সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

মিথ্যা বলা সকল পাপের মা

মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে

মিথ্যা সকল গুনাহের মা। মিথ্যা বলা সকল পাপের মা। মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে।

কোরআনে মিথ্যার শাস্তি নিয়ে আয়াত

কুরআনের বাণী –
فَمَنِ افْتَرٰى عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ مِنۢ بَعْدِ ذٰلِكَ فَأُولٰٓئِكَ هُمُ الظّٰلِمُونَ
অর্থ: অতএব যারা এরপরও আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা রটনা করে, তারা অবশ্যই যালিম। সূরা আলে-ইমরান:৯৪

فِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌۢ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ
অর্থ: তাদের অন্তরসমূহে রয়েছে ব্যাধি। সুতরাং আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। কারণ তারা মিথ্যা বলতো। সূরা আল-বাকারাহ:১০

انظُرْ كَيْفَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ ۖ وَكَفٰى بِهِۦٓ إِثْمًا مُّبِينًا
অর্থ: দেখ, কেমন করে তারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে। আর প্রকাশ্য পাপ হিসেবে এটিই যথেষ্ট। সূরা আন-নিসা:৫০

وَمَن يَكْسِبْ خَطِيٓـَٔةً أَوْ إِثْمًا ثُمَّ يَرْمِ بِهِۦ بَرِيٓـًٔا فَقَدِ احْتَمَلَ بُهْتٰنًا وَإِثْمًا مُّبِينًا
অর্থ: আর যে ব্যক্তি কোন অপরাধ বা পাপ অর্জন করে, অতঃপর কোন নির্দোষ ব্যক্তির উপর তা আরোপ করে, তাহলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য গুনাহের বোঝা বহন করল। সূরা আন-নিসা:১১২

إِنَّ الَّذِينَ اتَّخَذُوا الْعِجْلَ سَيَنَالُهُمْ غَضَبٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَذِلَّةٌ فِى الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا ۚ وَكَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُفْتَرِينَ
অর্থ: নিশ্চয় যারা গো বাছুরকে (উপাস্য হিসাবে) গ্রহণ করেছে, দুনিয়ার জীবনে তাদেরকে আক্রান্ত করবে তাদের রবের পক্ষ থেকে গযব ও লাঞ্ছনা। আর এভাবে আমি মিথ্যা রটনাকারীদের প্রতিফল দেই। সূরা আল-আরাফ:১৫২

হাদিসে মিথ্যা নিয়ে বাণী

عَلِيٍَّ يَقُولُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لاَ تَكْذِبُوا عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ فَلْيَلِجْ النَّارَ
‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ আমার উপর যে মিথ্যারোপ করবে সে জাহা্ন্নামে যাবে। (বুখারী পর্ব ৩ঃ /৩৮ হাঃ ১০৬, মুসলিম মুকাদ্দামাহ, দ্বিতীয় অধ্যায়, হাঃ ২) আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিস নং ১

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “সাতটি সর্বনাশী কর্ম হতে দূরে থাক।” সকলে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! তা কী কী?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর সাথে শির্ক করা, যাদু করা, ন্যায় সঙ্গত অধিকার ছাড়া আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা করা হারাম করেছেন তা হত্যা করা, সূদ খাওয়া, এতীমের মাল ভক্ষণ করা, (যুদ্ধক্ষেত্র হতে) যুদ্ধের দিন পলায়ন করা এবং সতী উদাসীনা মুমিনা নারীর চরিত্রে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া।” (বুখারী ২৭৬৬, ৬৮৫৭, মুসলিম ২৭২নং, আবূ দাঊদ, নাসাঈ) হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১১

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا اُؤْتُمِنَ خَانَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত হচ্ছে তিনটা- যখন সে কথা বলে,মিথ্যাবলে, যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে এবং যখন তার নিকট কোন কিছু আমানত রাখা হয়, তা সে খিয়ানত করে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫)।ঊপদেশ, হাদিস নং ১৬

وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : «اَلْكَبَائِرُ الْإِشْرَاكُ بِاللهِ وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ وَقَتْلُ النَّفْسِ وَالْيَمِيْنُ الْغَمُوْس». رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কাউকে আল্লাহর সঙ্গে শারীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা, মিথ্যা শপথ করা বড় গুনাহ।বুখারী, হাদিস নং ৬৬৭৫

মিথ্যা সকল গুনাহের মা।

আমার উম্মতেরা সব পারে, পারে না মিথ্যা বলতে ও বিশ্বাসঘাতকতা করতে। দুর্ভাগ্য, বিশ্ব দরবারে আমরা নিজেদের সত্যবাদী হিসেবে উপস্থাপন করতে পারছি না। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে যারা নিয়োজিত তাদের পক্ষে মিথ্যা বলা আদৌ সম্ভব নয়। রাষ্ট্রীয় যে শিষ্টাচার তাতে ধরে নেয়া হয় সরকার প্রধান থেকে শুরু করে যারা প্রতিনিধিত্ব করেন তারা সবাই সত্য বলেন। সত্য বলেন বলেই তো তাদের এতো মর্যাদা। এই মর্যাদা দুনিয়া ও আখেরাতে। দুনিয়া জীবনে তারা সর্বোত্তম সম্মান ও মর্যাদা ভোগ করেন এবং আখিরাতে তারা আল্লাহর আরশের ছায়ায় অবস্থান করবেন।

মিথ্যা প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ

যে মিথ্যা ছাড়তে পারে, সে সহজেই পাপাচারমুক্ত হতে পারে। একটি সরকারের মৌলিক কাজ হলো -সমাজে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ। তাই সরকারের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের অবশ্য সত্যবাদী ও ন্যায়বান হতে হয়। দেশের আইন- শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থা জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। তাদের পক্ষে মিথ্যাবলা একেবারেই বেমানান। একজন বৃটিশ বা একজন জার্মান নাগরিক গর্ব করে বলতে পারে- আমার দেশের পুলিশ মিথ্যা বলে না। আমরাও তা চাই। আমরা একটি বিশ্বাসী জাতি। পরকালে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে জানা ও বিশ্বাস করার পরও কি মিথ্যা বলা যায়? যে হারে ধর- পাকড় ও মামলা-মোকদ্দমা তা কি আমাদের পুলিশের সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না?

আমাদের কর্মকাণ্ড ও আচার-আচরণ দেখে মনে হয় আমরা অবিশ্বাস ও মুনাফিক জাতিতে পরিণতি হয়েছি। মুনাফিকের সকল বৈশিষ্ট্য আমাদের মাঝে বিদ্যমান। একজন মুনাফিক কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, আমানতে খেয়ানত করে ও অশ্লীল ভাষায় ঝগড়া করে।

হে আল্লাহ! মুসলিম হিসেবে তুমি আমাদের মাঝে উপলব্ধি দান করো এবং ধ্বংস ও বিপর্যয় থেকে বাঁচাও।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

Verified by MonsterInsights