সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

ঈমানের রুকন ও ঈমান-ইসলামের তুলনামূলক আলোচনা

ঈমানের রুকন গুলো কী কী। আল-কুআনের সূরা বাকারা দুই হতে চার আয়াতে ঈমান সম্পর্কে এই বিষয় গুলি উল্লেখ করা হয়েছে।

ঈমানের রুকন হচ্ছে :

আল-কুরআনের সূরা-বাকারার দুই হতে চার নং আয়াতে ঈমান সম্পর্কে এই বিষয় গুলি উল্লেখ করা হয়েছে।

এক. একক ইলাহ হিসেবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা।
দুই. আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস করা।
তিন. সমস্ত আসমানী কিতাব সমূহতে বিশ্বাস।
চার. সকল নবী ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস।
পাঁচ. আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস।
ছয়.তাক্বদীর বা ভালো মন্দের ওপর আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করা।
সাত. মৃত্যুর পর পুনঃজীবিত হওয়ার প্রতি বিশ্বাস।

আর এগুলোর ভিত্তিতে কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয় যে ঈমানের রুকন হলো ছয়টি। আল্লাহ তায়ালা বলেন,  لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَঅর্থ: পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোই সৎকর্ম নয়, কিন্তু সৎকর্ম হলো যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতসমূহ ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনবে। [সূরা আল বাকারা: ১৭৭]

আলোচ্য আয়াতে ঈমানের রুকন পাঁচটি পাওয়া যায়।
১. আল্লাহর প্রতি ঈমান
২. আখেরাতের প্রতি ঈমান
৩. ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান
৪. কিতাবের প্রতি ঈমান
৫. এবং নবীগণের প্রতি ঈমান।

উল্লেখিত পাঁচটি বিষয়ের মাঝে রয়েছে ঈমানের গোপন ও প্রকাশ্য কক্ষপত । আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ. অর্থ: রাসূল তার প্রভুর পক্ষ থেকে যা তার কাছে নাযিল করা হয়েছে তার উপর ঈমান এনেছেন এবং মুমিনগণও। প্রত্যেকেই ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তার ফেরেশতাগণ, তার কিতাবসমূহ এবং তার রাসূলগণের উপর। [ সূরা আল বাকারা : ২৮৫]

আলোচ্য আয়াতে ঈমানের রুকনচারটি উল্লেখ করা হয়েছে।
আর সেগুলো হলো-
১. আল্লাহর উপর,
২.তার ফেরেশতাগণ,
৩.তার কিতাবসমূহ
৪. এবং তার রাসূলগণের উপর
কিন্তু এখানে আখেরাতের বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। যা পূর্বের আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আল কুরআনে উসূলুল ঈমানের বর্ণনা:

কুরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে এবং রাসূল (স:) এর সহীহ হাদিস থেকে স্পষ্ট হয় যে, ঈমানের রুকন হলো ছয়টি। আর সেগুলো হলো ঈমানের ও দ্বীনের মূল ভিত্তি। ঈমান হলো পরিপূর্ণ দ্বীন, ইসলাম, পথ নির্দেশনা, সৎকাজ, তাকওয়া এবং আল্লাহ তায়ালা রাসূলে কারীম (স:) কে যে সকল উপকারী জ্ঞান ও সৎকাজের সমন্বয়ে প্রেরণ করেছেন এর সবগুলোকেই ঈমান বলে।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ وَمَنْ يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلالًا بَعِيدًا – অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা ঈমান আন আল্লাহ্‌র প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি, এবং সে কিতাবের প্রতি যা আল্লাহ তার রাসূলের উপর নাযিল করেছেন। আর সে গ্রন্থের প্রতিও যা তার পূর্বে তিনি নাযিল করেছেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ, তার ফিরিশতাগণ, তার কিতাবসমূহ, তার রাসূলগণ ও শেষ দিবসের প্রতি কুফর করে সে সুদূর বিভ্রান্তিতে পতিত হলো। [সূরা নিসা: ১৩৬]

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করেন যে, যারা উল্লেখিত বিষয়গুলোকে অস্বীকার করবে তারা কুফরীতে নিমজ্জিত হবে এবং হেদায়াত থেকে সুদূর বিভ্রান্তিতে পতিত হবে। এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন আয়াতে শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এর কারণ হলো আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার মাঝেই অন্য আয়াতে উল্লেখিত সকল বিষয়ের প্রতি ঈমান আনয়ণ হয়ে যায়।

আবার কিছু আয়াতে শুধু আল্লাহর প্রতি ও আখেরাতের প্রতি ঈমান আনার বিষয়টিই উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ হলো আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার মাধ্যমে ফেরেশতা, রাসূলগণ ও কিতাবসমূহের প্রতি এবং আখেরোতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ের প্রতি ঈমান আনয়ণ করা হয়ে যায়।

ঈমান – ইসলামের মধ্যে পার্থক্য :

ঈমান ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্য হাদিসে জিবরাঈলের মাধ্যমেই স্পষ্ট হয়। كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بَارِزًا يَوْمًا لِلنَّاسِ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ مَا الإِيمَانُ قَالَ ‏”‏ الإِيمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَبِلِقَائِهِ وَرُسُلِهِ، وَتُؤْمِنَ بِالْبَعْثِ ‏”‌‏.‏ قَالَ مَا الإِسْلاَمُ قَالَ ‏”‏ الإِسْلاَمُ أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكَ بِهِ، وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ، وَتُؤَدِّيَ الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ ‏”‌‏.‏ قَالَ مَا الإِحْسَانُ قَالَ ‏”‏ أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ ‏”‌‏.‏ قَالَ مَتَى السَّاعَةُ قَالَ ‏”‏ مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ، وَسَأُخْبِرُكَ عَنْ أَشْرَاطِهَا إِذَا وَلَدَتِ الأَمَةُ رَبَّهَا، وَإِذَا تَطَاوَلَ رُعَاةُ الإِبِلِ الْبُهْمُ فِي الْبُنْيَانِ، فِي خَمْسٍ لاَ يَعْلَمُهُنَّ إِلاَّ اللَّهُ ‏”‌‏.‏ ثُمَّ تَلاَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏(‏إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ‏)‏ الآيَةَ‏.‏ ثُمَّ أَدْبَرَ فَقَالَ ‏”‏ رُدُّوهُ ‏”‌‏.‏ فَلَمْ يَرَوْا شَيْئًا‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ هَذَا جِبْرِيلُ جَاءَ يُعَلِّمُ النَّاسَ دِينَهُمْ ‏”‌‏.‏ قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ جَعَلَ ذَلِكَ كُلَّهُ مِنَ الإِيمَانِ‏

একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনসমুক্ষে বসা ছিলেন, এমন সময় তাঁর কাছে এক ব্যাক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন –

ঈমান কি

‘ঈমান কি?’ তিনি বললেনঃ ‘ঈমান হল, আপনি বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, (কিয়ামতের দিন) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। আপনি আরো বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি।

ইসলাম কি

তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইসলাম কি?’ তিনি বললেনঃ ‘ইসলাম হল, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তাঁর সঙ্গে শরীক করবেন না, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবেন, ফরয যাকাত আদায় করবেন এবং রমযানের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবেন।

ইহসান কি

ঐ ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইহসান কি?’ তিনি বললেনঃ ‘আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (বিশ্বাস রাখবেন যে,) তিনি আপনাকে দেখছেন।

কিয়ামত কবে

ঐ ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কিয়ামত কবে?’ তিনি বললেনঃ ‘এ ব্যাপারে যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশি জানেন না। তবে আমি আপনাকে কিয়ামতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছিঃ বাঁদী যখন তার প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। (কিয়ামতের বিষয়) সেই পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভূক্ত, যা আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জাননা।

এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেনঃ (إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ‏) “কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহই নিকট।” (৩১ : ৩৪) এরপর ঐ ব্যাক্তি চলে গেলে তিনি বললেনঃ ‘তোমরা তাকে ফিরিয়ে আন।’ তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন, ‘ইনি জিবরীল আলাইহিস সালাম। লোকদের দ্বীন শেখাতে এসেছিলেন। আবূ আব্দুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব বিষয়কে ঈমানের অন্তর্ভুক্ত করেছেন৷ [ সহীহ বুখারী, ইফা: ৩৭ ]

আলোচ্য হাদিসে রাসূল (সা.) কে জীবরাঈল (আ:) এর প্রশ্নের মাধ্যমে ঈমান, ইসলাম ও ইহসান সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়। হাদীসে সর্বপ্রথম ঈমান তারপর ইসলাম ও তারপর ইহসান সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঈমান মানুষের অভ্যন্তরীন তথা অদৃশ্য বিষয়ের সংশোধন করে, কেননা অপ্রকাশিত গোপন বিশ্বাসই হলো মূল বিশ্বাস। আর প্রকাশ্য কাজগুলো অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাসের অনুসরণ করে। সুতরাং প্রকাশ্য আমলের নামই হলো ইসলাম। কেননা এটি আল্লাহ তায়ালার প্রতি আনুগত্য ও বশ্যতার বহি:প্রকাশ।

ঈমান ও ইসলামের তুলনামূলক আলোচনা

ইসলাম :

ইসলাম হলো আল্লাহর নিকট আত্মসমার্পণ ও তাঁর আদেশের আনুগত্য করা। এই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রকাশ্য আমলগুলোকে ইসলাম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ এতে রয়েছে আল্লাহর প্রতি নতি স্বীকার, তার আদেশের আনুগত্য এরং তাঁর বেঁধে দেওয়া সীমারেখার উপর অটল অনঢ় থাকা।

যেমন বলা হয়ে থাকে, (يقال أسلم فلان لفلان أي ذل له وانقاد ) অমুক ব্যক্তি অমুকের নিকট আত্মসমার্পণ করেছে অর্থাৎ বশ্যতা স্বীকার করেছে বা আনুগত্য করেছে। আর (أسلمت لله)  আমি আল্লাহর নিকট আত্মসমার্পণ করেছি, এর অর্থ হলো- আমি বিনয়ের সাথে আল্লাহর নিকট আত্মসমার্পণ করছি ও তাঁর আদেশের আনুগত্য স্বীকার করছি। সুতরাং ইসলাম হলো বাহ্যিক কাজকর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আত্মসমার্পন করা।

ঈমান

ঈমান হলো অদৃশ্য তথা গায়েবী বিষয়ের সত্যায়ণ, বিশুদ্ধ শরীয়তের মাধ্যমে যা এসেছে তার স্বীকৃতি প্রদান। আর এই কারণেই যখন ইসলাম ও ঈমান উভয় বিষয় একই হাদিসে একত্রিত হয়েছে তখন রাসূল (স.) স্পষ্ট করলেন যে, প্রকাশ্য আমলগুলোই হলো ইসলাম। আর সে গুলো হলো: শাহাদাতাইন তথা এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (স.) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, সালাত আদায় করা , যাকাত প্রদান করা, রমাদানে রোজা রাখা এবং হ্জ্জ পালন করা।

আর ঈমান হলো গোপন তথা অদৃশ্য বা গায়েবী বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস। যেমন: আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস, সকল আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস, সকল নবী ও রাসূলগনের প্রতি বিশ্বাস, আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস…

আর এই ঈমানের এই অধ্যায়েরই অন্য একটি সহীহ হাদীসে এসেছে এক ব্যক্তি রাসূল (স.) কে প্রশ্ন করেন- أَىُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ ‏ “‏ تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ – অর্থ ইসলামের কোন কাজটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাবার খাওয়াবে ও পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দিবে। [ বুখারী, ইফা: ১১] অন্য হাদীসে এসেছে এক ব্যক্তি রাসূল (স.) কে প্রশ্ন করেন – أي الإسلام أفضل، قال: “من سلم المسلمون من لسانه ويده” অর্থ: ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন্ ইসলাম উত্তম? তিনি বললেনঃ যার রসনা ও হাত হতে অন্য মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে। [ বুখারী: হা / ১১]

ইসলাম বাহ্যিক কাজকর্মের সাথে নির্দিষ্ট। যার মাধ্যমে আল্লাহর আল্লাহর নির্দেশের প্রতি নতি স্বীকার ও তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ পায়। আর ঈমান আভ্যন্তরিন বিষয়ের সাথে নির্দিষ্ট। যেগুলো অন্তরের স্বীকৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট।

 পর্যালোচনা

যেমন রাসূল (স.) প্রশ্ন করা হলো ঈমান কি? তিনি বললেন – أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكِتَابِهِ وَلِقَائِهِ وَرُسُلِهِ وَتُؤْمِنَ بِالْبَعْثِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ كُلِّهِ ‏ – অর্থাৎ তুমি আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি, উত্থানের বিষয়ে এবং পুরোপুরি তাকদীরে ঈমান রাখবে। [ সহীহ মুসলিম, ইফা: ০৭ ]

পরিশেষে বলা যায় ঈমানের রুকন হলো ছয়টি। এর প্রত্যেকটিই দ্বীনের তথা ইসলামের মূল ভিত্তি। কেননা এ ছয়টি স্তম্বের কোন একটি অপূর্ণ থাকলে ঈমান পূর্ণ হবে না। সুতরাং যার ইসলাম পূর্ণ হয়নি তার ঈমানও পূর্ণ হয়নি। আবার যার ঈমান পূর্ণ হয়নি তার ইসলামও পূর্ণ হয়নি।

এই কারণে আল্লাহ তায়ালা বলেন , قُلْ لَمْ تُؤْمِنُوا وَلَكِنْ قُولُوا أَسْلَمْنَا- অর্থ: বলুন, তোমরা ঈমান আননি, বরং তোমরা বল, আমরা আত্মসমৰ্পণ করেছি, কারণ ঈমান এখনো তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। [সূরা হুজুরাত: ১৪]

লেখক , শায়েখ প্রফেসর ড. শাফী উদ্দিন আল মাদানী
সাবেক ডীন, ইসলামিক স্টাডিজ ,
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

Verified by MonsterInsights