সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

ফাসেক লোকদের খবর যাচাই ছাড়া বিশ্বাস করা যাবে না

ফাসেক লোকদের খবর যাচাই ছাড়া বিশ্বাস করা যাবে না

ফাসেক লোকদের খবর যাচাই ছাড়া বিশ্বাস করা যাবে না

يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوٓا إِن جَآءَكُمْ فَاسِقٌۢ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوٓا أَن تُصِيبُوا قَوْمًۢا بِجَهٰلَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلٰى مَا فَعَلْتُمْ نٰدِمِينَ

হে ঈমানদারগণ, যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে, তোমরা অজ্ঞতাবশত কোন কওমকে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে। সূরা আল-হুজুরাত:৬

এই ৬ নং আয়াত নিয়ে তাফসির গ্রন্থসমূহে বলা হয়েছে যে, হজরত ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা. সম্পর্কে এটি নাজিল হয়েছে। বনি মুস্তালিক গোত্রের নেতা হারিস ইবনে দিরার (উম্মুল মুমিনীন হজরত জুয়াইরিয়ারের পিতা) রসুলুল্লাহ সা.-এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করে তাঁকে জাকাত দিতে সম্মত হয়ে লোক পাঠাতে বলেন।

সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী বনি মুস্তালিক গোত্র থেকে জাকাত আদায় করতে হজরত ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা.-কে রসুল সা. পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো কারণে তিনি ভয় পেয়ে সেখানে না গিয়ে মদিনায় ফিরে এসে বলেন, তারা জাকাত দিতে অস্বীকার করেছে ও তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছে। ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা. মক্কা বিজয়ের পরে ইসলাম গ্রহণ করেন। আসলে বিষয়টি এমন ছিল না। একটি তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁকে সংবর্ধনা দিতে এগিয়ে আসা লোকজনকে দেখে ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা. ভয় পেয়েছিলেন।

রসুলুল্লাহ সা. ওয়ালিদের কথায় দারুণভাবে কষ্ট পান এবং সাহাবায়ে কেরাম বনি মুস্তালিক গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। কিন্তু আল্লাহর রসুল সা. খালিদ বিন ওয়ালিদ রা.-কে পাঠান বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য। সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি দ্বিধান্বিত ছিলেন।

পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে রসুল তোমাদের মাঝে বর্তমান। কল্যাণ-অকল্যাণের বিষয়টি তিনি তোমাদের চেয়ে বেশি জানেন। বনি মুস্তালিক গোত্রের নেতা হারিস ইবনে দিরার রা. প্রতিনিধি দলসহ রসুলুল্লাহ সা.-এর সমীপে হাজির হয়ে বলেন, জাকাত আদায়ের লক্ষ্যে কেউ তাঁদের কাছে যায়নি বা তাঁদের সাথে সাক্ষাত হয়নি এবং তাদেরকে হত্যা করার প্রশ্নই উঠে না। তাঁরা ইসলাম ত্যাগ করেননি এবং ইসলামের ওপর অবিচল রয়েছেন। রসুলুল্লাহ সা. কর্তৃক গৃহিত পদক্ষেপ খুবই ফলপ্রসু হয়। যাচাই-বাছাই এবং অপেক্ষা না করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বড়ো ধরনের বিপর্যয় দেখা দিত।

এই সুরায় মুসলমানদের এমন আদব-কায়দা, আচার-আচরণ, শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া হয়েছে যা তাদের ইমানদারসূলভ স্বভাব-চরিত্র ও ভাবমূর্তির সহায়ক। নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রতিটি খবর বিশ্বাস না করে সেটি যাচাই-বাছাই করে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ বিষয়াবলী সম্পর্কে অবশ্য যাচাই-  বাছাই করার কথা এখানে বলা হয়নি। বড়ো বিষয়াবলী যাতে ব্যক্তি বা কোনো গোষ্ঠীর বড়ো ধরনের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা থাকে।

হজরত ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা. একজন সাহাবি। সাহাবিগণও মানুষ, ভুল-ত্রুটি তাঁদেরও হয়েছিল। তাঁরা অন্যায় করলে রসুলুল্লাহ সা. তাঁদেরকে শাস্তিও দিয়েছেন। অন্যায় হয়ে গেলে তাঁরা স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করে নিজেরাও শাস্তি ভোগ করেছেন। তাঁদের বড়ো বৈশিষ্ট্য হলো কোনো ভুল হলে সেই ভুলের ওপর কখনই তাঁরা অবিচল থাকতেন না। তাৎক্ষণিক তওবা করতেন। তওবার মাধ্যমে বদ আমল নেকিতে পরিণত হয়ে যায়। সাহাবিদের নেকির পাল্লা এতো ভারি যে আল্লাহপাক তাঁদের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তিনি তাঁদের প্রতি রাজী হয়েছেন। ফলে সকল সাহাবির প্রতি উম্মাহর সুধারণা রয়েছে।

মিথ্যা খবর প্রচার করা বড়ো ধরনের গুনাহ। আল্লাহ তায়ালা এই জাতীয় অপরাধের সাথে যুক্ত ব্যক্তিকে (ফাসেক) বলে আখ্যায়িত করেছেন। আমাদের রাজনীতির অঙ্গনে মিথ্যাচার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মনে হয় না যে, আমরা মুসলিম। ফলে পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি লেগেই আছে। ব্যক্তিগত পর্যায়েও পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ কম নয়। এখানে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ, কোনো বড়ো ধরনের খবর পাওয়া গেলে তরিৎ সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিষয়টি যাচাই করতে হবে। যাচাই ছাড়া দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে বড়ো ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। আল্লাহপাক বারবার ধৈর্য অবলম্বনের তাগিদ দিয়েছেন এবং এটিও বলেছেন, তিনি ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।

দ্বিপাক্ষিক কোনো বিষয়ে কেউ কারো সম্পর্কে বিরূপ কথা বললে অবশ্যই তা যাচাই করতে হবে এবং পরস্পর আলোচনা করে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে। একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও রুঢ় আচরণ ইসলামী মূল্যবোধের খেলাপ ও গুনাহের শামিল। আলোচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্তে কেউ কষ্ট পেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি হবে সুস্পষ্ট জুলুম। অবশ্যই তওবা করে সংশোধন না করলে জালেম হিসেবে বিবেচিত হবে। পক্ষান্তরে মজলুম যদি জালেমকে ক্ষমা করে দেয় সেটি হবে উত্তম কাজ এবং আল্লাহপাক এমতাবস্থায় তাঁর সেই মজলুম বান্দাকে ক্ষমা করে উত্তম বিনিময় দান করবেন।

ক্ষমার মধ্য দিয়ে আল্লাহপাক তাঁর বান্দাকে যা দেন অন্য কিছুতে তা লাভ করা সম্ভব নয়। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে তার ভাইকে ক্ষমা করবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে ক্ষমা করবেন। আসুন, আমরা আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার আশায় তাঁর বান্দাদের সাথে সদাচরণ করি ও ক্ষমা করে দেই।

মো: ইয়াছিন (আরাফাত)
এডমিন,বাংলাদেশ দাওয়াহ সার্কেল
খতিব,গোলারপাড় জামে মসজিদ,ফেনী

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

Verified by MonsterInsights