সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব

মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী

ইসলামে যাকাতের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। ধনীদের জন্য বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে যাকাত প্রদান করা ফরযে আইন। যাকাত প্রদানে বিরত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ইসলামি সরকারের জিহাদ পরিচালনা করে যাকাত প্রদানে বাধ্য করা ওয়াজিব। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের ১৯টি সূরার ৩২টি স্থানে সরাসরি যাকাত শব্দ উল্লেখ করেছেন এবং আরো বহুস্থানে পরোক্ষভাবে যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামে যাকাত এতই গুরুত্ব রাখে যে, তা পরিত্যাগকারীর বিরুদ্ধে কুরআন ও হাদিসে আখিরাতের ভয়াবহ শাস্তির বাণী উল্লিখিত হয়েছে। যেমন-

যারা স্বর্ণ রৌপ্য জমা করে এবং তা আল্লাহর পথে খরচ করে না, হে নবী! তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন। সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তদ্বারা তাদের কপাল, পার্শ্বদেশ এবং পিঠকে সেক দেওয়া হবে। (এবং বলা হবে) এটা তার প্রতিফল যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করেছিলে। সুতরাং তোমাদের ধনভাণ্ডারের শাস্তি আস্বাদন কর।’ [সূরা আত-তাওবা ৯ ঃ ৩৪]

হাদিসে এসেছে, রাসূল বলেন, হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেন, যাকে আল্লাহতা’আলা সম্পদ দিয়েছেন কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করে না, উক্ত মালকে কিয়ামতের দিন তার জন্য বিষধর সাপে পরিণত করা হবে। যার চোখের ওপর কালো দাগ পড়ে গেছে। অতঃপর তা স্বীয় চোয়ালদ্বয় দ্বারা তাকে কামড় মারবে এবং বলবে আমি তোমার ধনভাণ্ডার, আমি তোমার মাল’। আস-সহীহ আল-বুখারী, ২/১০৬, হাদিস; ১৪০৩ ও ৬/৩৯, হাদিস; ৪৫৬৫। এহেন গুরুত্বের কারণে যাকাতকে ইসলামে পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ স্থির করা হয়েছে। যেমন- হাদিস শরিফে আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেন, ইসলাম ৫টি বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যথা – এ সাক্ষ্য দেওয়া যে ১. আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল, ২. সালাত কায়েম করা, ৩. যাকাত প্রদান করা, ৪. রামাযানে রোযা রাখা এবং ৫. হজ করা। ’ [আস-সহীহ আল-বুখারী, ১/১১, হাদিস:৮]

১. যাকাত ফরয ইবাদত: ইসলামের অন্যান্য ফরয হুকুমের ন্যায় যাকাতও একটি ফরয হুকুম। যাকাত ফরয হওয়া সম্পর্কে আল্লাহর বাণী:

তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা করো যাকাত প্রদান করো রুকুকারীগণের সাথে রুকু করো। [সূরা আল-বাকারা ২:৪৩]

২. ইসলামের রুকন: ইসলামের পাঁচটি রুকনের অন্যতম রুকন হলো যাকাত।

৩. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন: কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই ঈমানি জীবনে একান্ত কামনা। সঠিকভাবে যাকাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আল্লাহর বাণী:

তারা বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না’। [সূরা আল-ইনসান ৭৬ ঃ ৯]

৩. আর্থিক ইবাদত: যাকাত হলো ইসলামের আর্থিক ইবাদত। কারণ অর্থ সম্পদের নির্দিষ্ট একটা অংশ আল্লাহর রাস্তায় নিঃশর্তভাবে দান করার নামই যাকাত।

৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়: যাকাত জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের অন্যতম উপায়। কেননা যাকাত প্রদান না করলে পরকালে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

৫. তাকওয়ার গুণ অর্জন: যাকাত আদায়ের মাধ্যমে তাকওয়ার গুণ অর্জিত হয়। কেননা মুসলমানগণ একমাত্র আল্লাহর ভয় এবং নির্দেশের প্রতি সম্মান দেখিয়েই নিজের কষ্টার্জিত সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ আল্লাহর রাস্তায় দান করে। আর আল্লাহকে ভয় করে কোনো কাজ করার নামই তাকওয়া।

৬. আত্মিক শান্তি লাভ: ভোগে সুখ নেই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। আল্লাহর হুকুম ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আর্থিক ত্যাগের মধ্যেই রয়েছে আত্মিক প্রশান্তি।

৭. সফলতার চাবিকাঠি: যাকাত আদায়ের মাধ্যমে ব্যক্তি ইহকাল ও পরকালে সফলতা লাভ করতে পারে। মহান আল্লাহর বাণী:

মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাযে বিনয় নম্ন; যারা অনর্থক কথাবার্তায় নির্লিপ্ত, যারা যাকাত দান করে থাকে এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। [সূরা আল-মুমিনুন ২৩:১-৪]

৮. ঈমানী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ: মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে বিভিন্ন পরীক্ষায় নিপতিত করেন। যাকাত প্রথা সম্পদশালীদের জন্য একটি ঈমানী পরীক্ষা। সঠিকভাবে যাকাত আদায়ের মাধ্যমে মুসলমান ব্যক্তি ঈমানী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে।

৯. যাকাত সম্পদ ও ব্যক্তিকে পবিত্র করে: যাকাত আদায়ের মাধ্যমে দাতা ব্যক্তির চরিত্র যেমন পবিত্র হয়, তেমনি সম্পদও পবিত্র হয় এবং বৃদ্ধি পায়। আল্লাহর বাণী:

তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহণ কর, যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে। [সূরা আত-তাওবা ৯:১০৩]

১০. আল্লাহর নিয়ামতের শুকর: ধন সম্পদ আল্লাহর এক বড় নিয়ামত। আর নিয়ামতের শুকর করাই ঈমানদারদের একান্ত কর্তব্য। যাকাত আদায়ের মাধ্যমে নিয়ামতের শুকর আদায় হয়।

তথ্য সূত্র: logo

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.