সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান

যাকাত আদায়ের উত্তম সময় কোনটি

রোজা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। জাকাত বিত্তশালীদের সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে। জাকাত দেয়ার ফলে জাকাত দাতার সম্পদের পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জাকাত আদায় করতে হয়। রমজান মাস আল্লাহর মাস। রমজান মাসে যেকোনো ফরজ, ওয়াজিব সুন্নত ও নফল কাজ আদায় করলে আল্লাহ এর সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করে বান্দাকে নিজ হাতে প্রতিদান প্রদান করবেন। জাকাত বছরের যেকোনো সময় দেয়া যায়। তবে রমজান মাসে জাকাত আদায় করতে পারলে বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।

ইরশাদ হয়েছে- ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তোমরা যে জাকাত দাও, প্রকৃতপক্ষে সেই জাকাত তোমাদের সম্পদ বৃদ্ধি করে’। (সূরা রোম :৩৯)। রমজান যেমন জাহান্নামের ঢালস্বরূপ তেমনি জাকাত সম্পদের বালা মুসিবতের ঢালস্বরূপ। জাকাত প্রদানের মধ্যে দিয়ে এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের হক আদায় হয়। জাকাত ধনী-গরিবের মধ্যে সম্পদের বৈষম্য দূর করে। জাকাত সমাজের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে শক্তিশালী করে। ইরশাদ হয়েছে- ‘আল্লাহ পাক জনপদের মানুষদের কাছ থেকে নিয়ে তাঁর রাসূলকে দিয়েছেন, তা হচ্ছে আল্লাহর জন্যে, রাসূলের জন্যে, আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন ও পথচারীদের জন্যে, সম্পদ যেন বিত্তশালী লোকদের মধ্যে আবর্তিত না হয়।’ (সূরা হাশর: ৯)।

দান করা বাধ্যতামূলক নয় কিন্তু জাকাত আদায় করা বাধ্যতামূলক। ইরশাদ হয়েছে- ‘ আর তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং জাকাত প্রদান কর’। (সূরা বাকারা: ১১০)। সম্পদ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নেয়ামতস্বরূপ। আল্লাহ যাদের সম্পদ দান করেছেন তাদের সম্পদের মধ্যে গরিব-দুখী মানুষের হক রয়েছে। জাকাত কোনো করুণার বিষয় নয়, ইহা দুখী-দুস্থ মানুষের অধিকার। ইরশাদ হয়েছে- ‘তাদের ধন-মালে ভিক্ষুক, প্রার্র্থী ও বঞ্চিতদের সুস্পষ্ট ও সুপরিজ্ঞাত অধিকার রয়েছে’। (সূরা যারিয়াত: ১৯)।

জাকাত কোনো করুণার বিষয়বস্তু নয়। জাকাত আদায় না করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হয় এবং সম্পদের পরিমাণ কমে যায়। ইরশাদ হয়েছে- ‘সেসব মুশরিকদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য, যারা জাকাত দেয় না’। (সূরা হামিম আস সাজাদা:৭-৮)। বুখারি শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যারা আল্লাহর দেয়া ধন-মালে কার্পণ্য করে, তারা যেন মনে না করে যে, তাদের জন্য তা মঙ্গলময় বরং তা তাদের জন্য খুবই খারাপ। তারা যে মাল নিয়ে কার্পণ্য করেছে, তাই কিয়ামতের দিন তাদের গলার বেড়ি দেয়া হবে’। নামাজ ও জাকাত একটি অপরটির পরিপূরক। হজরত আবু বকর রা: তার খেলাফতের সময়কালে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি অবশ্যই সেসব লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব, যারা নামাজ ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে। আল্লাহর কসম, তারা যদি একট উটের রশিও দিতে অস্বীকার করে, যা রাসূল সা:-এর জমানায় তারা দিত।

জাকাত আদায়ের পদ্ধতি নিয়ে সমাজে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। অভাবগ্রস্ত কিংবা দরিদ্র লোকের মধ্যে এক’দুটি লুঙ্গি শাড়ি অথবা দু’তিন কেজি চাল গম দিলে জাকাত আদায় হয় না। জাকাত আদায়ের সুনির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যে সব লোকের নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, কেবল তাদের জাকাত আদায় করতে হবে। নিসাব হলো- শরিয়তের নির্ধারিত সম্পদের নি¤œতম সীমা বা পরিমাণ। সাধারণত, ৫২.৫ তোলা রূপা বা ৭.৫ তোলা সোনার সমমূল্যের সম্পদকে নিসাব বলে। ওই পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত আদায় করতে হবে। যে ব্যক্তির ঋণ বা দেনার পরিমাণ নিসাব পরিমাণ সম্পদের চাইতে বেশি, তার ওপর জাকাত ফরজ নয়।

লেখক : ফিরোজ আহমাদ

প্রবন্ধকার

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.

Verified by MonsterInsights