সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

রমজান জিজ্ঞাসা – চতুর্থ পর্ব

প্রশ্ন-্উত্তর

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ! সম্মানিত রোজাদার ভাই- বোনেরা। আশা করছি সুস্থতার সাথে ঈমান ও ইহতেসাবের সাথে পবিত্র রমজান মাস অতিবাহিত করছেন। আপনার সিয়াম সাধনাকে আরো সুন্দর ও পরিপূর্ণ করতে আমরা আপনার মনে জাগ্রত হওয়া রমজান নিয়ে নানা প্রশ্নের সমাধান নিয়ে আপনার নিকট হাজির হয়েছি।  কুরআন হাদিসের দলিল সংবলিত“ রমজান জিজ্ঞাসা” নামক প্রশ্ন উত্তর নিয়ে। আসা করছি আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা আপনার সিয়াম সাধনাকে আরো সৌন্দর্য মন্ডিত করে তুলবে।

রমজান জিজ্ঞাসা – চতুর্থ পর্ব

৩১. অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রমজানের হুকুম কি?

উত্তর: অসুস্থ ব্যক্তির জন্য তিনটি হুকুম:

প্রথমত: যদি অসুস্থতা এমন হয় যে,এ অবস্থায় রোজা রাখলে  তেমন কোন কষ্ট না হয় তা হলে তার রোজা রাখা ওয়াজিব। রোজা ভাঙ্গলে কাফ্ফারা দিতে হবে।

দ্বিতীয়ত: ‍যদি অসুস্থতায় প্রচুর কষ্ট হয় তবে রোজা ভেঙ্গে ফেলবে এবং পরবর্তীতে কাযা করে নিবে।

তৃতীয়ত: যদি অসুস্থ অবস্থায় রোজা রাখলে জীবন বিপন্ন হওয়ার আশংকা থাকে তবে তার রোজা ভেঙ্গে ফেলতে হবে ও পরে কাযা করে নিবে এবং এ অবস্থায় রোজা রাখা হারাম।

৩২. প্রশ্ন: আযানরত অবস্থায় সাহরী খাওয়ার বিধান কি?

উত্তর: মুয়াজ্জিন ‍যদি যথা সময়ে আযান দেয় আর এই অবস্থায় সাহরী গ্রহণকারী ব্যক্তির হাতে খাবারের লোকমা থাকে তবে তা খেয়ে নিবে। তাতে কোন সমস্যা নেই। নতুন করে খাবার শুরু করবে না । তবে একজন রোজাদারের এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা উচিৎ। ( ফতোয়া ইমাম ইবনে বায)

৩৩. রোজা রাখা অবস্থায় কি মেসওয়াক করা জায়েয?

উত্তর: হ্যাঁ, রোজা রাখা অবস্থায় মেসওয়াক করা জায়েজ। কেননা রোজার সময় ও রোজার আগে ও পরে মেসওয়াক করা সুন্নাত। রাসূল স: বলেন:

 السواك مطهرة للفم مرضاة للرب،

অর্থাৎ: মেসওয়াক হলো মুখের পবিত্রতা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ। (নাসায়ী)

অন্য হাদিসে রাসুল স: বলেন:

لَوْلا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي أَوْ عَلَى النَّاسِ لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاةٍ

যদি আমি আমার উম্মতের উপর কষ্টের আশঙ্কা না করতাম, তাহলে আমি তাদের প্রত্যেক সালাতের সময় মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম। অন্য হাদিসে আছে: عند كل صلاة আর عند كل صلاة শব্দটি আম। যা রমজান ও রমজানের বাহিরের সময়কেও শামিল করে। তাছাড়া রোজার ক্ষেত্রে মুখের অংশ শরীরের বাহিরের অংশ হিসেবেই গন্য।

৩৪প্রশ্ন: রোজা রাখা অবস্থায় পেস্ট ব্যবহার করে ব্রাশ করা যাবে কি না?

উত্তর : যদি পেস্টের কোন অংশ পেটে যাওয়ার আশংকা না থাকে ও অতিমাত্রায় ঝাঁজালো না হয় তবে তা দিয়ে ব্রাশ করা জায়েয। কারণ কাঁচা মেসওয়াকের মধ্যে এক ধরণের রস আছে যা ঔষধের ভূমিকা পালন করে এবং মুখের মধ্যে লালার সৃষ্টি করে।

৩৫. শুক্রবারে নফল রোজা রাখার হুকুম কি?

উত্তর : শুক্রবারে নফল রোজা রাখা জায়েজ নেই। কেননা রাসূল স: ইরশাদ করেন:

لا تخصوا يوم الجمعة إلا بصوم يوم قبله ويوم بعده

তোমরা জুমার দিনকে রোজার জন্য নির্দিষ্ট করো না। বরং তার আগে ও পরে সিয়াম পালন করো। (মুসলিম)।

৩৬.রোজার কাজা কিভাবে করতে হয়?

উত্তর : রমজান মাস ব্যতীত এবং আরেকটি রমজান মাস আসার আগে যে কোন দিন একটি রোজার বদলে বদলে একটি রোজা রাখাই হলো কাযা রোজা।

৩৭. রোজার কাফফারা কি ভাবে আদায় করতে হয়?

উত্তর: ৬০ জন গোলাম (দাস) আজাদ করতে হবে। নতুবা এক-নাগারে ৬০ টা রোজা পালন করতে হবে। নতুবা
৬০ জন মিসকিনকে এক-বেলা খাওয়াতে হবে।

৩৮. সিয়াম পালনরত অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন স্পর্স করা যাবে কি ?

উত্তর: হ্যাঁ, সিয়াম পালনরত অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন ও স্পর্শ করা যাবে?

  أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ يُقَبِّلُ وَهُوَ صَائِمٌ

রাসূল স: তার স্ত্রীদের রোজা রাখা অবস্থায় স্ত্রীদের চুম্বন করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)। তবে এক্ষেত্রে যুবকদের তাদের স্ত্রীদের থেকে দুরে থাকাই শ্রেয়। কেননা আল্লাহর রাসূল স: বৃদ্ধদের অনুমতি দেন ও যুবকদের নিষেধ করেন। ( আবু দাউদ)

৩৯. প্রচন্ড গরম থেকে বাঁচার জন্য মাথায় বা মুখে পানি ছিটানো, কুলি করা কি জায়েজ?

উত্তর: হ্যাঁ, জায়েয। কেননা রাসূল স: প্রচন্ড গরম থেকে বাঁচার জন্য তাঁর মাথায় পানি ঢেলেছেন। হাদিসে এসেছে:

يَصُبُّ الْمَاءَ عَلَى رَأْسِهِ مِنَ الْحَرِّ وَهُوَ صَائِمٌ”

সিয়াম পালনরত অবস্থায় রাসূল স: তাঁর মাথায় পানি ঢেলেছেন। ( মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ)

৪০.  গীবত, পরনিন্দা, কুটনামী, চোগলখোরী ইত্যাদির মাধ্যমে কি রোজা নষ্ট হয়ে যায়?

উত্তর: না, উপরোক্ত অপরাধের কারণে রোজা ভঙ্গ হবেনা। তবে গীবত, পরনিন্দা, কুটনামী, চোগলখোরী ইত্যাদির কারণে রোজার উপর আঘাত হয় এবং রোজা হালকা হয়ে যায়। রাসূল স: ইরশাদ করেন:

من لم يدع قول الزور والعمل به والجهل، فليس لله حاجة في أن يدع طعامه وشرابه

অর্থাৎ: কেউ যদি মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ না ছাড়ে (অথচ সে রোজা রাখে) তাহলে তার খাওয়া ও পানাহার ত্যাগ করা আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারী)

লেখক, হাফেজ, মাও: নুরুল হুদা

কুরআনিক সায়েন্স এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম

খতিব, বায়তুল গফুর জামে মসজিদ, মাদামবিবির হাট, চট্টগ্রাম।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

Verified by MonsterInsights