সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

রমজান জিজ্ঞাসা – সপ্তম পর্ব

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ! সম্মানিত রোজাদার ভাই- বোনেরা। আশা করছি সুস্থতার সাথে ঈমান ও ইহতেসাবের সাথে পবিত্র রমজান মাস অতিবাহিত করছেন। আপনার সিয়াম সাধনাকে আরো সুন্দর ও পরিপূর্ণ করতে আমরা আপনার মনে জাগ্রত হওয়া রমজান নিয়ে নানা প্রশ্নের সমাধান নিয়ে আপনার নিকট হাজির হয়েছি।  কুরআন হাদিসের দলিল সংবলিত“ রমজান জিজ্ঞাসা” নামক প্রশ্ন উত্তর নিয়ে। আসা করছি আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা আপনার সিয়াম সাধনাকে আরো সৌন্দর্য মন্ডিত করে তুলবে।

রমজান জিজ্ঞাসা – সপ্তম পর্ব

৬১. কোন ব্যক্তি যদি রোজা অবস্থায় ভুলে কোন খাবার বা পানি খেয়ে ফেলে তাহলে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে?

উত্তর: . কোন ব্যক্তি যদি রোজা অবস্থায় ভূলে কোন খাবার বা পানি খেয়ে ফেলে তাহলে তার রোজা নষ্ট হবে না তবে যদি স্মরণ হওয়ার পরেও খেতে থাকে তবে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে। রাসূল স: বলেন:

من نسي وهو صائم فأكل أو شرب فليتم صومه؛ فإنما أطعمه الله وسقاه

অর্থাৎ কোন রোজাদার যদি ভুলে কিছু খায় অথবা পান করে সে যেন তার রোজা অব্যাহত রাখে কেননা আল্লাহ তায়ালাই তাকে খাবার খাওয়ায়েছেন ও পান করিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)

৬২. রোজার ফরজ কয়টি?

উত্তর: রোজার ফরজ দুইটি। ১. ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জাবতীয় পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা।

( সূরা বাকারা: ১৮২)

২. রোজার নিয়ত করা।। ( সূরা বাইয়েনা:০৫) (আবু দাউদ, মুসলিম)

৬২. কোন দিনগুলোতে রোজা রাখা নিষিদ্ধ?

উত্তর:  ১. দুই ঈদের দিন। আলেমগণ এই ব্যাপারে একমত যে, দুই ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। চাই তা ফরজ হোক বা নফল।

২.  আইয়ামে তাশরীকের দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ। অর্থাৎ ঈদুল আজহার পরবর্তী তিন দিনও সব রকম রোজা রাখা হারাম।

৩. শুধু শুক্রবার দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ। কারণ শুক্রবার দিন মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদ। তবে অধিকাংশ আলেমের মতে-এই নিষেধাজ্ঞা দ্বারা হারাম নয় বরং মাকরুহ বুঝানো হয়েছে।

৪. শুধু শনিবারকে রোজার জন্য নির্দিষ্ট করা । ফরজ রোজা, আরাফার রোজা, কাযা, মানত বা নফল রোজা রাখা যাবে। (আবু দাউদ)

৫. সংশয়পূর্ণ  দিনে রোযা রাখা নিষিদ্ধ। রাসূল স: বলেন: সংশয়পূর্ণ দিনে যে ব্যক্তি রোযা রাখে, সে মুহাম্মদ সা: এর বিরুদ্ধাচারণ করে। (আবু দাউদ, তিরমিযি)

৬. সারা বছর রোযা রাখা নিষিদ্ধ।

৭. স্বামী বাড়িতে থাকা অবস্থায় স্ত্রী তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোযা রাখতে পারবেনা। (বুখারী,মুসলিম)

৬৩. সাওমে বীসাল (صَوٛمِ وِصَال)  কি? এর হুকুম কি?

উত্তর: সাহরী ও ইফতার ব্যতীত এক নাগাড়ে রোযা রাখাকে সাওমে বীসাল বলে। এক নাগাড়ে ইফতার ও সাহরী ব্যতিত রোযা রাখা নিষেধ বা হারাম। ( বুখারী ও মুসলিম)

৬৪. সুন্নাত রোজা কী ?

উত্তর: ১.শাওয়াল মাসের ছয় রোযা একটানা বা বিরতি সহকারে রাখা সুন্নাত।

২.হজ্জ রত নয় এমন ব্যক্তির জন্য আরাফার দিন রোজা রাখা সুন্নাত।

৩.মুহাররম ও আশুরার দুটি রোজা রাখা সুন্নাত।

৬৫. নফল রোজা ভাঙ্গা জায়েয?

 নফল রোজা রাখা বা ভাঙ্গার ব্যাপারে ব্যক্তি স্বাধীন। (আহমদ, দার কুতনী)

৬৬. সাহরী না খেলে রোজা হবে?

উত্তর: সাহরী খাওয়া মুস্তাহাব এবং না খেলে কোন গুনাহ হবেনা।

৬৭. ইফতারের পূর্বে রাসূল : কোন দুয়া পড়তেন?

উত্তর : রাসূল স: ইফতারের পূর্বে এই দোয়া পড়তেন:

اَللّٰهُمَّ يَا وَاسِعَ الٛفَضٛلِ اِغٛفِرٛلِيٛ

৬৮. রোজা অবস্থায় কুলি নাকে পানি দেওয়ার বিধান কি?

উত্তর: রোজা অবস্থায় গরগরা করা ও নাকের বাঁশির ভিতর পানি ঢুকানো নিষেধ।

৬৯. রোজা অবস্থায় খাবারের স্বাদ পরীক্ষা করা যাবে?

উত্তর: কোন খাদ্য জাতীয় খাবার ক্রয় অথবা রান্না করার ক্ষেত্রে খাবারের স্বাদ গ্রহণ করে পরখ করা যাবে। (ইবনে আব্বাস রা:)

৭০. প্রশ্ন: রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃত বীর্যপাত ঘটানোর হুকুম কী?

উত্তর: রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃত বীর্যপাত বা হস্তমৈুথুন করলে অথবা স্ত্রী চুম্বনের কারণে বীর্যপাত হলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে এবং এর কাযা করতে হবে। (ফিকহুস সুন্নাহ)

লেখক, হাফেজ, মাও: নুরুল হুদা

কুরআনিক সায়েন্স এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম

খতিব, বায়তুল গফুর জামে মসজিদ, মাদামবিবির হাট, চট্টগ্রাম।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

Verified by MonsterInsights