কুরবানির মাসআলা মাসায়েল
কুরবানির মাসআলা
কুরবানির মাসআলা মাসায়েল
** আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনই প্রতিটি ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য। কুরবানি সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের রক্ত ও গোশত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া’। ইসমাইল আ. -এর পরিবর্তে একটি পশু কুরবানির মধ্য দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, ‘পরবর্তীকালের লোকদের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে জারি করে দিলাম’। পিতা ইবরাহিম আ.-এর চরম আত্মত্যাগের স্মরণই আমাদের এই কুরবানি। গোশত খাওয়া, প্রদর্শনী বা হারাম উপার্জনে কুরবানির প্রশ্নই উঠে না।
** সুরা কাউছারে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ো ও কুরবানি করো’। নামাজ না পড়ে কুরবানি করায় কোনো লাভ হবে কি? এ প্রশ্ন থাকতেই পারে। আমি কুরবানিকে নিরুৎসাহিত করছি না। বরং যে কুরবানিতে আল্লাহ বান্দার মাঝে তাকওয়া চাচ্ছেন; সেই কুরবানির নিয়তের সাথে সাথে আমরা সকল গুনাহ থেকে (বিশেষ করে হারাম উপার্জন ও নামাজ না পড়া) আল্লাহর কাছে তওবা করি। আল্লাহ তাঁর তাওবাকারী বান্দাকে পছন্দ করেন।
** কুরবানি প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব/সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। রসুল সা.-এর উক্তি ওয়াজিব হওয়ার দলিল : ‘সামর্থ্যবান ব্যক্তি যদি কুরবানি না করে সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে’। সুন্নাতে মুয়াক্কাদার দলিল হলো সাহাবায়ে কেরামের রা. প্রশ্নের জবাবে রসুল সা. বলেছেন, ‘তোমাদের পিতা ইবরাহিম আ.-এর সুন্নাত’। ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। কুরবানির অনেক সওয়াবের কথা হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
১. কার উপর কুরবানী ওয়াজিব?
উঃ জিলহজ্জ মাসের ১০ সুবহে সাদিক থেকে ১২ তারিখ
সূর্যাস্ত পর্যন্ত কারো কাছে যদি নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকে ৭ঃ৫ সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা থাকে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
২. নিছাবের মেয়াদ কত দিন?
উঃ ৩ দিন, জিলহজ্জ মাসের ১০,১১ এবং ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
৩. তিন দিনের মধ্যে কোন দিন কুরবানী করা উত্তম?
উঃ ১০ তারিখে প্রথম দিন।
৪. যদি নাবালক এর নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে কি ?
উঃ না।
৫. বালেক সুস্থ মস্তিষ্ক না নিছাব পরিমাণ সম্পদ আছে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে কি ?
উঃ- না
৬.যদি নাবালেক এর নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকে এর পক্ষে থেকে কুরবানী দেওয়া কি?
উঃ মুস্তাহাব, ওয়াজিব না।
৭. দরিদ্র লোকের উপর কুরবানী কি ওয়াজিব?
উঃ- না, তবে যদি কুরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করে
তখন সে পশু কুরবানী করা ওয়াজিব।
৮. কেউ যদি কুরবানির দিন গুলোতে কুরবানির দিতে না পারে তাহলে কি করবে, যদি সে নিছাব পরিমাণ সম্পদ আছে, কোন সমস্যায় দিতে পারে নি তাহলে কি করবে?
উঃ-একটা ছাগল যে কুরবানী উপযুক্ত সে ছাগলের সমপরিমাণ টাকা সদকা করে দিবে ন এটা হলো যারা পশু ক্রয় করতে পারেনি তাদের জন্য।
কিন্তু যারা পশু কিনেছেন কিন্তু তিন দিনের মাঝে কুরবানী দিতে পারেন নি তাহলে তার জন্য করণীয় হলো সে পশু সদকা করে দেওয়া।
আবার যদি কেউ তিন দিন পর জবাই করে ফেলে তাহলে সে ঐ পশুর গোশত ওজন করবে তারপর যদি ঐ পশুর ক্রয়ের টাকা থেকে কম হয় তাহলে গোশত সহ
যতো টাকার গোশত কম হয়েছে পুরো টাই সদকা করতে হবে। ধরনে আপনি ২০ হাজার দিয়ে কিনেছেন ওজন দিয়ে দেখলেন ১৮ হাজার টাকার গোশত হয়েছে
গোশতের আরও ২ হাজার টাকা সদকা করতে হবে।
৯. প্রথম দিন কখন থেকে কুরবানী করা যাবে?
উঃ যে এলাকায় জুমার নামাজ,এবং ঈদের নামাজ ওয়াজিব সে এলাকায় ঈদের নামাজের আগে কুরবানী করা জায়েজ নেই। তবে কোন প্রকার দুর্ঘটনা ঘটে গেলে
যদি ঈদের নামাজ না পড়া যায় তাহলে করনীয় হলো সূর্য মধ্যে আকাশ অতিক্রম করার পর কুরবানী করা জায়েজ হবে।
১০. রাতে কুরবানী দিলে কি হবে?
উঃ ১০,১১ তারিখে রাতে দিলে হবে ১২ তারিখ রাতে দিলে হবে না।
১১. কোন কোন পশু দিয়ে কুরবানী দেওয়া জায়েজ?
উঃ- গরু,উট,মহিষ,দুম্বা, ছাগল এবং ভেড়া।
১২. পশু দের লিঙ্গ ভেদ করতে হবে কি?
উঃ- না, পুরুষও মহিলা উভয় দিয়ে হবে।
১৩. পশুর বয়স সীমা কত?
উঃ উট কম পক্ষে ৫ বছর, গরু মহিষ ২ বছর
ভেড়া, দুম্বা ছাগল ১ বছর।
ভেড়া এবং দুম্বা ১ বছর হয়নি তবে বলিষ্ঠ মনে হয়
যে এক বছর হয়েছে তাহলে এটা দিয়ে কুরবানী হবে।
তবে ছাগল ১ বছরের নিচে কোন ভাবে হবে না।
১৪. শরীক সর্বোচ্চ কত জন হওয়া যাবে?
উঃ উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ ৭ জন কমে হলে সমস্যা নেই তবে একা দেওয়া উত্তম । ছাগল, দুম্বা, ভেড়া তে একজন।
১৫. গোশত ভাগে কম বেশি হলে?
উঃ- কারো কুরবানী সহীহ হবে না।
১৬. শরীকের মাঝে কেউ যদি গোশত খাওয়ার নিয়তে দেয় তাহলে?
উঃ- কারো কুরবানী হবে না।
১৭. কুরবানীর পশুতে আকিকা দেওয়া যাবে?
উঃ- হ্যাঁ, তবে উট, গরু,এবং মহিষে।
১৮. শরীক দার দের মাঝে যদি কারো অধিকাংশ বা পুরা টাকা হারাম হয় তাহলে কি কুরবানী হবে?
উঃ- না না না! কারো কুরবানী হবে না।
১৯. গরু, মহিষ উট একা কুরবানী নিয়তে কিনার অন্য কাউকে কি শরীক করা যাবে?
উঃ- ধনী হলে পারবে অর্থাৎ যার উপর ওয়াজিব , তবে গরিব ওয়াজিব না কুরবানী তার উপর। পশু কিনে ফেলছে কুরবানীর নিয়তে তাহলে শরীক করা যাবে না একাই দিতে হবে।
২০. কোন ধরনের পশু নির্বাচন করা উত্তম?
উঃ- রিষ্ট পুষ্ট, তাজা পশু নির্বাচন করা সুন্নত।
২১. যে পশু তিন পায়ে ভর করে চলে এমন পশু ধারা কি কুরবানী হবে?
উঃ- না
২২. রোগ্ন পশু দিয়ে কি কুরবানী হবে?
উঃ- না
২৩. দাঁত ছাড়া পশু দিয়ে কি কুরবানী হবে?
উঃ একটা দাত নেই এটা কোন ভাবেই হবে না ,অথবা কিছু আছে তবে ঘাস খেতে পারে না এমন পশু ধারা কুরবানী হবে না।
২৪. শিং ছাড়া পশু দিয়ে কুরবানী হবে কি ?
উঃ জন্মগত যে পশুর শিং নেই সেটা ধারা হবে।
তবে পরবর্তীতে যেটা ভেঙ্গে যায় আর তার ফলে মস্তিষ্কে ক্ষতি হয় এমন পশু ধারা হবে না। তবে অর্ধে হলেও হবে।
২৫. লেজ কাটা, কান কাটা পশু দিয়ে কুরবানি হবে কি?
উঃ যদি পশুর লেজ বা কান অর্ধেক বা তার বেশি কাটা হয় তাহলে সে পশু ধারা কুরবানী হবে না।
তবে অর্ধেকের কম হলে হবে।
২৬. অন্ধ পশু ধারা কুরবানী করা যাবে কি?
উঃ- না তবে যে পশুর এক চোখ ও অন্ধ সেটা দিয়েও হবে না।
২৭. কুরবানীর নিয়তে পশু ক্রয় করার পর হারিয়ে গেলে দাতা কি করবে?
উঃ- ধনী হলে আরেক টা ক্রয় করবেন।
এবং গরিব ওয়াজিব নয় এমন ব্যক্তি ক্রয় করতে হবে না
তবে কিনার পরে যদি আবার প্রথম পশু ফিরে পাওয়া যায় তাহলে ধনী ব্যক্তি যেকোন একটা কুরবানী করলে হবে, তবে দুটা করা উত্তম একটা করলেও হবে।
** আর গরিব ব্যক্তি যদি হয় তাহলে দুটাই দিতে হবে।
দুটাই দেওয়া তখন ওয়াজিব।
২৮. গর্ভবতী পশু কুরবানী করা কি জায়েজ আছে?
উঃ- হ্যা জায়েজ।
২৯. পশু জবাইয়ের পরে যদি বাচ্চা কে জীবিত পাওয়া যায় তাহলে কি করবে?
উঃ- বাচ্চা ও জবাই দিতে হবে।
৩০. জবাইয়ের আগ মুহূর্তে যদি পশু প্রসব অবস্থায় উপনীত হয় তখন করনীয় কি?
উঃ- সে পশু জবাই করা জায়েজ আছে, তবে মাকরূহ!
৩১. পশু ক্রয় করার পর যদি এমন কোন দোষ দেখা যায় যে দোষ গুলো থাকিলে কুরবানী হয় না তখন করনীয় কি?
উঃ- এই পশু ধারা কুরবানী হবে না।
তবে এখানে গরিব ব্যক্তির জন্য জায়েজ আছে
ধনী ব্যক্তির জন্য জায়েজ নয়।
৩২. আপনি কোন পশু ক্রয় করার সময় জিজ্ঞেস করলেন বয়স কত সে বললো ২ বছর যদি সেটার আসলে বয়স ২ বছর না হয় তখন কি করনীয় বা কুরবানী কি হবে?
উঃ- হ্যা হবে তবে যে বিক্রেতা মিথ্যা বলেছে তার গুনা হবে।
৩৩. পশু কোথায় জবাই করা উত্তম?
উঃ- যেখানে পরিবেশ দূষিত হওয়ার আশংকা কম থাকে।
৩৪. পশু কে জবাই করা উত্তম?
উত্তমঃ- নিজের পশু নিজে কুরবানী করা উত্তম।
৩৫.বন্ধা পশু ধারা কুরবানী হবে কি?
উঃ- হ্যা হবে ।
৩৬. গরীব মানুষ কুরবানির নিয়ত করলে তা পালন করা?
উঃ- ওয়াজিব হয়ে যায়।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.