দ্বীনি দাওয়াত আল্লাহর দিকে আহ্বানে যে মুক্তির পথ
দ্বীনি দাওয়াত ও ইসলামী আল্লাহর দিকে আহ্বানে
রদ্বীনি দাওয়াত এর মাধ্যমে কুরআনুল কারিমের শিক্ষা ও রাসূলুল্লাহ সা:-এর সুন্নাহ তথা ইসলামের শিক্ষা মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়। যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ, সাহাবাগণ, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন, মুজতাহিদিন, মুহাদ্দিসিন, ওলি-আউলিয়া, পীর-মাশায়েখ ও আলেমগণ দ্বীনি দাওয়াতের ধারা অব্যাহত রাখেন। রাসূলুল্লাহ সা: দ্বীনের প্রচার-প্রসারের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। দ্বীনি দাওয়াতের কাজ নায়েবে রাসূল হিসেবে আলেম-উলামাদের ওপর বর্তায়। ওয়ারিসাতুল আম্বিয়া হিসেবে আলেমদের দ্বীনি দাওয়াতের কাজ এগিয়ে নিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীনি দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি লাভের সুযোগ নেই।
দ্বীনি দাওয়াত কি :
‘দাওয়াহ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো আহ্বান করা, আকৃষ্ট করা, তালাশ করা। পারিভাষিক অর্থে দ্বীনি দাওয়াত হলো আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের দিকে মানুষকে আহ্বান করা, দ্বীন প্রচার করা এবং জীবনে তার চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করা। জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামের দিকে মানুষকে হিকমতের সাথে দাওয়াত দেয়ার নামই হলো দ্বীনি দাওয়াত।
দ্বীনি দাওয়াত ফরজ :
দ্বীনি দাওয়াতের কাজ ফরজ। হক্কানি আলেম-উলামা দ্বীনি দাওয়াত ফরজ হওয়ার ব্যাপারে একমত। উলামায়ে কেরামের মধ্যে অনেকে বলেছেন, দ্বীনি দাওয়াত ফরজে কেফায়া। কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি মানুষকে সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে বিতর্ক করো উত্তম পন্থায়।’ (সূরা নাহল ১৬ : ১২৫)।
ইসলামী দাওয়াতের বৈশিষ্ট্য :
দ্বীনি দাওয়াত ইসলামি আকিদার অন্তর্ভুক্ত। দ্বীনি দাওয়াতের কাজের অর্থ আল্লাহর নির্দেশ সরাসরি প্রতিপালন করা। সূরা নাহলে পূর্বোল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা দ্বীনি দাওয়াতের কাজের জন্য সরাসরি আহ্বান জানিয়েছেন। এটি ফরজ কাজ। এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই।
নবী-রাসূলগণ দ্বীনি দাওয়াতের কাজে আঞ্জাম দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় যুগে যুগে দ্বীনি দাওয়াতের কাজ অব্যাহত আছে। আল্লাহ প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা প্রেরণ করেছেন। কুরআন মজিদে বলা হয়েছে, ‘আমি তোমাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে। এমন কোনো সম্প্রদায় নেই, যার নিকট সতর্ককারী প্রেরিত হয়নি।’ (সূরা ফাতির ৩৫ : ২৪)।
দ্বীনি দাওয়াত
দ্বীনে দাওয়াত হলো- নসিহত, উপদেশ। যুগে যুগে সব সময় সর্বাবস্থায় ইসলামের শিক্ষা ও আদেশকে মানুষের সামনে দ্বীনি দাওয়াতের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। ইসলাম প্রচার-প্রসারের জন্য দ্বীনি দাওয়াতের কাজ সর্বাগ্রে বিবেচনায় আনতে হবে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন- ‘দ্বীন ইসলামের পরিচয় হলো নসিহত, পারস্পরিক কল্যাণ কামনা।’ (মুসনাদে আহমদ, প্রথম খণ্ড. পৃ. ৩৫১, নম্বর ৩২৮১)। সুতরাং দ্বীনি দাওয়াত হলো ইসলামের প্রতীক।
দ্বীনি দাওয়াতের কাজে সহযোগিতা করা, সাড়া দেয়া ফরজ এবং বিরত থাকা মুনাফেকির লক্ষণ। দ্বীনি দাওয়াতের কাজ আঞ্জাম দেয়া যেমন ফরজ, তেমনি দ্বীনি দাওয়াতের কাজে সম্পৃক্ত হওয়াও ফরজ। কুরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! রাসূল যখন তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে আহ্বান করে, যা তোমাদের প্রাণবন্তু করে, তখন আল্লাহ ও রাসূল সা:-এর আহ্বানে সাড়া দাও এবং জেনে রাখো, আল্লাহ মানুষ এবং তার অন্তরের মধ্যবর্তী হয়ে থাকেন এবং তারই নিকট তোমাদের একত্রিত করা হবে।’ (সূরা আনফাল : ২৪)।
দ্বীন প্রচারকগণের প্রয়োজনীয় গুণাবলি :
হিকমত অর্জন: দ্বীনের দাওয়াত দানকারীদের হিকমত অর্জন করতে হবে। যার দ্বারা মানুষের জ্ঞান ও অন্তর প্রভাবিত হয় এবং মানুষ দ্রুত যা গ্রহণ করে, সে ধরনের মেধাকে হিকমত বলে।
মাওয়াইজে হাসানা: দাওয়াত দানকারীকে দাওয়াতের বিষয়বস্তু আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করতে হবে, যাতে শ্রোতার অন্তর প্রশান্তি বা আধ্যাত্মিকতায় ভরে যায়।
কাওলে-ই লায়িন: দ্বীন প্রচারককে রূঢ় বা কঠোরচিত্ত হলে চলবে না। তাকে দয়া, সৌহার্দ্য ও নম্রতা দেখাতে হবে।
তালিফ-ই কালব: দাইর অন্যের সন্তুষ্টি অর্জনে সমতা থাকতে হবে।
নির্মল চরিত্র: দাইকে নির্মল চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। তার মধ্যে সর্বপ্রকার চারিত্রিক ও মানবিক গুণাবলির প্রতিফলন থাকতে হবে।
দাওয়াতের মূলনীতি :
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দ্বীনি দাওয়াতের কাজ পরিচালনা করতে হবে। দাওয়াত দেয়ার সময় ইসলাম পরিচিতি, ইসলামের মৌলিক স্তম্ভ, প্রাথমিক হুকুম-আহকাম, আচার-আচরণ (মুয়ামালাত), সামাজিক সম্পর্ক (মুয়াশাবাত), অর্থনীতি (ইকতেসাদিয়াত) চারিত্রিক ও মানবিক গুণাবলি ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরতে হবে। সেই সাথে ইসলামের সৌন্দর্য, সার্বজনীনতা ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।
দাওয়াতের জ্ঞান :
দাওয়াত দানকারীকে পবিত্র কুরআন-হাদিসের জ্ঞান লাভ করতে হবে। দাওয়াতের পদ্ধতি ও কৌশল জানা জরুরী। ঈমান, আমল, আখলাক ও ইহসান সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করতে হবে। মৌলিক ইবাদতগুলো প্রতিপালনে নিষ্ঠাবান ও নিয়মানুবর্তী হতে হবে। লোভ, মোহ, হিংসাবিদ্বেষ, গিবত, অপবাদ ইত্যাদি মন্দ স্বভাব থেকে নিজেকে কলুষমুক্ত করে এখলাস, আমানতকারী, বিনয়, নম্রতা, সততা ও ন্যায়পরায়ণতা দিয়ে চরিত্রকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ দ্বারা নিজেকে সুশোভিত করতে হবে। সব কাজে আন্তরিকতা ও আধ্যাত্মিকতার প্রতিফলন থাকতে হবে। আলেম তথা নায়েবে রাসূল সা: হতে হলে একজন ব্যক্তির শরিয়ত ও তরিকত সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
লেখক: মাওলানা মো: নুর নবী
আরবি প্রভাষক, রমারখিল আলিম মাদরাসা, দত্তপাড়া, লক্ষ্মীপুর
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.