সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

ইসলামে সামাজিক জীবনের গুরুত্ব

ইসলামে সামাজিক জীবনের গুরুত্ব

ইসলামে সামাজিক জীবনের গুরুত্ব

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ জীবনযাপনই তার ধর্ম। এর বাইরে কোনো জীবন ইসলামস্বীকৃত নয়। ফলে সমাজের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতাও তার রয়েছে। ব্যক্তি তার নিজ, পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য।

মানুষকে তার নিজের, পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজনের কল্যাণের সাথে সাথে তার পাড়া-প্রতিবেশী, চলারসাথি, অধীনস্থ সবারই কল্যাণ সাধনে ভূমিকা রাখতে হবে এবং দায়িত্ব পালনের বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।

হাদিসের কিতাবসমূহে সদাচরণের বিষয়ে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন- ‘জমিনে যারা আছে তাদের সাথে সদাচরণ করো, তাহলে আসমানে যিনি আছেন তিনিও তোমাদের সাথে সদাচরণ করবেন।’ জমিনে যারা আছে এ কথা দ্বারা সব ধরনের মানুষ, আত্মীয়-অনাত্মীয়, মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবার সাথে সদাচরণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। শুধু কি তাই, আল্লাহর সকল সৃষ্টিই সদাচরণের হকদার। একজন মুসলিম সেই, যার হাত থেকে সবাই নিরাপদ। রসুল সা.-এর হাদিস স্মরণযোগ্য- ‘ঐ ব্যক্তি মু’মিন, মু’মিন নয়, মু’মিন নয় যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়।’

মানুষের প্রতি জুলুম জঘন্যতম অপরাধ- কথা, কাজ, আচরণ যে-কোনো ভাবেই হোক না কেন? আল্লাহর বাণী- ‘নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে।’ মানুষের প্রতি রূঢ় আচরণ ও সম্মানহানি সবই ঘৃণ্য। আয়েশা রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সা. আমার এই ঘরের মধ্যেই দোয়া করেছিলেন- ‘হে আল্লাহ! যে আমার উম্মতের ওপর কঠোরতা করে তুমিও তার ওপর কঠোরতা করো, আর যে সদয় হবে, তুমিও তার প্রতি সদয় হও।’

আমাদের দুর্ভাগ্য, ব্যবহারিক জীবনে ইসলামের অনুশাসন খুব কমই আমরা অনুসরণ করি। তাই লেন-দেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পালন, আমানতদারিতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান পালনে আমরা অহরহ দুর্বলতা প্রদর্শন করে থাকি। লোকজন প্রায়ই আমাদের থেকে প্রতারিত হয় এবং ঘুষের আদান-প্রদানের মাধ্যমে মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।

সামাজিক জীবনে এসব অনাচার সম্পর্কে স্কুলজীবনে আমাদের পাঠ্য বইয়ে ইসমাইল হোসেন সিরাজীর লেখা আজও আমার মনে পড়ে- ‘অতি নামাজি-কালামি, হাজি-দরবেশ পাপী গোনাহগার হতে পারেন যদি তিনি করে থাকেন সামাজিক জীবনের দুশমনি।’ সমাজের মানুষের জন্য ক্ষতিকর এমন কর্ম আখেরাতে বিশ্বাসী কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

আল্লাহপাক আমাদেরকে  তাঁর বান্দাদের কল্যাণে ভূমিকা রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক,প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

Verified by MonsterInsights