সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

রমজান জিজ্ঞাসা – পথম পর্ব

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ! সম্মানিত রোজাদার ভাই- বোনেরা। আশা করছি সুস্থতার সাথে ঈমান ও ইহতেসাবের সাথে পবিত্র রমজান মাস অতিবাহিত করছেন। আপনার সিয়াম সাধনাকে আরো সুন্দর ও পরিপূর্ণ করতে আমরা আপনার মনে জাগ্রত হওয়া রমজান নিয়ে নানা প্রশ্নের সমাধান আমরা আপনার নিকট হাজির হয়েছি  কুরআন হাদিসের দলিল সংবালিত“ রমজান জিজ্ঞাসা” নামক প্রশ্ন উত্তর নিয়ে। আসা করছি আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা আপনার সিয়াম সাধনাকে আরো সৌন্দর্য মন্ডিত করে তুলবে।

রমজান জিজ্ঞাসা – পথম পর্ব

১. প্রশ্ন: রমজানের ফজিলতগুলো কিকি?

يأيها الذين ءامنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون  

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন: ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্বপুরুষদের উপর। যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জর করতে পারো। (সূরা বাকারা: ১৮৩)

রাসূল স: ইরশাদ করেন:

من صام رمضان إيمانًا واحتسابًا غفر له ما تقدم من ذنبه، ومن قام ليلة القدر إيمانًا واحتسابًا غفر له ما تقدم من ذنبه

 অর্থ: যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম)

অন্য হাদিসে আছে: যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমযান মাসের রাতে এবাদত করে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

রাসূল স: আরো বলেন:

إذا كان أول ليلة من شهر رمضان صفدت الشياطين، ومردة الجن، وغلقت أبواب النار، فلم يفتح منها باب، وفتحت أبواب الجنة، فلم يغلق منها باب، وينادي مناد: يا باغي الخير أقبل، ويا باغي الشر أقصر، ولله عتقاء من النار، وذلك كل ليلة:

 যখন রমজানের প্রথম রাত আসে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই খোলা হয় না। বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই বন্ধ করা হয় না। এ মাসে এক আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, হে ভালোর অন্বেষণকারী! অগ্রসর  হও। হে মন্দের অন্বেষণকারী! থামো। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে বহু ব্যক্তিকে দোযখ থেকে মুক্তি দেন। আর এটা এ মাসের প্রতি রাতেই হয়ে থাকে। (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)।

২. প্রশ্ন: সিয়াম ফরজ হওয়া সম্পর্কিত আয়াত কি?

উত্তর:

يأيها الذين ءامنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون البقرة: 183

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন: ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্বপুরুষদের উপর। যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জর করতে পারো। (সূরা বাকারা: ১৮৩)

 

. প্রশ্ন: মুসলমানদের উপর সিয়াম কেন ফরজ করা হয়েছে?

উত্তর: তিনটি কারণে ‍সিয়াম ফরজ করা হয়েছে।

ক. মানুষের মাঝে আল্লাহ ভীতি ও তাদের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য। খ. মানুষ যাতে ধৈয্য ধারণ করে তার নফস শয়তান কে পরাজিত করতে পারে। গ. সিয়াম পালনকারী যাতে নিজকে অসহায়-অনাথদের কাতারে ভাবতে পারে।

. কাদের উপর সিয়াম পালন করা ওয়াজিব?

উত্তর: সুস্থ, প্রাপ্ত বয়স্ক, মুকিম ও বিবেকবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর সিয়াম পালন করা ফরজ। সুতরাং কোন অসুস্থ, শিশু, পাগল, মুসাফির ও অমুসলিমদের উপর সিয়াম ফরজ নয়।

. সিয়াম শুদ্ধ হওয়ার শর্তগুলো কিকি?

ক. ঈমান থাকা, খ. হায়েজ ও নিফাস থেকে মুক্ত থাকা। গ. বিবেক থাকা। ঘ. রাতে নিয়ত করা।

. সিয়াম পালন করার জন্য সাহরি খাওয়া কি আবশ্যক?

উত্তর: কেউ ‍যদি সাহরি না খেয়ে সিয়াম পালন করে তার সিয়াম শুদ্ধ হয়ে যাবে, তবে তিনি বিশাল সাওয়াব থেকে মাহরুম হয়ে যাবেন। কেননা রাসূল স: বলেছেন:

حديث أنس بن مالك -رضي الله عنه- أنه قال: قال النبي -صلى الله عليه وسلم– : “تسحروا فإن في السحور بركةمتفق على صحته.

আনাস ইবনে মালিক রা: বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল স: বলেছেন: তোমরা সাহরী করো, নিশ্চয় সাহরীতে বরকত রয়েছে। ( বুখারী ও মুসলিম)

. সাহরী ইফতারের মুসতাহাব সময় কোনটি?

উত্তর: সাহরী দেরিতে বা শেষ সময়ে করাই উত্তম আর ইফতার প্রথম সময়ে করাই উত্তম।

কেননা রাসূল স: বলেছেন:

لا تزال أمتي بخير، ما أخروا السحور وعجلوا الفطرمتفق على صحته.

আমার উম্মত থেকে ততক্ষণ পর্যন্ত বারাকাত দূর হবে না যতদিন পর্যন্ত তারা দেরিতে সাহরী করবে ও তাড়াতাড়ি ইফতার করবে( বুখারী ও মুসলিম)

. প্রশ্ন: সিয়ামরত অবস্থায় কোন আমলগুলো বেশি বেশি করা উত্তম?

কুরআন তেলাওয়াত করা, নফল ইবাদত করা, অত্যাধিক যিকির আযকার করা, কিয়ামুল লাইল করা, মাসনুন দোয়া’ গুলো বেশি বেশি তেলাওয়াত করা, সদকা করা, আল্লাহর রাস্তায় দান করা ইত্যাদি।

. সিয়ামরত অবস্থায় কোন কাজগুলো থেকে বিরত থাকা আবশ্যক?

উত্তর: সিয়ামরত অবস্থায় অযথা অধিক কথা বলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। তাছাড়া মিথ্যা, গীবত, কুটনামী, গালাগালি করা, মানুষকে কষ্ট দেয়া, সুদ-গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা। কেননা রাসূল স: বলেছেন:

من لم يدع قول الزور والعمل به والجهل فليس لله حاجة في أن يدع طعامه وشرابهصحيح البخاري

রাসূল স:বলেছেন যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করল অথচ মিথ্যা কথা ও অন্যায় কাজ পরিহার করতে পারলো না তার পানি ও খাওয়া থেকে বিরত থাকা আল্লাহ তায়ালার কোন প্রয়োজন নেই।

১০. প্রশ্ন:  কেউ যদি কোন রোজাদারকে গালি দেয় বা তার সাথে ঝগড়া করে তবে রোজাদারের করণীয় কি?

উত্তর: রোজাদার তার সাথে ঝগড়া না করে তাকে এড়িয়ে যাবে এবং তাকে বলবে ভাই আমি রোজাদার। রাসুল স: বলেছেন:

فإذا شُتِم الصائم فليقل جهاراً لا سرًّا: “إني صائم أو إني امرؤ صائم”

অর্থাৎ: যখন কোন রোজাদারকে গালি দেওয়া হয় তখন সে সরাসরি বলবে- আমি রোজাদার! (বুখারী)

লেখক, হাফেজ, মাও: নুরুল হুদা

কুরআনিক সায়েন্স এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম

খতিব, বায়তুল গফুর জামে মসজিদ, মাদামবিবির হাট, চট্টগ্রাম।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

Verified by MonsterInsights