সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

হিংসা র পরিণতি ধ্বংস দুনিয়া ও আখেরাতে

হিংসা থেকে বাঁচার উপায়

শিরক ও হিংসা থেকে মুক্ত এমন ব্যক্তি আশা করতে পারে যে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। আমাদের সমাজে অন্যায় অবিচার ও জুলুমের বড়ো কারণ হিংসা। হিংসা কেবল কবিরা গুনাহ নয়, বরং হিংসা মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। ফলে সে আমল শূন্য হয়ে জাহান্নামে যাবে। হিংসা থেকে বাঁচতে হলে উদার হতে হবে এবং মানুষকে ক্ষমা করতে হবে। মানুষকে ক্ষমা করার বিনিময়ে আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্তি সহজ হবে। বিশেষ বিশেষ দিনে আল্লাহপাক তাঁর অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করেন, ক্ষমা থেকে বাদ যায় শুধু মুশরিক ও হিংসুক।

হিংসা নিয়ে কোরআনের আয়াত :

وَءَاتَيْنٰهُم بَيِّنٰتٍ مِّنَ الْأَمْرِ ۖ فَمَا اخْتَلَفُوٓا إِلَّا مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًۢا بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّ رَبَّكَ يَقْضِى بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ
আর আমি তাদেরকে দীনের যাবতীয় বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি দিয়েছিলাম। তাদের কাছে জ্ঞান আসার পরও কেবল পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষবশত তারা মতবিরোধ করেছিল। তারা যে সব বিষয়ে মতবিরোধ করত তোমার রব কিয়ামতের দিনে সে সব বিষয়ে মীমাংসা করে দেবেন।(সূরা আল-জাসিয়া:১৭)। পরকালে হিংসা বলতে কিছুই থাকবে না – وَنَزَعْنَا مَا فِى صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ إِخْوٰنًا عَلٰى سُرُرٍ مُّتَقٰبِلِينَ – আর আমি তাদের অন্তর থেকে হিংসা বিদ্বেষ বের করে ফেলব, তারা সেখানে ভাই ভাই হয়ে আসনে মুখোমুখি বসবে। (সূরা আল-হিজর:৪৭)

হিংসামুক্ত জীবন হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম জীবন :

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قِيْلَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَىُّ النَّاسِ أَفْضَلُ قَالَ كُلُّ مَخْمُوْمِ الْقَلْبِ صَدُوْقِ اللِّسَانِ. قَالُوْا صَدُوْقُ اللِّسَانِ نَعْرِفُهُ فَمَا مَخْمُوْمُ الْقَلْبِ قَالَ هُوَ التَّقِىُّ النَّقِىُّ لاَ إِثْمَ فِيْهِ وَلاَ بَغْىَ وَلاَ غِلَّ وَلاَ حَسَدَ. – অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলা হল, সবচেয়ে ভাল মানুষ কে? তিনি বলেন,প্রত্যেক হিংসাবিদ্বেষ মুক্ত অন্তরের অধিকারী এবং সত্য কথার ধিকারী ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম মানুষ’। ছাহাবীগণ বললেন, আমরা সত্য কথার অধিকারী জানি। কিন্তু হিংসাবিদ্বেষ মুক্ত অন্তর কি জিনিস তা জানি না। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি স্বচ্ছ ও পরহেযগার।
যার মধ্যে –
(১) পাপ নেই, পাপ হলেই ক্ষমা চায়
(২) সীমালংঘন নেই
(৩) খিয়ানত নেই
(৪) হিংসানেই
(ইবনু মাজাহ হা/৪২১৬) ঊপদেশ, হাদিস নং ৫৩

আমল ধ্বংসের কারণ :

দুর্ভাগ্য, আমরা ক্ষমা করার গুণ হারিয়ে ফেলে বংশ পরম্পরায় হিংসা – বিদ্বেষ লালন করি এবং সেটি নাকি আমাদের চেতনা। নেলসন ম্যান্ডেলা একজন অমুসলিম হয়েও ক্ষমা করতে পারে, আর মুসলিম নামধারী মুনাফিকরা হিংস্র হায়েনার শক্তি নিয়ে একে অপরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ধিক মানুষ নামে কলঙ্ক এই নরপশুদের।

প্রিয়তম নবি মুহাম্মদ সা. বলেন, আমার উম্মতেরা সব পারে মিথ্যা বলতে পারে না আর বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না। অথচ তাঁর উম্মতেরা সত্য বলতেই ভুলে গেছে। অনর্গল মিথ্যা বলা তাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। লজ্জা -শরম সব হারিয়ে ফেলেছে।

হিংসা থেকে বাঁচার উপায় :

এখন প্রশ্ন, বাঁচার কী কোনো উপায় আছে? আমি বলবো, হ্যাঁ আছে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের হতাশ হতে না করেছেন। অতীতের জুলুম- নির্যাতন থেকে ফিরে এসে (তওবা করার মাধ্যম) একে অপরকে ক্ষমা করার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারলেই পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। মুক্তি পেতে হলে হিংসা-বিদ্বেষ ও একে অপরকে ঘৃণা করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের মাঝে শুভবুদ্ধি দান করুন এবং অতীতের সকল অন্যায়-জুলুম থেকে তওবা করে পরিশুদ্ধ হওয়ার তৌফিক দান করুন।

মো:ইয়াছিন (আরাফাত)
এডমিন,বাংলাদেশ দাওয়াহ সার্কেল
খতিব,গোলারপাড় জামে মসজিদ,ফেনী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

Verified by MonsterInsights