে কি কাফের বলা যাবে?
উত্তর: এ ক্ষেত্রে কয়েকটি মত রয়েছে। প্রথমত: অমুসলিম সন্তান, যারা শিশু অবস্থায় মারা গিয়েছে- আমাদের বুঝতে হবে, ইসলাম কখনই একজনের শাস্তি অন্যজনকে দেয়না আল্লাহ তায়লা বলেন:
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ
“একজনের প্রতিদান অন্যজনকে দেওয়া হবে না।” ( সূরা ফাতির: ১৮) সূতরাং ব্যক্তির আমলের উপরই তার প্রতিদান নির্ভর করে। সে কোন পরিবারে জন্মগ্রহণ করলো, কার সন্তান, সে কিভাবে মৃত্যু বরণ করলো এটি বিবেচ্য নয়। সুতরাং যে শিশুটা অমুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে মারা গেছে তার কোন পাপ নেই। কাজেই সে কুফর করতে পারেনা বা শিরক করতে পারেনা। এজন্য অমুসলিম সন্তান যখন মারা যায় তাকে আমরা কাফির বা মুসরিক বলতে পারিনা। কেননা রাসূল (স:) ইরশাদ করেন:
كل مولود يولد على الفطرة فأبواه يهودانه أو ينصرانه أو يمجسانه
“ প্রতিটি মানবসন্তানই ফিতরাতের উপরে (মানবীয় প্রকৃতির উপরে, তাওহীদের ফিতরাতের উপরে) জন্মগ্রহণ করে। অতপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী, খ্রিষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানায়।” (বুখারী: ১৩৮৫, মুসলিম:২৬৫৮)। কাজেই এই পর্যায়ে যাওয়ার আগে যে মারা গেছে আমরা তাকে মুশরিক বলতে পারিনা। তাছাড়া মুশরিক পিতা-মাতাও কখনো কখনো ইসলাম গ্রহণ করে।( এই মতটি মরহুম আব্দুল্লাহ জাহঙ্গীর রহ এর মত)
দ্বিতীয়: কোন অমুসলিম শিশু মারা গেলে তার সাথে দুনিয়ায় কাফেরদের মতই আচারণ করতে হবে। অর্থাৎ তাদের জন্য গোসল,জানাযা কিংবা মুসলিম রীতিতে কবর দেওয়া বা মুসলমানদের কবরস্থানে কবর দেওয়া কোনটিই করা যাবেনা। আর আখেরাতে আল্লাহা তায়ালা তাদের সাথে কি আচারণ করবেন এটি তার বিষয়। কেননা এসম্পর্কে রাসূল (স) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: الله أعلم بما كانوا عاملين “তাদের কর্মের ব্যপারে আল্লাহই ভালো জানেন।” (বুখারী:৬৫৯৭, মুসলিম:২৬৬০)
তাছাড়া আলেমদের কিছু অংশ মনে করেন, আল্লাহ তায়লা কেয়ামতের দিন তাদের সকলের সামনে উপস্থাপন করবেন এবং তাদের সময়কার লোকদের যে পরিক্ষা করা হয়েছে তাদেরও তেমন পরিক্ষা করা হবে। আল্লাহ তায়ালা তাদের নিকট একজন রাসূল পাঠাবেন। যারা তার আনুগত্য করবে তারা জান্নাতী আর যারা তার অবাধ্য হবে তারা জাহান্নামী। ( মাজমুউল ফতোয়া: ইবনে বায)। (পরিক্ষা এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের বিচার দিবসের দিন তাদের আমলের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তারা বলবে, আমাদের নিকট কোন শতর্ককারী আসেনি। যদি আসতো অবশ্যই আমরা তাঁর আনুগত্য করতাম। এমতবস্থায় আল্লাহ একজন রাসূলের মাধ্যমে তাদের জাহান্নামে যাওয়ার ফয়সালা দিবেন। তখন তাদের একদল জাহান্নামের দিকে যাবে অপর দল আপত্তি করবে যে, আমাদের কেন জাহান্নামে পাঠাচ্ছেন? আপনি নিজেই বলেছেন: وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولًا “ যতক্ষণ আমি রাসূল প্রেরণ করিনা ততক্ষণ কারো উপর আজাব দেইনা।( সূরা নিসা:১৫)। তখন আল্লাহ তায়ালা যারা জাহান্নামের দিকে রওয়ানা হলো তাদের জান্নাত দিবেন কারণ তারা আল্লাহর আদেশ শুনার পর আনুগত্য করেছে। আর যারা আপত্তি করেছে তাদের বলা হবে তোমাদের নিকট দুনিয়ায়ও যদি আমার আদেশ পৌঁছাতো তখনো তোমরা তা গ্রহণে আপত্তি করতে। সুতরাং আজকে তোমরা জাহান্নামী। (এই মতটি ইমাম ইবনে বায ও ইবনে তাইমিয়া র. এর)
অপরদিকে মুসলিম সন্তানরা যদি শিরক করে এবং এই অবস্থায় মারা যায় তবে তাদেরও কাফির বলা যাবেনা। কেননা রাসূল (স:)
رُفِع القَلمُ عن ثلاثةٍ: عن النَّائمِ حتَّى يستيقظَ، وعن الصَّبي حتَّى يحتلِمَ، وعن المجنونِ حتَّى يَعقِلَ
“ তিন ব্যক্তির উপর থেকে (শরীয়তের ) কলম তুলে নেওয়া হয়েছে। ১. ঘুমন্ত ব্যক্তি যথক্ষণ পর্যন্ত সে জাগ্রত না হবে। ২. শিশু থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত সে বালেগ না হবে। ৩. পাগলের উপর থেকে যথক্ষণ পর্যন্ত সে জ্ঞান ফিরে পাবে। ( মুসনাদে আহমাদ: ২৪১৪৫)।
সুতরাং মুসলিম শিশু যদিও অপরাধ করে থাকে তা করেছে পিতা-মাতাকে দেখে। সে পাপী নয়।তাই এর জন্য তাকে জাহান্নামে যেতে হবেনা।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.