সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

রমজান মাস এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

রমজান মাস এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

✪রমজান মাস এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

-মো: মাহী উদ্দিন ফয়সাল

শিক্ষার্থী, নাজরান ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।

সকল প্রশংসা জগত সমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ সুবহানাহু

ওয়াতাআ’লার জন্য, যিনি আমাদেরকে অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। তাঁর

অসংখ্য নিয়ামতগুলোর একটি হলো রমজান মাস। এই রমজান মাস

মুসলমানদের নিকট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। রমজান মাসের

আগমনে আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ (সা:) অতন্ত আনন্দিত হতেন। রমজান মাস

আগমন করলে আল্লাহর হাবীব (সা:) সাহাবাদের মাঝে এভাবে ঘোষণা

দিতেন:

أتاكم رمضان شهر مبارك.

অর্থাৎ, তোমাদের নিকট বরকতময় রমজান মাস আগমন করেছে।”

এই রমজান মাস অন্যান্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস।

এখন প্রশ্ন হলো কেন এই রমজান মাস অন্যান্য মাসের চেয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ?

রমজান মাস এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার বহু কারণ রয়েছে। তার মধ্যে

উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ নিম্মে আলোচনা করা হলো:

রমজান মাসে রোজা পালন ফরজ: আমরা প্রতি মাসেই কিছুনা কিছু রোজা

রেখে থাকি। সেগুলো সুন্নাত কিংবা নফল হিসেবে রেখে থাকি, কিন্তু রমজান

মাসের রোজাকে আল্লাহ তায়ালা ফরজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা

পবিত্র কুরআন আল কারীমে ইরশাদ করেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَیْكُمُ الصِّیَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَۙ

“ অর্থাৎ, হে ইমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে,

যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। আশা করা

যায় তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।”

 [সুরা বাকারাহ: ১৮৩]

রমজান মাসে রোজা পালন করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ

করেন:

فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْیَصُمْهُ.

“ অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসে উপনীত হয় সে যেন রোজা

রাখে। [সুরা বাকারাহ: ১৮৫]

কুরআন আল কারীমের পাশাপাশি আল্লাহর হাবীব বিশ্বনবী (সা:) রমজানের

রোজাকে ইসলামের পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির একটি বলে আখ্যায়িত

করেছেন। রাসূল (সা:) হাদীস শরীফে বলেন,

بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ.

“অর্থাৎ, ইসলাম পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তার মধ্যে একটি

হল .(وَصَوْمِ رَمَضَانَ)রমজানের রোজা।

 [সহীহুল বুখারী: ৮; বর্ণনাকারী: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:)]

ঐশীগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল: রমজান এমন একটি মাস যে মাসে

আল্লাহ তায়ালা মানবতার মুক্তির দিশারী ঐশীগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল

করেছেন। আলাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন,

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِیْۤ اُنْزِلَ فِیْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَ الْفُرْقَانِ.

“অর্থাৎ, রমজান মাস,এ মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানব

জাতির জন্য হেদায়াত এবং হক ও বাতিলের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্য করে

দেয়।”  [সুরা বাকারাহ: ১৮৫]

আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন,

وَ الْكِتٰبِ الْمُبين. اِنَّاۤ اَنْزَلْنٰهُ فِیْ لَیْلَةٍ مُّبٰرَكَةٍ اِنَّا كُنَّا مُنْذِرِیْنَ.

“অর্থাৎ,শপথ সুস্পষ্ট (কুরআনের) কিতাবের। আমি একে নাজিল করেছি

এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।”  [সুরা দুখান:২-৩]

খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের দরজা সমূহ: পবিত্র এই রমজান মাস আগমন

করলে এই মাসের সম্মানে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেন

এবং জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেন এবং শয়তানদেরকে আবদ্ধ

করে ফেলেন।

এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে আল্লাহর হাবীব (সা:) ইরশাদ করেন,

إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ وَصُفِّدَتِ

الشَّيَاطِينُ.

;অর্থাৎ,যখন রমযান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে

দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে

শিকলে বন্দী করা হয়।  [ সহীহ মুসলিম : ১০৭৯; বর্ননাকারী: হযরত আবু হুরায়রা (রা:)

জাহান্নাম থেকে নাজাতের মাস: আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসের প্রতি

রাতেই অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিয়ে থাকেন। রাসূল (সা:)

বলেন,

إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ، وَمَرَدَةُ الجِنِّ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، فَلَمْ

يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ، وَفُتِّحَتْ أَبْوَابُ الجَنَّةِ، فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ، وَيُنَادِي مُنَادٍ: يَا بَاغِيَ الخَيْرِ أَقْبِلْ، وَيَا

بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ، وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ، وَذَلكَ كُلُّ لَيْلَةٍ

‘যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে তখন শয়তান ও দুষ্ট জিনদের

শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এর

একটি দরজাও তখন আর খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে

দেওয়া হয় এবং এর একটি দরজাও তখন আর বন্ধ করা হয় না। (এ মাসে)

একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী!

অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত! বিরত হও। আর বহু লোককে আল্লাহ তাআলার

পক্ষ থেকে এ মাসে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক

রাতেই এরূপ থেকে থাকে।’

 [সুনান আত তিরমিজি:৬৮২; বর্ণনাকারী: আবু হুরায়রা (রা:)]

হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রজনী: রমজান মাসে এমন একটি রজনী

রয়েছে যে রজনী হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আর সে রজনী হলো

লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

اِنَّاۤ اَنْزَلْنٰهُ فِیْ لَیْلَةِ الْقَدر -وَ مَاۤ اَدْرٰىكَ مَا لَیْلَةُ الْقَدْرِؕ- لَیْلَةُ الْقَدْرِ خَیْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍؕؔ.

“আমি একে (কুরআনকে) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি

জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হলো হাজার রাতের চেয়েও

উত্তম।”  [সুরা কদর: ১-৩]

রাসূল (সা:) এ রাতের সুসংবাদ দিয়ে বলেন,

قَدْ جَاءَكُمْ شَهر رَمَضَانُ، شَهْرٌ مُبَارَكٌ،…… فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ

حُرِمَ.

“ অর্থাৎ,তোমাদের কাছে রমজান মাস উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বরকতময়

মাস।…… এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে

ব্যক্তি সে রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল সে প্রকৃত বঞ্চিত রয়ে গেল।’

 [সুনান আন নাসাঈ:২১০৬; বর্ণনাকারী: হযরত আবু হুরায়রা (রা:)]

দোয়া কবুলের মাস: মাহে রমজান দোয়া কবুলের মাস। আল্লাহ

রোজাদারদের গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে নতুন জীবন লাভ করার সুযোগ সৃষ্টি

করে দিয়েছেন। রমজান মাসে দোয়া কবুলের কথা উল্লেখ করে রাসূল (সা:)

বলেন,

ثَلَاثَةٌ لَا تُرَدُّ دَعْوَتُهُمْ الْإِمَامُ الْعَادِلُ وَالصَّائِمُ حَتَّى يُفْطِرَ وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ.

“অর্থাৎ, তিন ব্যক্তির দোয়া ফেরত দেওয়া হয় নাঃ ন্যায়পরায়ণ শাসক,

রোযাদার যতক্ষণ না ইফতার করে এবং মজলুমের দোয়া।

 [ সুনান ইবনে মাজাহ:১৭৫২; বর্ণনাকারী: হযরত আবু হুরায়রা (রা:)]।

গুনাহ মাফের মাস: রমজান মাস গুনাহ মাফের মাস। এ মাসে আল্লাহ

তায়ালা এত বেশি বান্দার গুনাহ মাফ করেন যা অন্য মাসে করেন না। রাসূল

(সা:) হাদীস শরীফে ইরশাদ করেন,

رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ دَخَلَ عَلَيْهِ رَمَضَانُ ثُمَّ انْسَلَخَ قَبْلَ أَنْ يُغْفَرَ لَهُ .

“অর্থাৎ, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক, যার জীবনে রমযান মাস এল

কিন্তু তাকে ক্ষমাপ্রাপ্ত না করেই তা অতিবাহিত হয়ে গেল।

 [ সুনান আত তিরমিজি: ৩৫৪৫; বর্ণনাকারী: হযরত আবু হুরায়রা (রা:)]।

আল্লাহর নিজ হাতে প্রতিদান প্রদান: রোজা একমাত্র ইবাদত, যার

প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা নিজের হাতে বান্দাহকে প্রদান করবেন। রাসূল

(সা:) বলেন, আল্লাহ তায়ালা হাদীসে কুদসীতে বলেছেন,

كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلاَّ

الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ .

“ অর্থাৎ, মানব সন্তানের প্রতিটি নেক কাজের সাওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশ

গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। মহান আল্লাহ বলেন, “কিন্তু সিয়াম (রোজা)

আমারই জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিফল দান করব।”

 [ সহীহ মুসলিম: ১১৫১; বর্ণনাকারী: হযরত আবু হুরায়রা (রা:)]

ইহকাল ও পরকালে সুখ- শান্তি লাভের উপায় রোজা: রমজান মাসে রোজা

আদায়ের মাধ্যমে রোজাদার ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি লাভ করতে

পারে। রোজাদার পরকালে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করবে। রাসূল (সা:)

বলেন,

لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ.

“অর্থাৎ, রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দঃ একটি আনন্দ তার ইফতারের

সময় এবং আরেকটি আনন্দ রয়েছে তার প্রভু আল্লাহর সাথে তার

সাক্ষাতের সময়।”  [ সুনান ইবনু মাজাহ : ১৬৩৮; বর্ণনাকারী: হযরত আবু হুরায়রা (রা:)]

 

উপরিউক্ত আয়াত ও হাদীস গুলো থেকে বুঝা যায় রমজান মাস আল্লাহর

পক্ষ থেকে মুসলমানদের জন্য মহান নেয়ামত এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি

মাস। তাই আমাদের উচিত এখন থেকেই রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং

পরিকল্পনা করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আল্লাহর নৈকট্য

অর্জনের তাওফিক দান করুন।(আমিন)

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

Verified by MonsterInsights