সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

ইকামাতে দ্বীন কি ও বিভ্রান্তির পর্যালোচনা

ইকামাতে দ্বীন কী ও ইকামতে দ্বীনের গুরুত্ব

ইকামাতে দ্বীন হলো সিংহাসন, রাষ্ট্রক্ষমতা, মসনদে বসার জন্য নয়; বরং আল-কুরআনকে ক্ষমতায় বসানো। এর অর্থ: শুধুমাত্র রাজনীতিই ইকামাতে দ্বীন, তা নয়। বরং ব্যক্তি পর্যায়, পারিবারিক পর্যায়, সমাজ পর্যায়, রাষ্ট্র পর্যায় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে ইকামাতে দ্বীন।

ইকামাতে দ্বীন নিয়ে বিভ্রান্তি :

দ্বীন হচ্ছে শুধু তাওহীদ, নামায, রোজা, যাকাত ইত্যাদি। এর সাথে রাজনীতি তথা রাষ্ট্রব্যবস্থার কোন সম্পর্ক নেই। তাই রাজনীতি বা রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে ইকামাতে দ্বীনেরও কোন সম্পর্ক নেই। যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা ইকামাতে দ্বীনের অর্থ বুঝেনি। তারা গোমরাহ। কোন নবী রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন না। এমন কি মুসা (আ.)ও না। লোহিত সাগরে ফেরাউন সলীল সমাধিস্থ হওয়ার পর তার পরিত্যক্ত শূন্য সিংহাসনে মুসা একদিনের জন্যও বসেন নি। যারা ইসলামী রাজনীতির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে চায় তারা দুনিয়াতে মার খাবে, পরকালেও মার খাবে।
এই হচ্ছে ইকামাতে দ্বীনের ব্যাপারে মতিউর রহমান সাহেবের বক্তব্যের মূলকথা।

কুরআন-হাদীস ও বাস্তবতার আলোকে তাঁর এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে যার নুন্যতম জ্ঞান আছে, এমন কোন ব্যক্তি এ রকম কথা বলতে পারে না। এট স্পষ্টত ধৃষ্টতা ও বিভ্রান্তি ছাড়া কিছুই নয়। কারণ:

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ইকামাতে দ্বীন :  

لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ ۖ وَأَنزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ….(25)
“আমরা আমাদের রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি সুস্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সাথে নাযিল করেছি কিতাব ও মিযান (দাড়িপাল্লা), যাতে লোকেরা ন্যায় বিচার করতে পারে। আমি লৌহ নাযিল করেছি, যাতে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ” (সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২৫)।
এ আয়াতে দাড়িপাল্লার মাধ্যমে যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে, তা কি রাষ্ট্রব্যবস্থা ব্যতীত সম্ভব? এই প্রসঙ্গটির সাথে লৌহের কি সম্পর্ক? তাও বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। এখানে লৌহ মানে রাষ্ট্রক্ষমতা/লৌহদন্ড। যার সাথে ন্যায়বিচারের সম্পর্ক রয়েছে।

ইকামাতে দ্বীন নিয়ে কুরআনের আয়াত :

 আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা সূরা আল-মায়িদার ৪৪, ৪৫, ৪৭ নং আয়াতে, যারা তাঁর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে হুকুম/শাসন করে না, তাদেরকে কাফির, যালিম, ফাসিক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
(وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ )

ইকামাতে দ্বীন নিয়ে সূরা আল-মায়িদার ৪৮ নং আয়াত :

فَاحْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنَ الْحَقِّ
হে রাসূল, আপনি আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তা দিয়ে বিচার-ফয়সালা/ শাসন করুন। আপনার কাছে যে সত্য এসেছে সে ব্যাপারে ওদের মনগড়া কথাবার্তার অনুসরণ করবেন না”।

সূরা আল-মায়িদার ৪৯ নং আয়াত :

وَأَنِ احْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَن يَفْتِنُوكَ عَن بَعْضِ مَا أَنزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ ۖ“
“হে রাসূল, আপনি আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তা দিয়ে বিচার-ফয়সালা/ শাসন করুন। আপনার কাছে যে সত্য এসেছে সে ব্যাপারে ওদের মনগড়া কথাবার্তার অনুসরণ করবেন না। আল্লাহ আপনার উপর যা নাযিল করেছেন, তার কোন বিষয়ে যেন তারা আপনাকে ফিতনায় ফেলতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন”।

সূরা আন নিসার ১০৫ নং আয়াত :

إِنَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ ۚ وَلَا تَكُن لِّلْخَائِنِينَ خَصِيمًا (105)
“নিশ্চয়ই আমি তোমার উপর সত্যতার সাথে কিতাব নাযিল করেছি। যাতে করে তুমি আল্লাহর দেখানো বিধান দিয়ে লোকদের মধ্যে বিচার ফয়সালা করতে পার। আর তুমি বিশ্বাস ঘাতকদের পক্ষে ওকালতি করবে না”।

ইকামাতে দ্বীন প্রতিষ্ঠা

এসব আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়ে যে, শাসন ব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা বা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা একটি ফরয ইবাদাত। দ্বীনের অলঙ্ঘনীয় শিক্ষা। অতএব, তা বাদ দিয়ে দ্বীন পরিপূর্ণ হতে পারে না। আর যা বাদ দিলে দ্বীন অপূর্ণ থাকে, তা প্রতিষ্ঠা করাও দ্বীন কায়েমের অংশ। উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করাই একমাত্র ইকামাতে দ্বীন, বিষয়টি এ রকম নয়। এ রকম কথা আমার জানা মতে, কেউ বলে নি। বরং এটা ইকামাতে দ্বীনের একটি অংশ তথা ইকামাতে দ্বীনের চূড়ান্ত রূপ ও পরিপূর্ণ বিকাশ।

মানুষ সৃষ্টি উদ্দেশ্য ও ইকামাতে দ্বীন

আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাঁর খলীফা হিসেবে। যেমন আল্লাহ বলছেন: إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً
“নিশ্চয়ই পৃথিবীত আমি খলীফা পাঠাবো” (আল-বাকারাহ:৩০)।
আল্লাহ আরো বলেন –
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلَائِفَ الْأَرْضِ ـ الأنعام: 165 – “তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে খলীফা বানিয়েছেন”। (আল – আন‘আম: ১৬৫)

এখানে খলীফা বলতে যে আল্লাহর খলীফা বোঝানো হয়েছে, তা নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থসমূহে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন: আর এই খিলাফাতের দাবী হলো, ধর্মভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

এজন্যই আল্লাহ দাউদ (আ.) কে বলেছিলেন: يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُم بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَىٰ
“হে দাউদ, আমি তোমাকে পৃথিবীতে খলীফা বানিয়েছি। অতএব, তুমি মানুষের মধ্যে সত্যতার সাথে বিচার-ফয়সালা কর। প্রবৃত্তির অনুসরণ করো ন “। (সূরা সদ: ২৬)।

প্রখ্যাত মুফাসসির ঈমাম কুরতুবী (র) বলেন:
والمعنى بالخليفة هنا ـ في قول ابن مسعود وابن عباس وجميع أهل التأويل ـ آدم عليه السلام وهو خليفة الله في إمضاء أحكامه وأوامره لأنه أول رسول إلى الأرض (تفسير القرطبي ، 1/263، طبعة دارالشعب).
“ইবনু মাসউদ, ইবুন আব্বাস ও সমস্ত কুরআন-বিশ্লেষকদের মতে, এখানে খলীফা (সূরা বাকারা ৩০ নং আয়াতে) হযরত আদম (আ.) কে বোঝানো হয়েছে। তিনিই আল্লাহর হুকুম-আহকাম,বিধি-বিধান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আল্লাহর খলীফা। কারণ, তিনিই যমীনের বুকে প্রথম রাসূল”।

ইবনু কাসীর (র.) বলেন:
قَالَ اِبْن جَرِير فَكَانَ تَأْوِيل الْآيَة عَلَى هَذَا إِنِّي جَاعِل فِي الْأَرْض خَلِيفَة مِنِّي يَخْلُفنِي فِي الْحُكْم بِالْعَدْلِ بَيْن خَلْقِي وَإِنَّ ذَلِكَ الْخَلِيفَة هُوَ آدَم وَمَنْ قَامَ مَقَامه فِي طَاعَة اللَّه وَالْحُكْم بِالْعَدْلِ بَيْن خَلْقه (تفسير ابن كثير، 1/339 مؤسسة قرطبة )
ইবুন যারীর (তাবারী) বলেন, এ মতে এই আয়াতের ব্যাখ্যা হলো, আমি যমীনে আমার পক্ষ থেকে খলীফা পাঠাবো, যে আমার পক্ষ থেকে আমার সৃষ্টির মধ্যে ন্যায় শাসন করবে”। আর সেই খলীফা হলেন আদম এবং যারা আল্লাহর আনুগত্য ও ন্যায় শাসনের ক্ষেত্রে তার স্থলাভিষিক্ত হবে”।

রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইকামাতে দ্বীন :

নবীগণ (স.) দ্বীন ভিত্তিক সমাজ – রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ইকামাতে দ্বীন করেছেন। দাউদ (আ.) এর কথাতো একটু আগেই দেখলাম।  রাসূল (স.) ইরশাদ করেন: كانت بنو إسرائيل تسوسهم الأنبياء كلما هلك نبي خلفه نبي وإنه لا نبي بعدي
“বনী ইসরাইলদেরকে নবীরা শাসন করতেন। একজন নবী যখন মারা যেতেন, তারপর আরেকজন নবী আসতেন। তবে আমার পরে আর কোন নবী আসবে না”। (বুখারী ও মুসলিম)। এই হাদীসে উল্লিখিত تسوس শব্দটি سياسة সিয়াসাহ থেকে উদ্গত। যার অর্থই হলো, রাজনীতি।

মুসা (আ.) এর ব্যাপারে শায়খ মতিউর রহমান বলছেন

তিনি পুনরায় মিশরে যান নি; মিশরের রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করেন নি। এ কথাটাও সর্বজন স্বীকৃত নয়। বরং কুরআনের একাধিক আয়াত থেকে বুঝা যায়, মুসা আ. তাঁর কওম বনী ইসরাইলকে নিয়ে মিশর গিয়েছিলেন এবং মিশরের শাসনক্ষমতাও পরিচালনা করেছিলেন।

যেমন: সূরা আশ-শু‘আরাতে (আয়াত: ৫৭-৫৯) আল্লাহ বলছেন: فَأَخْرَجْنَاهُم مِّن جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ (57) وَكُنُوزٍ وَمَقَامٍ كَرِيمٍ (58) كَذَٰلِكَ وَأَوْرَثْنَاهَا بَنِي إِسْرَائِيلَ
“তাদেরকে (ফেরাউন ও তার গোষ্ঠীকে) আমি বহিষ্কার করে দিলাম উদ্যানরাজি এবং প্রস্রবণসমূহ থেকে। তাদের ধনভান্ডার ও সুরম্য সৌধমালা থেকে। এ রকমই হয়েছিলো এবং বনী ইসরাইলকে এগুলোর উত্তরসূরী/অধিকারী বানিয়েছিলাম”।
সূরা আদ-দুখানে বলা হয়েছে (আয়াত: ২৫-২৮):
كَمْ تَرَكُوا مِن جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ (25) وَزُرُوعٍ وَمَقَامٍ كَرِيمٍ (26) وَنَعْمَةٍ كَانُوا فِيهَا فَاكِهِينَ (27) كَذَٰلِكَ ۖ وَأَوْرَثْنَاهَا قَوْمًا آخَرِينَ
“তারা তাদের পশ্চাতে রেখে গেল কত উদ্যান ও প্রস্রবন! কত শষ্য খেত ও সুরম্য প্রাসাদসমূহ। কত বিলাস উপকরণ যা তাদেরকে আনন্দিত করত। এ রকমই হয়েছিল এবং আমি অন্য একটি জাতিকে এগুলোর অধিকারী বানিয়ে দিলাম”।

যেহেতু, কুরআন কুরআনের ব্যাখ্যা। তাই এখানে অন্য একটি জাতি বলতে বনী ইসরাইলকে যে বোঝানো হয়েছে, তা সূরা শুআরা থেকেই প্রমাণিত। এ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, বনী ইসরাইল মুসা (আ. ) এর নেতৃত্বে অবার মিশরে গিয়েছিল । এটিই প্রখ্যাত মুফাসসির হাসানের অভিমত। যদিও কাতাদাহর মত হচ্ছে, বনী ইসরাইল নয়। এটি অন্য একটি জাতি। তবে প্রথম মতটিই যে আয়াতগুলোর কাছাকাছি, তা সহজে বুঝা যায়।

আল্লামা আলুসী (র.) তার তাফসীর ‘রুহুল মা‘আনী’তে এদুটো মতের সাথে আরো একটি মত উল্লেখ করেছেন। তাহলো:
“আল্লাহ তাদেরকে ওগুলোর ওয়ারিস/উত্তরাধিকারী/অধিকারী বানিয়েছেন, এর অর্থ হলো, তাদেরকে ওগুলোর উপর ক্ষমতা অর্পণ করেছিলেন। আর সে জন্য তাদেরকে মিশরে যেতেই হবে এমন কোন কথা নেই। বরং মিশরকে তাদের ক্ষমতাধীন করে দিয়েছিলেন।

ইমাম কুরতুবী (র.) এর অভিমতে :

বনী ইসরাইলগণ মিশরে ফিরে গিয়েছিলেন এবং ফেরাউন ও তার লোকদের পরিত্যক্ত সমস্ত ধনসম্পদের মালিক হয়েছিলেন। (দেুখন, সুরা দুখান ও শুআরার ব্যাখ্যায় তাফসীর কুরতুবী এবং আলুসী)।

প্রখ্যাত গবেষক ড. মুহাম্মাদ হিযাযী আসসাকা বলছেন :

ফেরাউন সলীল সমাধিস্থ হওয়ার পর মুসা আবার মিশরে গিয়েছিলেন এবং ১৩ বছর শাসন করেছিলেন। একাধিক উপাস্যের ধারণা বিলুপ্ত করেছিলেন, মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। অতঃপর একজন গভর্ণর নিযুক্ত করে তিনি সিনাই মরুতে চলে যান। সেখান থেকে তাওরাত কিতাব লাভ করে এর একটি কপি ঐ গভর্ণরকে পাঠিয়ে দেন।

সূরা ইউনুসের ৮৭ নং আয়াত :

وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ وَأَخِيهِ أَن تَبَوَّآ لِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُيُوتًا وَاجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قِبْلَةً وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ (87)
“আমি মুসা ও তার ভাইকে এই মর্মে নির্দেশ দিলাম যে, তোমরা তোমাদের কওমের জন্য মিশরে আবাসস্থান বহাল রাখো। তোমাদের ঘরগুলোকে কিবলাহ তথা নামাযের জায়গা বানাও। আর নামায কায়িম কর। এবং মুমিনেদেরকে সুসংবাদ দাও”।
তাছাড়া, সূরা ‘আরাফের ১৩৭ নং আয়াত দিয়েও অনেকে প্রমাণ দিয়েছেন।
وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِينَ كَانُوا يُسْتَضْعَفُونَ مَشَارِقَ الْأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا ۖ وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ الْحُسْنَىٰ عَلَىٰ بَنِي إِسْرَائِيلَ بِمَا صَبَرُوا ۖ وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُ وَمَا كَانُوا يَعْرِشُونَ (137)
“যে জাতিকে দুর্বল ও হীন ভাবা হত আমি তাদেরকে আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও
পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানাই, আর বনী ইসরাঈল জাতি সম্পর্কে তেমার রবের শুভ ও কল্যাণময় বাণী (প্রতিশ্রুতি) পূর্ণ হল যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল। আর ফেরাউনও তার সম্প্রদায়ের কীর্তিকলাপ ও উচ্চ প্রাসাদসমূহকে আমি ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছি”।

অনেক তাফসীরকারক পূর্ব ও পশ্চিম বলতে, শাম, মিশর এসবকে বোঝানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, উপরিউক্ত আয়াতগুলো থেকে এটাও বোঝা যায় যে, আল-আরদুল মুকাদ্দাসাহ অভিযান ও তৎপরবর্তী তীহের ঘটনাগুলো পরে ঘটেছিল।

ইকামাতে দ্বীন নিয়ে হাদিস :

৮. ইমাম আহমাদ ও বাযযার কর্তৃক বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীস থেকেও প্রমাণিত হয় যে, রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা ইকামাতে দ্বীনেরই অংশ। কারণ, যা কিছু দ্বীনের অংশ, তার সাথেই ইকামাতে দ্বীন সম্পৃক্ত।

عن جابر: أن النبي ـ صلى الله عليه وسلم ـ قال لكعب بن عجزة: “أعاذك الله من إمارة السفهاء يا كعب. قال: وما إمارة السفهاء؟ قال: أمراء يكونون بعدي، لا يهدون بهديي، ولا يستنون بسنتي، فمن صدقهم بكذبهم، وأعانهم على ظلمهم، فأولئك ليسوا مني، ولست منهم، ولا يردون على حوضي، ومن لم يصدقهم بكذبهم، ولم يعنهم على ظلمهم، فأولئك مني، وأنا منهم، وسيردون على حوضي”. (أحمد، البزار).
“হযরত যাবির )রা.( থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারীম স. কা’ব বিন আজুযাহকে বললেন: হে কা’ব আল্লাহ তায়ালা তোমাকে নির্বোধ লোকদের শাসন থেকে হেফাজাত করুন। তিনি আরজ করলেন, নির্বোধদের শাসন কি? রাসূলে কারীম স. বললেন: আমার পরে এমন কিছু শাসক আসবে, যারা আমার পথনির্দেশনা বা হিদায়াতকে গ্রহণ করবে না। আমার সুন্নাতের অনুকরণ করবে না। অতএব, যারা তাদের মিথ্যাচারকে বিশ্বাস করবে, জুলুম-অত্যাচার চালাতে তাদেরকে সাহায্য করবে, তাদের সাথে আমার, আমার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। তারা আমার হাওজের কাছে আসতে পারবে না। আর যারা তাদের মিথ্যাচারকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তাদেরকে জুলুমের ব্যাপারে সাহায্য করবে না, তারা আমার, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত। তারা পরকালে আমার হাওজের কাছে স্থান পাবে”- (আহমাদ, বাজ্জার)।

দ্বীন প্রতিষ্টায় আল্লাহর নির্দেশ :

أن أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ ۚ
“তোমরা দ্বীন কায়িম কর। এ ব্যাপারে মতানৈক্য করো না”। (সূরা আশশুরা, আয়াত: ১৩)।
এখানে দ্বীন বলতে শুধু নামায-রোযা কে বোঝানো হয়নি। পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে বোঝানো হয়েছে। এ জন্যই এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আসসাআদী বলছেন:
قال: أن أقيموا الدين أي: أمركم أن تقيموا جميع شرائع الدين أصوله وفروعه، تقيمونه بأنفسكم، وتجتهدون في إقامته على غيركم،
“অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করছেন তোমরা যেন দ্বীনের উছুল (মৌলিক শিক্ষাগুলো) ও ফুরু (শাখা-প্রশাখা) সবকিছুই প্রতিষ্ঠা কর। দ্বীনি কায়িম করবে নিজেদের জীবনে। এবং সর্ব শক্তি দিয়ে চেষ্ট করবে অন্যদের জীবনে তা বাস্তবায়নের জন্য।”

এ কথা সত্যি যে, নবীদের আনীত শরীয়তসমূহের মধ্যে কিছুটা ব্যবধান ছিল। তবে মৌলিক আকীদাহ ও আখলাকসম্পর্কিত বিধানের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। তাই এখানে ইকামাতে দ্বীন বলতে প্রত্যেক নবীকেকে প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা বা শরীয়ত কায়েম করা বোঝানো হয়েছে। কারণ, আল্লাহ বলছেন: لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجاً {المائدة: 48} (আমি প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা শরীয়ত ও জীবন ব্যবস্থা দিয়েছি”। (সূরা আল-মায়ীদাহ: ৪৮)।
যেহেতু, আমার মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহর (স.) উম্মত তাই আমাদের ক্ষেত্রে তাঁর শরীয়তই প্রযোজ্য।
যদি কেউ বলে যে, আকিমুদ্দীন ( أَقِيمُوا الدِّينَ ) এর অর্থ হলো, ওহীদ প্রতিষ্ঠা। এ ব্যপারে আমাদের জবাব হলো: ক. আল্লাহর আইন ও তাঁর সার্বভৌমত্বভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা তাওহীদের প্রাণকথা।

তাওহীদের হাকীকত হলো ৫টি জিনিস :

– আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা
– তিনিই একমাত্র মহাবিশ্বের স্বত্তাধিকারী
– তিনিই আদেশ-নিষেধ, শাসন ও আইন প্রনয়ণের একমাত্র সার্বভৌম সত্তা (আইন প্রনয়ণে তাওহীদ)।
– তিনি তার নামসমূহ, সিফাতসমূহ ও কর্মকান্ডে একক ও অদ্বিতীয়…..
إ تعبدوا إلا إياه) يوسف: 40.
إفراد الله في العبادة (وأعبدوا الله ولا تشركوا به شيئا) النساء: 36. وما أرسلنا من قبلك من رسول إلا نوحي إليه إنه لا إله إلا أنا فاعبدون . الأنبياء: 25. إفراد الله بأسمائه وصفاته وأفعاله (ليس كمثله شيئ وهو السميع البصير) الشورى: 11.
(দেখুন: মুহাম্মাদ মাক্কী, আলবায়ান ফি আরকানিল ঈমান, দারুল বাসাইর আল-ইসলামিয়্যাহ, পৃ: ৪৬-৫১)।

খ. দ্বীন বলতে কি শুধু তাওহীদই বুঝায়? দ্বীনের কি অন্য কোন শিক্ষা নাই ? যদি বলেন: না। তাওহীদের বাহিরে দ্বীনের অন্য কোন শিক্ষা নাই, তাহলে আমি বলবো, আপনি সত্য কথা বলেননি। আর যদি বলেন, হা, অছে। তাহলে আমি প্রশ্ন করবো: সেগুলোর মধ্যে কি রাষ্ট্রব্যবস্থার আছে? যদি বলেন, নাই। তাহলে আপনি কুরআনের অকাট্য বিধানের বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন বলবো। কারণ, উপরে এ বিষয়ে একাধিক আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে। আর যদি বলেন, আছে। (বাস্তবেই আছে)। তাহলে বলবো, সেগুলো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ব্যতীত কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন?

অতএব (যুক্তির খাতিরে) , সূরা শুরার ঐ আয়াত দ্বারা ইসলামী শরীয়াহ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা অস্বীকার করলেও অন্যান্য অকাট্য আয়াতের বিধানকে তো অস্বীকার করতে পারেন না।

ইকামাতে দ্বীন কি ফরজ :

গ. ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা যে ফরয, এ ব্যাপারে একমাত্র কাফিরই দ্বিমত পোষণ করতে পারে। কারণ, আপনি নামাযকে ফরয বলছেন, রোযাকে ফরয বলছেন। কারণ এগুলো আল্লাহর আদেশ। অথচ ঐ একই আল্লাহ একই কুরআনে একই শৈলীতে কিসাস ফরয করেছেন, কিতাল ফরয করেছেন। যেগুলোর জন্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অনিবার্য। আর ঐ শায়খ বলছেন, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজ করলে গোমরাহ হয়ে যেতে হবে। জাহান্নামী হতে হবে! নিচের দুটো আয়াতের মধ্যে তুলনা করুন: يا أيها الذين آمنوا كتب عليكم الصيام/ يا أيها الذين آمنوا كتب عليكم القصاص

১০. ইসলাম হচ্ছে সবার্ত্মক ও পরিব্যপ্ত জীবন ব্যবস্থা। দ্বীনের এই ব্যাপকতা সম্পর্কে ড. আব্দুল কারীম যাইদান বলছেন:

ইসলামের গোটা শিক্ষা তিনভাগে বিভক্ত :

ক. আকীদাহ সংক্রান্ত বিধি-বিধান
খ. আখলাক সংক্রান্ত বিধি-বিধান
গ. ব্যবহারিক বিধি-বিধান

ব্যবহারিক বিধি-বিধান দুই ভাগে বিভক্ত:
ক. ইবাদাত: যে সব বিধিবিধান স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যকার সম্পর্ক বিন্যাস করে।
খ. মু‘আমালাহ: যে সকল বিধান সৃষ্টির /মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক বিন্যাস করে। এ গুলো আবার অনেক প্রকার, যা জীবনের সমস্ত কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত।

যেমন:
১. পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত বিধিবিধান। যেগুলোকে আধুনিক আইনের ভাষায় বলা হয়: পারসোনাল স্টেইটাস ল’/ফেমিলি ল’।
২. অর্থনৈতিক লেনদেন সংক্রান্ত বিধিবিধান। যেগুলোকে বলা হয়: সিভিল ল’।
৩. বিচার ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত বিধিবিধান। যেগুলোকে বলা হয়: ল’ অব প্রসিজিউর।
৪. মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিমদের সাথে সম্পর্ক বিন্যাসকারী ল’। যাকে বলা হয় প্রাইভেট ইনটারন্যাশনাল ল’।
৫. অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে ইসলামী রাষ্ট্রের সম্পর্ক বিষয়ক আইন। যাকে বলা হয়: পাবলিক ইনটারন্যাশনাল ল’।
৬. রাষ্ট্র ব্যবস্থা, রাষ্ট্রের ধরন, মূলনীতি, নাগরিক অধিকার, রাষ্ট্র ও জনগণের পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্য সংক্রান্ত আইন। যাকে বলা হয়: কনস্টিটিউশনাল ল’।
৭. অপরাধ ও দন্ডবিধি সংক্রান্ত আইন। যাকে বলা হয় পেনাল কোড/ফৌজদারী আইন।

মোট কথা, জীবনের এমন কোন দিক নেই, যেখানে ইসলামের শাসন, অনুশাসন, বিধি-বিধান ও নির্দেশনা নেই। এই সব কিছু নিয়েই ইসলাম, দ্বীন। তাই ইসলাম মানে শুধু কালেমা, নামায , যাকাত। এর সাথে রাষ্ট্রের কোন সম্পর্ক নেই। এ কথা নাস্তিকদের মুখে শোভা পায়।

রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম :

রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামকে অস্বীকার করা শিরক পর্যায়ের অপরাধ। পবিত্র কুরআনে যখন বলা হলো:
اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ
“তারা (ইয়াহুদ ও খ্রীস্টানগণ) আল্লাহ কে বাদ দিয়ে তাদের ধর্মযাজক ও পুরোহিতদেরকে রব বানিয়েছে” (সূরা আততাওবাহ: ৩১)। তখন আদী বিন হাতিম রাসূলকে স. বলেছিলেন:

إنهم لم يعبدوهم؟ فقال: بلى، إنهم حرموا عليهم الحلال، وأحلوا لهم الحرام، فاتبعوهم، فذلك عبادتهم إياهم. التزمذي 3095
“তারা তো তাদের পুজা করে নি। রাসূল (স.) বললেন: হা। তবে তারা আল্লাহ যা হালাল করেছিলেন, তা হারাম বানিয়েছে। আর আল্লাহ যা হারাম বানিয়েছেন, সেগুলোকে তারা হালাল বানিয়েছে। আর সাধারণ জনগণ তা মেনে নিয়েছে। এটাই হচ্ছে ইয়াহুদ-খ্রীস্টান কর্তৃক পুরোহিত পুজা।”। (তিরমিযয়ী:৩০৯৫)।
যারা আল্লাহর দ্বীন/শরীয়তের বিপরীত আইন করে এবং যারা তা মেনে নেয় তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলছেন:
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ
“তারা কি আল্লাহর সাথে এমন কিছু শরীক বানিয়ে নিয়েছে, যারা তাদের জন্য এমন দ্বীন প্রবর্তন করলো, যে ব্যাপারে আল্লাহর কোন অনুমদোন নেই। (সূরা শুরা, আয়াত: ২১)।

ইকামাতে দ্বীন নিয়ে বিভ্রান্তির পর্যালোচনা :

অতএব,, মতিউর রহমানদের দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নিলে, যারা সুদ কে হালাল করেছে, যিনার অনুমিত /লাইসেন্স দিয়েছে, তাদেরকে মেনে নিতে হয়। যার পরিণাম হলো, শিরক। অতঃপর স্থায়ী জাহান্নাম।

১২. মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (স.) হচ্ছেন আমাদের আদর্শ। আমরা তাঁর উম্মাত। তাঁর জীবনধারাই হলো বাস্তব ইসলাম। রাসূলের সুন্নাত তথা জীবনধারা অস্বীকারকারীদের দ্বারা ইকামাতে দ্বীনে হবে না। কারণ সেখানেতো দ্বীনই থাকবে না। আর এ কথা স্বতঃসিদ্ধ রাসূল (স. ) দশ বছর একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। তিনি আল্লাহর কুরআন দিয়ে তা পরিচালনা করেছিলেন। তাহলে কি তিনি ইকামাতে দ্বীন করেন নি? ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তিনি মুনাফিক, ইয়াহুদ, মূশরিকদের পক্ষ থেকে অমানবিক অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। তাহলে কি তিনিও (মতিউর রহমানদের ভাষায়) দুনিয়াতে কষ্ট পেলেন এবং পরকালেও কষ্ট পাবেন? (নাউযুবিল্লাহ)।

১৩. শরীয়তের নীতি হলো: ما لا يتم الواجب إلا به فهو واجب “ওয়াজিব পালন করতে যা অপরিহার্য, তাও ওয়াজিব। আর আমরা জানি, কুরআনের মধ্য এমন অনেক বিধান রয়েছে, যা একমাত্র রাষ্ট্রই বাস্তবায়ন করতে পারে। যেমন, হুদুদ, কিসাস, বেনামাযির শাস্তি, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা। তাছাড়া, যাকাত ব্যবস্থাপনাও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। ইসলামী আদর্শে অবিশ্বাসীরা ‍যিনার হদ্দ, কতলের কিসাস বাস্তবায়ন করবে তা কি ভাবা যায়? তাহলে মুসলিমদের সামনে একটি পথই খোলা। তাহলো, ওখানে ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী লোকদের পাঠাতে হবে। এ ব্যাপারে কোন কথা থাকতে পারে না। হা, সেই প্রক্রিয়াটা কী হবে? গণতন্ত্র, ভোটপদ্ধতি না অন্য কিছু ? তা নিয়ে গবেষণা থাকতে পারে। এ ব্যাপারে মতিউর রহমানরা মতামতে দিতে পারেন। কিন্তু ইসলামী রাজনীতি করলে জাহান্নামে যেতে হবে, এ ধরনের চিন্তা শুধু ইবলিসকেই মানায়। কারণ, ইবলিসতো এর মাধ্যমেই আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করতে চায়।

ইকামাতে দ্বীন নিয়ে বিভ্রান্তির জবাব :

১৪. সিংহাসন, রাষ্ট্রক্ষমতা, মসনদে বসার জন্য নয়; বরং আল-কুরআনকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যই ইকামাতে দ্বীন। এর অর্থ: শুধুমাত্র রাজনীতিই ইকামাতে দ্বীন, তা নয়। বরং ব্যক্তি পর্যায়, পারিবারিক পর্যায়, সমাজ পর্যায়, রাষ্ট্র পর্যায় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে ইকামাতে দ্বীন। এভাবে ইসলামকে চূড়ান্ত বিজয়ী করাই হলো ইকামাতে দ্বীন। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ (33)
“ তিনিই তাঁর রাসূল কে পাঠিয়েছেন হিদায়াত ও সত্যদ্বীন সহ, যাতে করে তিনি সমস্ত বাতিল দ্বীনের উপর ইসলামকে বিজয়ী করতে পারেন। যদিও তা মুশরিকদের পছন্দ নয়”। (সূরা তাওবাহ: ৩৩)।

পরিশেষে, আমরা শায়খ মতিউর রহমান ও অনুসারীদেরকে বলবো, আপনারা তাওবাহ করুন। সঠিক পথে ফিরে আসুন। যে ব্যাপারে আল্লাহ মতানৈক্য নিষেধ করেছেন, সে ব্যাপারে মতােনৈক্য বর্জন করুন। আল্লাহ মুসা ও হারুন (আ.) কে ফেরাউনের কাছে যেতে বলেছেন কেন? এতটুুকু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন যে রাষ্টযন্ত্রের ইসলামায়ন ছাড়া কোন ইকামাতে দ্বীন হয় না। আল্লাহ আমাদেরকে বোঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।

লেখক –  ড. বি. এম. মফিজুর রহমান আল-আযহারী

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

Verified by MonsterInsights