সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

কেন মুসলিম পরিবারের সন্তানরা ইসলাম মানে না ?

কেন মুসলিম পরিবারের সন্তানরা ইসলাম মানে না?

আমরা প্রায়ই শুনি ও দেখি পিতা-মাতা দ্বীনদার অথচ তাদের সন্তান-সন্ততি দ্বীন মানে না বা অনেকেই আছেন দ্বীনের কট্টর দুশমন। অথচ মুমিনদের প্রার্থনা, وَ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَا ہَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّ اجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا ﴿۷۴অর্থাৎ:হে আমাদের রব! তুমি আমাদের স্ত্রী (স্বামী) ও সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম- (সূরা আল ফুরকান ৭৪)। একজন মুসলিম পিতা-মাতার কাছে তাদের সন্তানের ইসলামের প্রতি উদাসীন বা বিরোধী হওয়া বড়ই কষ্টের।

এমন পিতা-মাতা খুব কমই আছে যারা চায় তাদের পুঁজি (সন্তান-সন্ততি) সব ব্যাংকে জমা থাকুক এবং যখন যেটা প্রয়োজন হবে কাজে লাগাবে। ইসলাম বিজয়ী হলে ইসলামের পক্ষের সন্তানকে সামনে ধরবে, আবার ইসলামের শত্রুরা বিজয়ী হলে ইসলাম না মানা ছেলেকে এগিয়ে দিবে। এমন চরিত্র কারো যদি থেকে থাকে তাহলে সে একজন নিরেট মুনাফিক বৈ আর কেউ নন। ঈমান গ্রহণকারী একজন ব্যক্তির প্রথম কাজ হলো তার স্ত্রী/স্বামী, সন্তান-সন্ততি ও নিকটবর্তী লোকজনকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়া।

আল্লাহর বাণী, يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا قُوٓا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلٰٓئِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُونَ اللَّهَ مَآ أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়।( সূরা আত্ তাহরীম- ৬)। রসূল (সা) আল্লাহ পাকের সেই নির্দেশ অনুসারে প্রথমেই তাঁর পরিবার-পরিজন ও নিকটতম লোকদের নিকট দাওয়াত প্রদান করেছিলেন। রসূল (সা)-এর দাওয়াতে প্রথম ঈমান এনেছিলেন তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী ও আমাদের মা খাদিজা (রা)। তারপর তাঁর পরিবারের সদস্য কিশোর আলী (রা) ও প্রিয় বন্ধু আবু বকর (রা)।

ঘরে যদি স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি ইসলামের পক্ষে হয়ে থাকে তবে সেটি হয় বড় প্রশান্তির; সেটি হয় পিতা-মাতার পরম চাওয়া ও পাওয়া। সন্তান-সন্ততির গড়ে ওঠার ভিত্তি হলো পরিবার। পারিবারিক শিক্ষাই সন্তানকে শিশু অবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে ইসলামের পথে চলার ক্ষেত্রে প্রেরণা যোগায়।

রসূল (সা)-এর একটি হাদিস-وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : مَا مِنْ مَوْلُودٍ اِلَّا يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِه وَيُنَصِّرَانِه أَوْ يُمَجِّسَانِه كَمَا تُنْتَجُ الْبَهِيمَةُ بَهِيمَةً جَمْعَاءَ هَلْ تُحِسُّونَ فِيهَا مِنْ جَدْعَاءَ ثُمَّ يَقُولُ : (فِطْرَةَ اللهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللهِ ذلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ). مُتَّفَقٌ عَلَيْهِআবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক সন্তানই ইসলামী ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইয়াহূদী, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে ফেলে। যেরূপে চতুষ্পদ জন্তু পূর্ণাঙ্গ জন্তুই জন্ম দিয়ে থাকে, এতে তোমরা কোন বাচ্চার কানকাটা দেখতে পাও কি?

এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ (আরবী) আল্লাহ্‌র ফিতরাত, যার উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্‌ তাআলার সৃষ্টি রহস্যে কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল প্রতিষ্ঠিত দীন। (সূরা আর রূম ৩০ : ৩০)।(সহীহ : বুখারী ১৩৫৮)। এতে বোঝা যায়, সন্তান কেমন হবে তা বহুলাংশে নির্ভর করে তার পিতা-মাতার আচরণ ও পারিবারিক পরিবেশের ওপর। সন্তানের লালন-পালন, লেখাপড়া, ভালো চাকুরি বা প্রতিষ্ঠা লাভ বা বিয়ে-সাদীর ক্ষেত্রে বাবা-মা যতখানি আন্তরিক, নৈতিক চরিত্র তথা দ্বীন শিক্ষা দানে ততখানি আন্তরিকতা অনেকের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না।

অথচ রসূল (সা) বলেছেন, أَيُّوبُ بْنُ مُوسَى، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ مَا نَحَلَ وَالِدٌ وَلَدًا مِنْ نَحْلٍ أَفْضَلَ مِنْ أَدَبٍ حَسَنٍ ‏”‏ ‏.‏ আইউব ইবনু মূসা (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন পিতা তার সন্তানকে উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়ার চেয়ে বেশী উত্তম কোন জিনিস দিতে পারে না।(জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৯৫২)। নৈতিক শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে নামায অনন্য।

পারিবারিক নামাজ ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করে বলেন, عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ أَتَيْتُ النَّبِيَّ فِي نَفَرٍ مِنْ قَوْمِي فَأَقَمْنَا عِنْدَهُ عِشْرِينَ لَيْلَةً وَكَانَ رَحِيمًا رَفِيقًا فَلَمَّا رَأَى شَوْقَنَا إِلَى أَهَالِينَا قَالَ ارْجِعُوا فَكُونُوا فِيهِمْ وَعَلِّمُوهُمْ وَصَلُّوا فَإِذَا حَضَرَتْ الصَّلاَةُ فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أَحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ أَكْبَرُكُمْ.মালিক ইব্‌নু হুয়াইরিস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, আমি আমার গোত্রের কয়েকজন লোকের সঙ্গে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট এলাম এবং আমরা তাঁর নিকট বিশ রাত অবস্থান করলাম। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অত্যন্ত দয়ালু ও বন্ধু বৎসল ছিলেন। তিনি যখন আমাদের মধ্যে নিজ পরিজনের নিকট ফিরে যাওয়ার আগ্রহ লক্ষ্য করলেন, তখন তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা পরিজনের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস কর, আর তাদের দ্বীন শিক্ষা দিবে এবং সালাত আদায় করবে। যখন সালাত উপস্থিত হয়, তখন তোমাদের কেউ আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে ইমামতি করবে।(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬২৮)|

নামাযের উপকারিতা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন, اتْلُ مَآ أُوحِىَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتٰبِ وَأَقِمِ الصَّلٰوةَ ۖ إِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنكَرِ ۗ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত কর এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর।
(সূরা আল-আনকাবূত:৪৫) নিশ্চয়ই নামায মানুষকে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে রাখে। আল্লাহর রসূল (সা) সন্তানকে নামায শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে জোর তাগিদ দিয়েছেন।

আমাদের মসজিদগুলো সব শিশুশূন্য। মনে হয় যেন এ জাতি বন্ধ্যা হয়ে গেছে। অথচ রসূল (সা) ইরশাদ করেনوَعَن عَمرِو بنِ شُعَيبٍ، عَن أبِيهِ، عَن جَدِّهِ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مُرُوا أوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاةِ وَهُمْ أبْنَاءُ سَبْعِ سِنينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أبْنَاءُ عَشْرٍ، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ في المضَاجِعِ».حديث حسن رواه أَبُو داود بإسناد حسن
আমর ইবনু শুআইব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততিদেরকে নামাযের আদেশ দাও; যখন তারা সাত বছরের হবে। আর তারা যখন দশ বছরের সন্তান হবে, তখন তাদেরকে নামাযের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।(রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৩০৬ )। সন্তান স্কুলে না গেলে বা লেখাপড়ায় গাফিলতি করলে আমরা যতখানি পেরেশানি অনুভব করি, নামায না পড়লে মনে হয় না তেমন কষ্ট অনুভব করি। অথচ এই সন্তান জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের পাশাপাশি যদি অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে তখন সে তার দুনিয়া ও আখিরাত দুটি হারায়। সন্তানদের নৈতিক অধপতন বা ইসলামবৈরী আচরণের কিছু কারণ এখানে উল্লেখ করতে চাই।

১. ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ না করা :
আমাদের সমাজে এমন অনেকেই আছেন যারা আচার-আচরণে অত্যন্ত ধার্মিক। নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাতসহ সকল আনুষ্ঠানিক ইবাদত-বন্দেগীতে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান। কিন্তু সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে ইসলামকে মেনে চলার ক্ষেত্রে বেশ দুর্বল। অথচ আল্লাহ তায়ালার নিকট একটি জীবন ব্যবস্থা
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلٰمُ নিশ্চয় আল্লাহর নিকট দীন( জীবন ব্যবস্থা ) হচ্ছে ইসলাম।
(সূরা আল-ইমরান:১৯) এই শ্রেণির মুসলমানের সন্তানরা সাধারণত সেকুলার ধ্যান-ধারণায় অভ্যস্ত হয়ে থাকে।

২. সন্তানদের সামনে পিতা-মাতাকে আদর্শ হিসেবে পেশ করতে না পরা :
সন্তান পিতা-মাতাকে খুব নিকট থেকে দেখে। ইসলামের দ্বায়ী অথচ তার আচার-আচরণ, লেন-দেনে যতখানি স্বচ্ছতা থাকা দরকার সন্তানরা সেটি না পেলে পিতা-মাতার প্রতি অনাগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং এই অনাগ্রহ অনেক সময় ইসলামের ওপর চলে আসে। আল্লাহর জিজ্ঞাসা- يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُوْنَ. হে ঈমানদারগণ, তোমরা তা কেন বল, যা তোমরা কর না?এটি আল্লাহর কাছে বড়ই ক্রোধ-উদ্রেগকারী বিষয়,যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করে বলেন كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ তোমরা যা বলো তা নিজেরা করো না- সূরা ছফ।

৩.পরিবারে ইসলামের অনুশাসন না মানা :
ঘরগুলোকে কবরখানায় পরিণত না করা প্রসঙ্গে রসূল (সা) নফল নামায ঘরে পড়ার তাগিদ দিয়েছেন। এতে বাচ্চারা বাবা-মাকে অনুসরণ করে নামাযে অভ্যস্ত হতে পারে। অনেক পর্দানশীন মা ছোট্ট মেয়েকে সখ করে পুরুষের পোশাক সার্ট-প্যান্ট বা টাইট পোশাক পরিধান করিয়ে থাকেন। আবার অনেক মাকে দেখা যায় নিজে নেকাব পরিধান করে স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে পর্দাহীন অবস্থায় সাথে নিয়ে চলেন। সেই মেয়ে মারদৃষ্টিতে এখনো ছোট। কিন্তু মেয়ে এভাবে চলায় অভ্যস্ত হলে এক সময় বাবা-মা চাইলেও পর্দা মানাতে সক্ষম হবে না।

৪. হারাম উপার্জন :
আনুষ্ঠানিক ইবাদত পালনে অভ্যস্ত এমন অনেকে আছেন যাদের রুজি হালাল নয়। এমন ধরনের লোকের সন্তানরা সাধারণত বাড়তি অর্থ পেয়ে ইসলাম থেকে দূরে সরে যায়। আল্লাহ তায়ালা উপার্জন সম্বন্ধে বলেন. وَالَّذِينَ كَسَبُوا السَّيِّـَٔاتِ جَزَآءُ سَيِّئَةٍۭ بِمِثْلِهَا وَتَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ۖ مَّا لَهُم مِّنَ اللَّهِ مِنْ عَاصِمٍ ۖ كَأَنَّمَآ أُغْشِيَتْ وُجُوهُهُمْ قِطَعًا مِّنَ الَّيْلِ مُظْلِمًا ۚ أُولٰٓئِكَ أَصْحٰبُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خٰلِدُونَ আর যারা মন্দ উপার্জন করবে, প্রতিটি মন্দের প্রতিদান হবে তারই অনুরূপ; আর লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। আল্লাহর পাকড়াও থেকে তাদের কোন রক্ষাকারী নেই। যেন অন্ধকার রাতের এক অংশ দিয়ে তাদের চেহারাগুলো ঢেকে দেয়া হয়েছে। তারাই আগুনের অধিবাসী, তারা তাতে স্থায়ী হবে।(সূরা ইউনুস:২৭)

৫. পরিবারে সময় না দেয়া :
একজন মানুষের ওপর তার নিজের, স্ত্রী/স্বামী, সন্তান ও পরিবারের হক রয়েছে এবং তাদের হক আদায় দ্বীনেরই অংশ। এই বোধ-উপলব্ধি আমরা অনেক সময় হারিয়ে ফেলি। এমতাবস্থায় পিতা-মাতার সাথে সন্তানের বন্ধন হালকা হয়ে যায় এবং পিতা-মাতাকে বন্ধু হিসেবে না পেয়ে বাইরে বন্ধু তালাশ করে। ইসলামবৈরী হওয়ার ক্ষেত্রে এটিও একটি কারণ।

৬.মডার্ন ডিভাইস:
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে সন্তান-সন্ততি সহ পরিবারের দায়িত্বশীলরা ঘা বাসিয়ে দিচ্ছে সে দিকে, অথচ আমাদের সন্তানরা কি শিখছে! সে দিকে আমাদের ভ্রূক্ষেপ নেয়।যার কারণে হাজারো নৈতিকতা বহির্ভূত কাজে তারা ঝড়িয়ে পড়ছে।ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়ার এটিও একটি অন্যতম কারণ।

৭. রূঢ় আচরণ :
এ-ই প্রসঙ্গে রাসূল (সাঃ) বলেন, وَعَن حَارِثَةَ بنِ وهْبٍ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَقُولُ:«أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأهْلِ النَّارِ ؟ كُلُّ عُتُلٍّ جَوّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
হারেসাহ ইবনে অহাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত করব না কি? (তারা হল) প্রত্যেক রূঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয় দাম্ভিক ব্যক্তি।(সহীহুল বুখারী ৪৯১৮) শাসন করার নামে সন্তানের সাথে পিতা-মাতার রূঢ় ও কর্কশ ব্যবহার অনেক সময় হিতে বিপরিত হয়। পিতা-মাতা যথাযথ দায়িত্ব পালনের পরও অনেক সময় সন্তানরা চোখ শীতলকারী না হয়ে চোখের কাঁটা হয়ে থাকে। অনেক নবী-রসূলের স্ত্রী ও সন্তানরাও তাঁদের কষ্টের কারণ হয়েছিল। নূহ (আ)-এর ছেলে, লুত (আ)-এর স্ত্রী ও আছিয়া (আ)-এর স্বামীর উদাহরণ আমাদের সম্মুখে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আল্লার বাণী : يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوٓا إِنَّ مِنْ أَزْوٰجِكُمْ وَأَوْلٰدِكُمْ عَدُوًّا لَّكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ ۚ وَإِن تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ.
إِنَّمَآ أَمْوٰلُكُمْ وَأَوْلٰدُكُمْ فِتْنَةٌ ۚ وَاللَّهُ عِندَهُۥٓ أَجْرٌ عَظِيمٌ. হে ঈমানদাররা! তোমাদের স্ত্রী (স্বামী) ও সন্তানদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাক। অবশ্য তোমরা যদি তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দাও, তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করো, তাদের মাফ করার নীতি অবলম্বন করো, তাহলে আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি একটি পরীক্ষা বিশেষ । আর কেবলমাত্র আল্লাহর কাছে আছে বিরাট প্রতিদান- (সূরা তাগাবুন ১৪-১৫)।

এখানে আল্লাহ নিজেই স্ত্রী/স্বামী ও সন্তানদের মধ্যে কাউকে শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তাদের থেকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। অর্থাৎ স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির কারণে আমরা যেন ঈমান ও নীতি-নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত না হই। কিন্তু আল্লাহ তাদের সাথে রূঢ় আচরণ করতে বলেননি বা সন্তানকে ত্যাজ্য বা স্ত্রী/স্বামী থেকে বিচ্ছেদ হতে বলেননি। এমনটি করলে তো সংশোধনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বরং আল্লাহ বলেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করতে ও দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করতে এবং বিনিময়ে আল্লাহকে পাওয়া যাকে অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু হিসেবে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক উন্নয়ন ও সন্তানদের সংশোধনের লক্ষ্যে আল্লাহ চান তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করতে ও ক্ষমা করতে।

আল্লাহপাক নবী-রসূলদের দৃষ্টান্ত আমাদের সম্মুখে উপস্থাপন করেছেন। ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا لِّلَّذِينَ كَفَرُوا امْرَأَتَ نُوحٍ وَامْرَأَتَ لُوطٍ ۖ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صٰلِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ اللَّهِ شَيْـًٔا وَقِيلَ ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدّٰخِلِينَ.
যারা কুফরি করে তাদের জন্য আল্লাহ নূহের স্ত্রীর ও লূতের স্ত্রীর উদাহরণ পেশ করেন; তারা আমার বান্দাদের মধ্য হতে দুজন সৎবান্দার অধীনে ছিল, কিন্তু তারা উভয়ে তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, অতঃপর আল্লাহর আযাব হতে রক্ষায় নূহ ও লূত তাদের কোন কাজে আসেনি। বলা হল, তোমরা উভয়ে প্রবেশকারীদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ কর।
(সূরা আত-তাহরীম:১০) নবীর স্ত্রী হয়েও নবীকে অস্বীকার ও শত্রুদের সাথে সম্পর্ক রাখার পর লুত (আ) পরম ধৈর্য অবলম্বন করেছেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব আসার পর লুত (আ) স্ত্রীকে সাথে নিতে চাইলে আল্লাহ স্পষ্ট না করে দেন। ছেলে সম্পর্কে নূহ (আ)-এর আচরণও তেমনি ছিল এবং নৌকায় উঠাতে চাইলে আল্লাহ স্পষ্ট নিষেধ করেন। আছিয়া (আ) ফিরাউনের সকল নিপীড়ন-নির্যাতন নীরবে সহ্য করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত জীবন দিয়েছেন।

আখিরাতে বিশ্বাসী ব্যক্তিবর্গ খুব সহজেই দুনিয়ায় না পাওয়ার বেদনা ও সকল দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে পরম ধৈর্য অবলম্বন করতে পারে। মুমিনদের স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি সব সময় চোখ শীতলকারী নাও হতে পারে। এজন্য হতাশ হয়ে তাদের সাথে রূঢ় আচরণ বা সম্পর্কচ্ছেদ নয়। বরং তাদেরকে হেকমত ও দরদের সাথে আল্লাহর পথে ডাকতে হবে এবং আল্লাহর শেখানো পন্থায় তাঁরই কাছে কাতরভাবে দুআ করতে হবে, وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوٰجِنَا وَذُرِّيّٰتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا আর যারা বলে, হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী(স্বামী) ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন। (সূরা আল-ফুরকান:৭৪)।

 

ইয়াছিন আরাফাত
চীফ এডমিন
বাংলাদেশ দাওয়া সার্কেল
খতিব:গোলার পাড় জামে মসজিদ,ফেনী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

Verified by MonsterInsights