সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম

প্রবন্ধ

শিরক এর আভিধানি অর্থ: 

আরবী অভিধানে শিরক (شرك) শব্দটি বহুবিধ অর্থে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল,

شرك (شرك وشركة)

অর্থ: অংশ নেওয়া, অংশগ্রহণ করা, অংশীদার হওয়া, শরীক হওয়া।

الشَّرْكَةُ وَالشَّرِكَةُ

অর্থ হলো: দুই শরীকের সংমিশ্রণ।

الشرك

অর্থ হলো: অংশ, অংশীদার, অংশীদারত্ব। এর বহুবচন হলো أشراك এবং شركاء

শিরকের পারিভাষিক সংজ্ঞা:

শিরকের দুটি সংজ্ঞা নিম্নে পেশ করা হল:

١ – هو مساواة غير الله بالله فيما هو حق لله.

অর্থাৎ, ‘গায়রুল্লাহ্কে আল্লাহর বৈশিষ্ট্যের সমকক্ষ সাব্যস্ত করা।’

٢ – أن يجعل الإنسان نصيبا لأحد مع الله تعالى في أمر لا يكون إلا لله وحده .

অর্থাৎ, ‘আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট ও সীমাবদ্ধ বিষয়াদীর কোন অংশ মানুষ কর্তৃক আল্লাহ ছাড়া অন্য করো জন্য সাব্যস্ত করা।’

শিরক এর প্রকারভেদ:

শিরক চার প্রকার। যথা:-

(১) শিরক ফিয যাত,

(২) শিরক ফির রুবুবিয়্যাহ্,

(৩) শিরক ফিল উলুহিয়্যাহ্,

(৪) শিরক ফিল আসমা ওয়াস সিফাত।

নিম্নে এগুলোর পরিচয় সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো:

১. শিরক ফিয যাত: 

এর অর্থ হলো আল্লাহর সত্তার ক্ষেত্রে শিরক। আল্লাহ্ এক, তাঁর কোনো শরীক নেই, তাঁর কোনো সন্তান নেই। আল্লাহ্ ব্যতীত আরো ইলাহ, রব আছে বলে বিশ্বাস করা, আল্লাহর সন্তান, বিবি আছে বলে ‘আকীদা পোষণ করা, আল্লাহর সত্তার ক্ষেত্রে শিরক করার অন্তর্ভুক্ত।

২. শিরক ফির রুবুবিয়্যাহ্:  

আল্লাহর কর্তৃত্ব ও ক্ষমতায় অন্য কাউকে অংশীদার বলে বিশ্বাস করা। আল্লাহর কাজে অন্যকে শরীক করা। যেমন: সৃষ্টি করা, জীবন-মৃত্যু দেয়া, বিপদ থেকে উদ্ধার করা, আইন দেয়া, আসমান জমিন পরিচালনা করা ইত্যাদি একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। এ সমস্ত বিষয়ে অন্য কাউকে আল্লাহর সাথে শরিক করা হলো আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে শিরক। যদি কেউ বিশ্বাস পোষণ করে যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ বাঁচাতে পারে, সন্তান দিতে পারে, তাহলে সে আল্লাহর সাথে রুবুবিয়্যাহ এর ক্ষেত্রে শরীক করল। এমনিভাবে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে আইনদাতা বা বিধাতা বলে বিশ্বাস করা। প্রত্যেক শহর চালানোর জন্য একজন শহর কুতুব আছেন, যিনি শহর পরিচালনা করেন এ কথা বিশ্বাস করা। এ সমস্ত বিশ্বাসই আল্লাহর রুবুবিয়্যাহ এর ক্ষেত্রে শরীক করার অন্তর্ভুক্ত। এগুলো আল্লাহর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন,

أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ

অর্থাৎ, “জেনে রাখুন সৃষ্টি ও হুকুম একমাত্র তাঁরই।” (আল ‘আরাফ:৫৪)

৩. শিরক ফিল উলুহিয়্যাহ্: 

‘ইবাদাতে আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করার নাম হচ্ছে শিরক ফিল উলুহিয়্যাহ্। এটাকে শিরক ফিল উবূদিয়্যাহ বা শিরক ফিল ‘ইবাদাহও বলা হয়। এটাই হলো মূল শিরক। জাহেলি যুগে এ শিরকই প্রচলিত ছিল। আল্লাহ তা’আলা নবী-রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন মূলত: তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ্ এর প্রতি দাওয়াত দেওয়া এবং শিরক ফিল উলুহিয়্যাহ্কে নিষেধ করার জন্য।

আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করেছেন,

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ۖ

অর্থাৎ, “আল্লাহর ‘ইবাদাত করা ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি।” (আন নাহল: ৩৬)

শিরক ফিল উলুহিয়্যাহ্ দুপ্রকার। যথা:

ক.

শিরক আল আকবার বা বড় শিরক। এ শিরক হল আল্লাহর সাথে কাউকে তাঁর সমকক্ষ মনে করা। এর মাধ্যমে মুমিন ঈমান থেকে বের হয়ে চিরজাহান্নামী হয়ে যায়। তাওবা ব্যতীত তার মুক্তির কোনো উপায় থাকে না। যেমন: মাজার-কবর ও মূর্তি কেন্দ্রিক শিরক, গায়রুল্লাহর নামে জবাই করা ও মানত করা, গায়রুল্লাহ্কে ডাকা, গায়রুল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা, গায়রুল্লাহর নামে শপথ করা।

ভয়, আশা, তাওয়াক্কুল ও মুহাব্বতের ক্ষেত্রে শিরক, আইন প্রণয়ন, আনুগত্য ও দুনিয়া পরিচালনার ক্ষেত্রে শিরক, জাদু বিদ্যা ও জাদুকর, আররাফ, জ্যোতিষ, কু-লক্ষণে বিশ্বাস, নক্ষত্রের প্রভাবে বিশ্বাস, বিপদ-আপদ থেকে বাঁচার জন্য তাগা, তাবিজ, সুতা, আংটি, ব্রেসলেট ইত্যাদি ব্যবহার করা। রাসূলুল্লাহ- সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর সৃষ্টির ‘আকীদায় শিরক, নবী-রাসূল বা ওলীগণ সর্বত্র হাজির হতে পারেন বলে বিশ্বাস।

খ.

শিরক আল আসগার বা ছোট শিরক। এটিকে  الشرك الخفي  বা গোপন শিরকও বলা হয়। এ ধরণের শিরকের দ্বারা তাওহীদে ত্রুটি সৃষ্টি হয় এবং কখনো কখনো তা বড় শিরক পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ- সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম- সতর্ক করে বলেছেন,

الشرك أخفى من دبيب النمل

অর্থাৎ, “শিরক হলো পীপিলিকার ধীরগতির চলার চেয়েও আরো গোপন।” (মুসনাদে আহমাদ, খন্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ৪০৩)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, “শিরক হলো রাতের আঁধারে কালো মসৃণ পাথরের উপর পীপিলিকার মন্থর গতির চেয়েও আরো সূক্ষ্ম।” (মুসনাদে আহমাদ, খন্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ৪০৩)

কতিপয় ছোট শিরকের উদাহরণ হলো: রিয়া বা লোক দেখানো ‘আমল, সুম’আ বা সুখ্যাতি অর্জনের জন্য ‘আমল, দুনিয়া লাভ করার উদ্দেশ্যে ‘আমল, “لو” বা যদি শব্দের ব্যবহার করে কথা বলা। কোনো কথায় আল্লাহর ইচ্ছার সাথে অন্যের ইচ্ছাকে শরীক করা। যেমন: ما شاء الله وشئت.

৪. শিরক ফিল আসমা ওয়াস সিফাত:

আল্লাহর নাম ও গুণাবলিতে শিরক। আল্লাহর নাম দুই প্রকার। যথা:

ক. আল্লাহর সত্তাগত নাম: আল্লাহর কতিপয় সত্তাগত নাম রয়েছে। এই নামগুলো অন্য কারো নামকরণ করা হলে, তা হবে আল্লাহর সত্তাগত নামের সাথে শিরক।

খ. আল্লাহর গুণবাচক নাম: আল্লাহর কতিপয় গুণবাচক নাম রয়েছে। এই গুণবাচক নামের শিরক হলো দুই প্রকার। যথা:

প্রথম প্রকার:

এমন সমস্ত গুণ যা আল্লাহর মাঝেও রয়েছে এবং মাখলুকের মাঝেও রয়েছে। যেমন: দেখা, শোনা, শক্তি, ক্ষমতা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে মাখলুকের গুণাবলিকে আল্লাহর গুণাবলির সাথে তুলনা করা হলে, আল্লাহর গুণাবলিতে শিরক করার অন্তর্ভুক্ত হবে।

দ্বিতীয় প্রকার:

যে সমস্ত গুণ আল্লাহর জন্য নির্ধারিত, সে সমস্ত গুণে অন্য কাউকে গুণান্বিত করা। যেমন: গায়েব জানা একমাত্র আল্লাহর বৈশিষ্ট্য। অন্য কেউ গায়েব জানে বলে বিশ্বাস করা আল্লাহর গুণাবলিতে শিরক করার অন্তর্ভুক্ত হবে।

শিরকের ভয়বহতা ও পরিণতি

১. শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ :

আল্লাহ শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না। তিনি বলেন,

إِنَّ اللهَ لاَ يَغْفِرُ أَنْ يُّشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيْمًا

‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এ ব্যতীত অন্য সব, যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করল, বস্ত্ততঃ সে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করল’ (আন্ নিসা : ৪৮)।

২. শিরক জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেয় :

শিরক মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন,

إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ.

‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (আল মায়িদাহ :৭২)।

ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِىْ لاَيُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ قُلْتُ وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ قَالَ وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ.

‘আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (রাবী বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, যদি সে যেনা করে এবং চুরি করে থাকে তবুও? তিনি বললেন, যদিও সে যেনা করে এবং চুরি করে থাকে’।

অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

مَنْ لَقِىَ اللهَ لاَيُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَقِيَهُ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ.

‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।

৩. শিরক পূর্বের আমল সমূহ বিনষ্ট করে দেয় :

আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সৎ কাজগুলোকে বৃদ্ধি করে দেন। কিন্তু শিরক বান্দার ভাল আমলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহ বলেন,

وَلَوْ أَشْرَكُوْا لَحَبِطَ عَنْهُم مَّا كَانُواْ يَعْمَلُوْنَ.

‘যদি তারা শিরক করে তবে তাদের আমল সমূহ নষ্ট হয়ে যাবে’ (আল্ আন‘আম:৮৮)।

অন্য আয়াতে তিনি বলেন,

وَلَقَدْ أُوْحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ.

‘তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে যে, যদি তুমি আল্লাহর শরীক স্থির কর, তবে তোমার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে। আর তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আয্ যুমার :৬৫)।

৪. শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ :

বীরা তথা বড় গুনাহের একটি হ’ল শিরক। একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বললেন,

أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ؟ قُلْنَا بَلَى يَارَسُوْلَ اللهِ. قَالَ اَلْإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ.

‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে সংবাদ দিব না? আমরা বললাম, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া’।

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

اِجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوْبِقَاتِ قَالُوْا يَارَسُوْلَ الله وَمَا هُنَّ؟ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِىْ حَرَّمَ اللهُ إِلإَّ بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ وَالتَّوَلِّىْ يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاَتِ الْغَافِلاَتِ وَالْمُمْنِاَتِ.

‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থেকো। ছাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ঐ ধ্বংসাত্মক জিনিসগুলো কি কি? তিনি জবাবে বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা, যাদু করা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন, সূদ খাওয়া, ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা, সরলা নির্দোষ সতী-সাধ্বী মুমিনা মহিলাকে অপবাদ দেওয়া’।[সহীহ বুখারী, ইফা: ২৫৭৮] অন্য হাদীছে রাসূল (স.   )

বলেন, ‘সবচেয়ে বড় গুনাহ তিনটি (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা (২) পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং (৩) মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া’।

৫. শিরক জঘন্যতম পাপ :

যেসব কাজ করলে আল্লাহর আনুগত্যের পরিবর্তে পাপ অর্জিত হয় শিরক তার অন্যতম। শিরককে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) জঘন্যতম পাপ বলে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘যে আল্লাহর সাথে শিরক করল সে জঘন্য পাপ করল’ (আন্ নিসা :৪৮)।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قُلْتُ يَارَسُوْلَ اللهِ أَىُّ الذَّنْبِ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ؟ قَالَ: أَنْ تَجْعَلَ لِلّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ.

‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর নিকট জঘন্যতম পাপ কোন্টি? জবাবে তিনি বললেন, কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ বানানো (শরীক করা), অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’। [ বুখারী, ইফা: ৫৫৭৫]

অতএব খালেছ তাওহীদ বিশ্বাস ও শিরক থেকে বেঁচে থাকা ব্যতীত জান্নাত হাছিল করা সম্ভব নয়। সেকারণে আমাদেরকে আক্বীদার ক্ষেত্রে শিরক মুক্ত তাওহীদ পন্থী এবং আমলের ক্ষেত্রে বিদ‘আত মুক্ত সুন্নাতপন্থী হ’তে হবে।

ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ/আল্লাহর রাস্তায় দান:

فضل الإنفاق في سبيل الله   এই মর্মে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করছেন:

مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ  الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنْفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে,তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত,যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল,সর্বজ্ঞ। যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, আর  ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না,তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোন আশংকা নেই,তারা চিন্তিতও হবে না। (আল বাকারা: ২৬১-২৬২)

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.