সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

হজ্জের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন কিছুকে পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করার সংকল্প করা। ইসলামী শরীয়া ভাষায় কাবা শরীফ যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে ভ্রমণের ইচ্ছা বা সংকল্প করা।
হজ্জ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে পঞ্চম স্তম্ভ :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ ‏

ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি।
১. আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা।
২. সলাত কায়িম করা।
৩. যাকাত আদায় করা।
৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং
৫. রমযানের সিয়ামব্রত পালন করা (রোজা রাখা)।
(৪৫১৪; মুসলিম ১/৫ হাঃ ১৬, আহমাদ ৬০২২, ৬৩০৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৭)

হজ্জ বিত্ত্বশালী লোকদের জন্য একটি অন্যতম ইবাদত:
فِيهِ ءَايٰتٌۢ بَيِّنٰتٌ مَّقَامُ إِبْرٰهِيمَ ۖ وَمَن دَخَلَهُۥ كَانَ ءَامِنًا ۗ وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا ۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِىٌّ عَنِ الْعٰلَمِينَ
তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহীম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।(সূরা আলে-ইমরান:৯৭)
এ আয়াত দ্বারা বিত্ত্ববান লোকদের উপর হজ্জ ফরজ করা হয়েছে। সুতরাং এ হজ্জকে অস্বীকার বা অমান্য করা কুফরী।

হজ্জের সূচনা :
হজ্জের সূচনা হয় হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর সময় থেকে। হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর জেষ্ঠ্য ছেলে ইসমাঈলকে নিয়ে যখন কাবা ঘর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করলেন তখন

মহান আল্লাহ তাঁকে বললেন,
وَأَذِّن فِى النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلٰى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِن كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ
আর মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে।(সূরা আল- হাজ্জ:২৭ ) এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় হজ্জ প্রথা প্রথম শুরু হয়েছিল হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর সময় থেকেই। সুতরাং হজ্জ বিত্ত্ববান লোকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। শুধু ইবাদতই নয় ইহা বিশ্ব মুসলিম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার অন্যতম ও প্রধান পন্থাও বটে। তাই হজ্জকে বলা যায় মুসলিম উম্মাহর মহা ঐক্যের মহা সম্মেলন বা মহা ঐক্যের মহামিলন কেন্দ্র।

আমাদের দেশে হজ্জ আদায় কারীদের অবস্থা:
আমাদের দেশে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত সবচেয়ে বেশী অবহেলিত আর এ দুটি ইবাদত ফরজ করা হয়েছিল বিত্ত্ববান লোকদের উপর। একটি যাকাত আর অপরটি হজ্জ। । যাদের উপর হজ্জ ফরজ তাদের অধিকাংশ লোক হজ্জ পালন করেন না। যারা পালন করেন তাদের অধিকাংশ লোকই তা সঠিক সময়ে আদায় করেন না। শারীরিকভাবে যখন সে অক্ষম হয়ে পড়ে তখন হজ্জের নিয়ত করে, আবার অনেকে শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ার কারণে অন্যকে দিয়ে বদলী হজ্জ করান, এর কোনটিই ছুন্নাহ বা সঠিক পন্থা নয়। মহানবী (সঃ) তাদের জন্য বদলী হজ্জে বিধান রেখেছেন যারা বৃদ্ধ অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করেছেন কিন্তু আর্থিকভাবে সে সচ্ছল। অথবা এমন সময় সে সম্পদের মালিক হয়েছেন যখন তিনি শারীরিকভাবে অক্ষম।

এ ব্যাপারে আব্‌দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ أَرْدَفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْفَضْلَ بْنَ عَبَّاسٍ يَوْمَ النَّحْرِ خَلْفَهُ عَلَى عَجُزِ رَاحِلَتِهِ، وَكَانَ الْفَضْلُ رَجُلاً وَضِيئًا، فَوَقَفَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِلنَّاسِ يُفْتِيهِمْ، وَأَقْبَلَتِ امْرَأَةٌ مِنْ خَثْعَمَ وَضِيئَةٌ تَسْتَفْتِي رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَطَفِقَ الْفَضْلُ يَنْظُرُ إِلَيْهَا، وَأَعْجَبَهُ حُسْنُهَا، فَالْتَفَتَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَنْظُرُ إِلَيْهَا، فَأَخْلَفَ بِيَدِهِ فَأَخَذَ بِذَقَنِ الْفَضْلِ، فَعَدَلَ وَجْهَهُ عَنِ النَّظَرِ إِلَيْهَا، فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ فَرِيضَةَ اللَّهِ فِي الْحَجِّ عَلَى عِبَادِهِ أَدْرَكَتْ أَبِي شَيْخًا كَبِيرًا، لاَ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَسْتَوِيَ عَلَى الرَّاحِلَةِ، فَهَلْ يَقْضِي عَنْهُ أَنْ أَحُجَّ عَنْهُ قَالَ ‏ “‏ نَعَمْ ‏”‌‏.‏

তিনি বলেনঃ একবার কুরবানীর দিনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফায্‌ল ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে আপন সওয়ারীর পিঠে নিজের পেছনে বসালেন। ফায্‌ল একজন সুপুরুষ ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের মাসাআলা মাসায়িল বলে দেয়ার জন্য আসলেন। এ সময় খাশআম গোত্রের এক সুন্দরী নারী রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট একটা মাসাআলা জিজ্ঞেস করার জন্য আসল। তখন ফায্‌ল (রাঃ) তার দিকে তাকাতে লাগলেন। মহিলাটির সৌন্দর্য তাঁকে আকৃষ্ট করল। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফায্‌ল (রাঃ) এর দিকে ফিরে দেখলেন যে, ফায্‌ল (রাঃ) তাঁর সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬২২৮দিকে তাকাচ্ছেন।

তিনি নিজের হাত পেছনের দিকে নিয়ে ফায্‌ল (রাঃ) এর চিবুক ধরে ঐ নারীর দিকে না তাকানোর জন্য তার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন। [২০] এরপর স্ত্রীলোকটি জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের উপর যে হাজ্জ ফরয হবার বিধান দেয়া হয়েছে, আমার পিতার উপর তা এমন অবস্থায় এসেছে যে, বৃদ্ধ হবার কারণে সওয়ারীর উপরে বসতে তিনি অক্ষম। যদি আমি তার পক্ষ থেকে হাজ্জ আদায় করে নেই, তবে কি তার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হাঁ।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮২)

হজ্জ ফরজ হওয়ার সাথে সাথে তা পালন করার নির্দেশ:
মহানবী (সঃ) বলেন; মহান আল্লাহ তোমাদের উপর হজ্জ ফরজ করেছেন সুতরাং তোমরা হজ্জ কর। (মুনতাকী) তা ছাড়া সঠিক সময়ে হজ্জ পালন না করা কুফরী। সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যারা হজ্জ পালনে বিরত থাকে মহানবী (সঃ) তাদেরকে ইহুদী নাসারাদের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার জন্য পাথেয় এবং বাহন যার আছে সে যদি হজ্জ আদায় না করে আর এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তবে তার মৃত্যু ইহুদী নাসারার মত। (তিরমিযী)

হজ্জের ফযিলত:

১.হজ্জ সর্ত্তোম আমল:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ سُئِلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَيُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ إِيمَانٌ بِاللهِ وَرَسُولِهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ جِهَادٌ فِي سَبِيلِ اللهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ حَجٌّ مَبْرُورٌ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে জিজ্ঞেস করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞেস করা হল , অতঃপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞেস করা হল, অতঃপর কোনটি? তিনি বলেনঃ হজ্জ-ই-মাবরূর (মাকবূল হজ্জ)।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৫১৯)

২.জান্নাতই হলো হজ্জে মাবরুর প্রতিদান:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ ‏”‌‏
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক ‘উমরা’র পর আর এক ‘উমরা উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হলো হজ্জে মাবরূরের প্রতিদান।(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৭৭৩)

৩. হজ্জ পালনকারি প্রত্যাবর্তন করবে মাতৃগর্ভ হতে সদ্য প্রসূত শিশুর মত হয়ে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ مَنْ حَجَّ هَذَا الْبَيْتَ، فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَمَا وَلَدَتْهُ أُمُّهُ ‏”‌‏.‏

৪.আল্লাহর রাসূল (সা:) চারটি উমরা করেছেন:
حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، وَقَالَ، اعْتَمَرَ أَرْبَعَ عُمَرٍ فِي ذِي الْقَعْدَةِ إِلاَّ الَّتِي اعْتَمَرَ مَعَ حَجَّتِهِ عُمْرَتَهُ مِنَ الْحُدَيْبِيَةِ، وَمِنَ الْعَامِ الْمُقْبِلِ، وَمِنَ الْجِعْرَانَةِ، حَيْثُ قَسَمَ غَنَائِمَ حُنَيْنٍ، وَعُمْرَةً مَعَ حَجَّتِهِ‏.‏
হাম্মাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত:আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারটি ‘উমরা করেছেন। তন্মধ্যে হজ্জের মাসে যে ‘উমরা করেছেন তা ছাড়া বাকী সব ‘উমরাই যুল-কা‘দা মাসে করেছেন। অর্থাৎ হুদাইবিয়ার ‘উমরা, পরবর্তী বছরের ‘উমরা, জি‘রানার ‘উমরা, যেখানে তিনি হুনাইনের মালে গনীমত বণ্টন করেছিলেন এবং হজ্জের মাসে আদায়কৃত উমরা।(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৭৮০)

৫.হজ্জ জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রান:
মহানবী (সঃ) বলেন; মহান আল্লাহ আরাফাতের দিন যত মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন অন্য কোন দিনে এত লোককে মুক্তি দেন না। (মুসলিম)

৬.এহরাম পরিধান করে পুত-পবিত্র হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজিরা:
এহরাম পরিধান করে পুত-পবিত্র হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেয়ার জন্য ‘লাব্বাইক’ বলা সমস্ত গুনাহ-পাপ থেকে পবিত্র হয়ে পরকালে আল্লাহর কাছে হাজিরা দেয়ার প্রয়োজনীয়তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আরো স্মরণ করিয়ে দেয় যে এহরামের কাপড়ের মতো স্বচ্ছ-সাদা হৃদয় নিয়েই আল্লাহর দরবারে যেতে হবে।

৭.আল্লাহর দরবারে হাজিরা:
লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ বলে বান্দা আল্লাহর যে কোনো ডাকে সাড়া দেয়ার ব্যাপারে সদা প্রস্তুত থাকার কথা ঘোষণা দেয়।

৮. বায়তুল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়ে মুমিন নিরাপত্তা অনুভব করে:
বায়তুল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়ে মুমিন নিরাপত্তা অনুভব করে। কেননা বায়তুল্লাহকে নিরাপত্তার নিদর্শন হিসেবে স্থাপন করেছেন আল্লাহ তা’আলা। তদ্রƒপভাবে শিরকমুক্ত ঈমানী জীবযাপনের দীর্ঘ চেষ্টা-সাধনার পর মুমিন আল্লাহর কাছে গিয়ে যে নিরাপত্তা পাবে তার প্রাথমিক উদাহরণ এটি।

৯. হাজরে আসওয়াদ:
হাজরে আসওয়াদ চুম্বন-স্পর্শ মুমিনের হৃদয়ে সুন্নতের তাজিম-সম্মান বিষয়ে চেতনা সৃষ্টি করে। কেননা নিছক পাথরকে চুম্বন করার মাহাত্ব কী তা আমাদের বুঝের আওতার বাইরে। তবুও আমরা চুম্বন করি, যেহেতু রাসূল (সঃ) করেছেন। বুঝে আসুক না আসুক কেবল রাসূল (সঃ) এর অনুসরণের জন্যই আমরা চুম্বন করে থাকি হাজরে আসওয়াদ। এ চুম্বন বিনা-শর্তে রাসূল (সঃ) এর আনুগত্যে নিজেকে আরোপিত করার একটি আলামত। ওমর (রাঃ) হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করার পূর্বে বলেছেন, ‘আমি জানি নিশ্চয়ই তুমি একটি পাথর। ক্ষতি-উপকার কোনোটারই তোমার ক্ষমতা নেই। রাসূল (সঃ) কে চুম্বন করতে না দেখলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। হাজরে আসওয়াদের চুম্বন নিয়ে, যুক্তির পেছনে না ঘুরে, আল্লাহ ও রাসূলের নিঃশর্ত আনুগত্যের চেতনা শেখায় যা ধর্মীয় নীতি-আদর্শের আওতায় জীবনযাপনকে করে দেয় সহজ, সাবলীল।

১০.উকুফে আরাফা:
উকুফে আরাফা কিয়ামতের ময়দানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যেখানে সমগ্র মানবজাতি একত্রিত হবে সুবিস্তৃত এক ময়দানে। যেখানে বস্ত্রহীন অবস্থায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে গুণতে হবে অপেক্ষার প্রহর। সঠিক ঈমান ও আমলের অধিকারী ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাবে আল্লাহর করুণায়। আর ঈমানহীন-ত্রুটিপূর্ণ ঈমান ও আমলওয়ালা ব্যক্তিদেরকে অনন্ত আযাব ভোগ করাতে শেকল পরিয়ে ধেয়ে নেয়া হবে জাহান্নামের পথে। সুতরাং প্রতিটি সামর্থবান মুসলমানদের হজ্জ ফরজ হওয়ারপর যথা শ্রীঘ্র তা আদায় করা অবশ্য কর্তব্য। যথা সময়ে পালন না করা কুফরীর মত পাপ, পরিণামে জাহান্নাম। আর যথা সময়ে এবং সঠিকভাবে আদায় করলে তার বিনিময় এক মাত্র জান্নাত। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হজ্জের মত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি সঠিকভাবে যথা সময়ে আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

মো.ইয়াছিন (আরাফাত)
এডমিন:বাংলাদেশ দাওয়াহ সার্কেল
খতিব,গোলারপাড় জামে মসজিদ,ঢাকা।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

Verified by MonsterInsights