সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

আমরা উদার ও ক্ষমাশীল হই

আমরা উদার ও ক্ষমাশীল হই

আমরা উদার ও ক্ষমাশীল হই । আল্লাহ নিজে উদার ও ক্ষমাশীল এবং তিনি বান্দার মাঝে উদারতা ও ক্ষমাশীলতা পছন্দ করেন। আমরা যদি একটু উদার হই তাহলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র বেশ উপকৃত হতে পারে। আল্লাহ আমাদের মাঝে উদারতা, প্রশস্ততা ও ক্ষমাশীলতার গুণ দান করুণ এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা দান করুণ।

এ সম্পর্কীয় আল্লাহর দু’টি বাণী:-

سَارِعُوٓا إِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوٰتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِين

الَّذِينَ يُنفِقُونَ فِى السَّرَّآءِ وَالضَّرَّآءِ وَالْكٰظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

তোমরা তোমাদের মালিকের ক্ষমা পাওয়ার কাজে (একে অপরের সাথে) প্রতিযোগিতা করো আর সেই জান্নাতের জন্যও (প্রতিযোগিতা করো), যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবী সমান, আর এটি মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে- যারা ব্যয় (দান) করে সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায়, যারা রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল ও কোমল। আর আল্লাহ তো কল্যাণকামীদেরই ভালোবাসেন। ( সুরা আলে ইমরান ১৩৩-১৩৪।)

যদি তোমরা কাউকে ক্ষমা করে দাও:

إِن تُبْدُوا خَيْرًا أَوْ تُخْفُوهُ أَوْ تَعْفُوا عَن سُوٓءٍ فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ عَفُوًّا قَدِيرًا

ভালো কাজ তোমরা প্রকাশ করো কিংবা তা গোপন করো, নো মন্দ অথবা কো কাজের জন্য যদি তোমরা কাউকে ক্ষমা করে দাও, তাহলে তোমরা দেখতে পাবে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও প্রবল শক্তিমান-। ( সুরা আন নিসা: ১৪৯)

ক্ষমা প্রদর্শনে আল্লাহর নির্দেশ:

خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجٰهِلِينَ

তুমি ক্ষমা প্রদর্শন কর এবং ভালো কাজের আদেশ দাও। আর মূর্খদের থেকে বিমুখ থাক। (সূরা আল-আরাফ:১৯৯)

রাসূল সা.এর উদারতা:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ كَانَ لِرَجُلٍ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم سِنٌّ مِنْ الإِبِلِ فَجَاءَهُ يَتَقَاضَاهُ فَقَالَ أَعْطُوهُ فَطَلَبُوا سِنَّهُ فَلَمْ يَجِدُوا لَهُ إِلاَّ سِنًّا فَوْقَهَا فَقَالَ أَعْطُوهُ فَقَالَ أَوْفَيْتَنِي أَوْفَى اللهُ بِكَ قَالَ النَّبِيُّ إِنَّ خِيَارَكُمْ أَحْسَنُكُمْ قَضَاء

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কোন এক ব্যাক্তির একটি বিশেষ বয়সের উট পাওনা ছিল। সে পাওয়ার জন্য আসলে তিনি সাহাবী দের বললেন, তার পাওনা দিয়ে দাও। তাঁরা সে উটের সমবয়সী উট অনেক খোঁজাখুঁজি করলেন। কিন্তু তা পেলেন না। কিন্তু তা থেকে বেশী বয়সের উট পেলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাই দিয়ে দাও। তখন লোকটি বলল, আপনি আমার প্রাপ্য পুরোপুরি আদায় করেছেন; আল্লাহ আপনাকে ও পুরোপুরি প্রতিদান দিন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে পরিশোধ করার বেলায় উদার সেই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যাক্তি। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৩০৫)

ক্ষমা প্রদর্শনে মুর্খদের এড়িয়ে চলা:

وعن ابن عباس رضي الله عنهما قال‏:‏ قدم عيينة بن حصن فنزل على ابن أخيه الحر بن قيس، وكان من النفر الذين يدنيهم عمر رضي الله عنه، وكان القراء أصحاب مجلس عمر رضي الله عنه ومشاورته كهولاً كانوا أو شباناً، فقال عيينة لابن أخيه ‏:‏ يا ابن أخي لك وجه عند هذا الأمير فاستأذن لي عليه، فاستأذن فأذن عمر‏.‏ فلما دخل قال‏:‏ هِىَ يا ابن الخطاب، فوالله ما تعطينا الجزل ولا تحكم فينا بالعدل، فغضب عمر رضي الله عنه حتى همّ أن يوقع به، فقال له الحر‏:‏ يا أمير المؤمنين إن الله تعالى قال لنبيه صلى الله عليه وسلم‏:‏ ‏{‏خذ العفو وأمر بالعرف وأعرض عن الجاهلين‏}‏ ‏(‌‌‏الأعراف ‏:‏198‌‌‏)‌‏.‏ وإن هذا من الجاهلين، والله ما جاوزها عمر حين تلاها، وكان وقافاً عند كتاب الله تعالى‏.‏ ‏(‌‌‏رواه البخاري‌‌‏)‏ ‏.‏

ইবনু আব্বাস থেকে বর্ণিতঃ

উয়াইনাহ ইবনু হিসন এলেন এবং তাঁর ভাতিজা হুর্র ইবনু কাইসের কাছে অবস্থান করলেন। এই (হুর্র) উমার (রাঃ)-এর খেলাফত কালে ঐ লোকগুলির মধ্যে একজন ছিলেন যাদেরকে তিনি তাঁর নিকটে রাখতেন। আর কুরআন বিশারদগণ বয়স্ক হন অথবা যুবক দল তাঁরা উমার (রাঃ)-এর সভাষদ ও পরামর্শদাতা ছিলেন। উয়াইনাহ তাঁর ভাতিজাকে বললেন,হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র! এই খলীফার কাছে তোমার বিশেষ সম্মান রয়েছে। তাই তুমি আমার জন্যে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চাও।’ ফলে তিনি অনুমতি চাইলেন। সুতরাং উমার তাকে অনুমতি দিলেন। অতঃপর যখন উয়াইনাহ ভিতরে প্রবেশ করলেন, তখন উমার ((রাঃ))কে বললেন,  হে ইবনু খাত্ত্বাব! আল্লাহর কসম! আপনি আমাদেরকে পর্যাপ্ত দান দেন না এবং আমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করেন না!

(এ কথা শুনে) উমার (রাঃ) রাগান্বিত হলেন। এমনকি তাকে মারতে উদ্যত হলেন। তখন হুর্র তাঁকে বললেন, হে আমীরুল মু’মেনীন! আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে বলেন, তুমি ক্ষমাশীলতার পথ অবলম্বন কর। ভাল কাজের আদেশ প্রদান কর এবং মূর্খদিগকে পরিহার করে চল।( সূরা আল আরাফ ১৯9 আয়াত) আর এ এক মূর্খ।আল্লাহর কসম! যখন তিনি (হুর্র) এই আয়াত পাঠ করলেন, তখন উমার (রাঃ) একটুকুও আগে বাড়লেন না। আর তিনি আল্লাহর কিতাবের কাছে (অর্থাৎ তাঁর নির্দেশ শুনে) সত্বর থেমে যেতেন। (রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৫১)

আল্লাহ আমাদের মাঝে উদারতা, প্রশস্ততা ও ক্ষমাশীলতার গুণ দান করুণ। আমীন

 

মো.ইয়াছিন আরাফাত

এডমিন,বাংলাদেশ দাওয়াহ সার্কেল

খতিব,গোলারপাড় জামে মসজিদ,ফেনী।

 

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

Verified by MonsterInsights